Advertisment

মমতার প্রতিধ্বনি করেও শেষে তৃণমূল-বিজেপিকে এক জায়গায় রাখলেন ইয়েচুরি

রাজ্য় কমিটির বৈঠকের পর দলের তরফ থেকে প্রকাশিত প্রেস বিবৃতিতে অবশ্য একেবারে নতুন কিছু পাওয়া যায়নি। গুরুতর বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে যা যা বলা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে নিজেদের প্রচার ও জনসংযোগের ঘাটতির কথা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
CPIM

ফাইল ছবি

লোকসভা ভোটে চরম হারের পর্যালোচনা করতে শুরু করেছে সিপিএম নেতৃত্ব। পর্যালোচনা শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে। তারই অঙ্গ হিসেবে মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হল। আগামী ৭ জুন থেকে দিল্লিতে বৈঠকে বসবে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি। মঙ্গলবারের বৈঠকের আগে সিপিএমের রাজ্য় দফতরে সাংবাদিক সম্মেলনে সংবিধান ও প্রজাতন্ত্র বাঁচানোর লড়াইয়ে সমমনস্কদের একজোট করার কথা বললেন দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।
এবারের ভোটে রাজ্য সিপিএমের হারের পর, এবং রাম-বাম জোট নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে সিপিএমের ঘোষিত অবস্থান নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই। এ অবস্থায় ঠিক কী করবে সিপিএম সে নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীরাও বেশ কিছুটা ধন্ধেই!

Advertisment

সীতারাম ইয়েচুরি এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে দেশের মানুষের সামনে চারটি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন,

সংবিধান চ্যালেঞ্জের মুখে

সংবিধানের আওতায় থাকা সমস্ত প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে

নিরাপত্তার নামে মানুষের গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকার খর্ব করা শুরু হয়েছে

তথ্য গোপন করা হচ্ছে

এই চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলায় কী পদক্ষেপ করা হবে তা স্থির করবে কেন্দ্রীয় কমিটি, তবে অভিমুখ স্পষ্ট যে সিপিএম অন্য বাম শক্তিগুলিকে নিয়ে তো সংহত হবেই, একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যারা দেশের সংবিধান রক্ষা করতে আগ্রহী এবং এই চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করতে ইচ্ছুক, তাদের সঙ্গেও সংহতি গড়ে তুলতে চায় সিপিএম। এ ব্যাপারে বৃহত্তর মোর্চা গঠনের কথাও বলেন তিনি।

এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে ইয়েচুরি বলেন, এ রাজ্যে ২০০৯ সাল থেকে বিজেপির ভোট ক্রমশ বাড়তে থাকছিল। তা একবারই মাত্র আটকে গিয়েছিল, ২০১৬ সালে, যেবারের ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের নির্বাচনী বোঝাপড়া হয়েছিল। ইয়েচুরি বলেন, এবারে কংগ্রেস যে দুটি আসনে জিতেছে, সেখানে বামফ্রন্ট কোনও প্রার্থী দেয়নি। এবার বামফ্রন্টের সঙ্গে সর্বত্র সমঝোতা না হওয়ার ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়ে ইয়েচুরি বলেন, কেন সমঝোতা হল না, তার জবাব কংগ্রেসকেই দিতে হবে।

এ রাজ্যের ক্ষেত্রে অবশ্য তিনি শেষ পর্যন্ত তৃণমূল ও বিজেপির সঙ্গে সমদূরত্ব রাখার কথাই বলেছেন।

তবে রাজ্য় কমিটির বৈঠক শুরুর আগে সীতারাম ইয়েচুরির সাংবাদিক সম্মেলন কৌতূহলের উদ্রেক করেছে অন্য় একটি কারণে। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য় তথা রায়গঞ্জ থেকে এবারের ভোটের প্রার্থী হয়ে চার নম্বরে দৌড় শেষ করা মহম্মদ সেলিম গত ৩১ মে তাঁর টুইটার হ্যান্ডেল থেকে বিজেপিকে প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করার আহ্বান রেখেছেন।

ঘটনাক্রমে এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে যেসব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার কথা ইয়েচুরি বলেছেন, তা বিভিন্ন সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথার সঙ্গে মেলে।


এদিকে এদিন ইয়েচুরির সাংবাদিক সম্মেলনের ঘন্টা দুয়েক আগে রাজ্য সিপিএম ফেসবুকে এক বিবৃতি প্রকাশ করে। সেখানে লেখা হয়, নির্বাচনী ফলাফলে সিপিএম কর্মীরা "সাময়িকভাবে শ্বাস নেওয়ার ফুরসৎ পেয়েছেন"। এমনকি সে পোস্টে "পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেবল দু’একটা পার্টি অফিস খোলা"-র কথাও বলা হয়।

এই বিবৃতি থেকে স্পষ্ট যে তৃণমূল কংগ্রেসের বেশ কিছু আসনে পরাজয় এবং বিজেপির এ রাজ্যে ভাল ফলের সুযোগ নেওয়ার মানসিকতা শুরু হয়েছে সিপিএমের মধ্যেই। ফলে বিবৃতি দিয়ে বিজেপির সঙ্গে বৈরিতামূলক সম্পর্কের ব্যাপারে জোর দিতে হচ্ছে রাজ্য কমিটিকে।

এদিনের রাজ্য় কমিটির বৈঠকের পর দলের তরফ থেকে প্রকাশিত প্রেস বিবৃতিতে অবশ্য একেবারে নতুন কিছু পাওয়া যায়নি। গুরুতর বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে যা যা বলা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে নিজেদের প্রচার ও জনসংযোগের ঘাটতির কথা। "স্বাধীন ভারতের নির্বাচনী ইতিহাসে সবচেয়ে বিপর্যয়কর এই ফলাফল" নিয়ে প্রাথমিক পর্যালোচনার রিপোর্ট জমা দেন সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি জানান এই পর্যালোচনা চূড়ান্ত নয়। "সমর্থক ও সাধারণ মানুষের মতামত নিয়ে" পর্যালোচনা চূড়ান্ত হবে।

এবারের লোকসভা ভোটে এ রাজ্য থেকে একটি আসনও পায়নি সিপিএম। শুধু তাই নয়, একমাত্র যাদবপুর কেন্দ্র থেকে বিকাশ ভট্টাচার্য ছাড়া বাকি সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

tmc bjp Cpm west bengal politics
Advertisment