রাজ্যের সব ইস্যু ছাড়িয়ে এখন শীর্ষে কাটমানি। এই ইস্যু আপাতত বিজেপির হাতে রাজনৈতিক অস্ত্র তুলে দিয়েছে। তবে ভবিষ্যৎ বলবে, আদৌ কোনও ফায়দা পাবে কি তৃণমূল কংগ্রেস? সাম্প্রতিক তৃণমূল কংগ্রেসের নানা ঘোষণার পিছনে কি প্রশান্ত কিশোর? সেই প্রশ্ন ঘুরছে দলের অন্দরে। এ নিয়ে দলের অন্দরে ক্ষোভও বাড়ছে। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন কতটা উতরে দিতে পারবেন এই প্রশান্ত? তবে কাটমানি কাণ্ড যে মনে করিয়ে দিচ্ছে রেশনকাণ্ডকে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
প্রশান্ত কিশোর বিজেপি, কংগ্রেস ও জনতা দল ইউনাইটেডের হয়ে কাজ করে সাফল্য পেয়েছেন। এবার তৃণমূল কংগ্রেসকে ২০২১ বিধানসভায় উতরে দেওয়ার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়েছেন। নবান্নে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। বৈঠক করছেন তৃণমূল ভবনেও। কিন্তু তাঁর নির্বাচনী কৌশল নিয়ে দলের অভ্যন্তরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। কাটমানি কাণ্ড ছাড়া নানা ইস্যুতে অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের 'সহযোগিতা' পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছেন খোদ শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্ব।
কাটমানি ইস্যু প্রশান্ত কিশোরেরই মস্তিস্কপ্রসূত বলে মনে করছে দলের একাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘরছাড়া এক ব্লক তৃণমূল নেতার মন্তব্য, "প্রকাশ্যে দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কাটমানির কথা না বলতেই পারতেন। ভাগ কি অন্যরা নেয় নি? প্রশান্ত কিশোরের কথায় এভাবে শুদ্ধিকরণ করতে গিয়ে বাড়িতেই থাকতে পারছি না। নীচুতলার দলীয় নেতৃত্ব আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। কবে কার বাড়িতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ আছড়ে পড়ে এই আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে।"
দলের একাংশের অভিযোগ, বাড়িতে একাধিকবার হামলা চললেও দলীয় নেতৃত্ব কোনওরকম সাহায্য করছেন না। বারে বারে স্থানীয় নেতৃত্বকে জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না দল। তাই নীচুতলার একটা বড় অংশ ক্রমশ দলের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বকে তাঁরা 'ম্যানেজ' করার চেষ্টা করছেন। টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা পেতে মরিয়া দলের এই অংশের নেতৃত্ব। পুলিশকে গালমন্দ করতেও ছাড়ছেন না তাঁরা। এদিকে কাটমানি ইস্যুতে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ "সুদ সহ" আদায়ের কথা বলেছেন।
দলের ভাবমূর্তি ফেরাতে কাটমানির কথা প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হলেও তা বুমেরাং না হয়ে যায়। এমনটাও ভাবছে দলের একটা বড় অংশ। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, বিরোধী অবস্থানে থাকাকালীন তৃণমূলের যে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ছিল তা ফেরাতে চাইছে দল। কিন্তু রেশনকাণ্ডের মতন গ্রামের পর গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে কাটমানির বিক্ষোভ। এই পরিস্থিতিতে লাগাম না টানতে পারলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। তাতে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের দুশ্চিন্তা বাড়তে বাধ্য।
এদিকে তৃণমূলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোর ফেসবুকে আবেদন করেছেন, "প্রশান্ত কিশোরের তত্ত্বাবধানে যুব সমাজকে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার জন্য এটি প্রথম এবং অভিনব প্ল্যাটফর্ম। আজই ফর্ম পূরণ করুন। প্রশান্ত কিশোরের পথপ্রদর্শনে সক্রিয় রাজনীতিতে আসতে চান?" অন্য রাজ্যের ফর্মুলা এখানে কতটা বাস্তব রূপ পাবে, তা সময়ই বলে দেবে।