ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ত্রাণ দুর্নীতিকে হাতিয়ার করেই বিরোধী নিশানায় তৃণমূল। ত্রাণ বন্টনে রাজ্যের শাসক দলের নেতারাই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ বিজেপি, বাম ও কংগ্রেসের। অভিযোগ এলেই কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দলনেত্রীর আদেশ অনুসারে ত্রাণ নিয়ে গাফিলতি ও গরমিলের অভিযোগ পাওয়ামাত্রই শোকজ করা হল আসানসোল-দুর্গাপুরের তৃণমূল কংগ্রেসের চার নেতা-নেত্রীকে।
পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি জানিয়েছেন, শোকজ করা হয়েছে, আসানসোল পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র তবসুম আরা ও তিন কাউন্সিলর বেবি খাতুন, শঙ্কর চক্রবর্তী ও প্রভাব চট্টোপাধ্যায়কে। আসানসোলের মেয়র তথা তৃণমূল জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারির কথায়, 'দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশেই এই শোকজ করা হয়েছে। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে জবাবদিহি করতে বলা হয়েছে। এই চারজনের জবাব মেলার পর পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।'
তবে, শোকজ নোটিস পাওয়া চার তৃণমূল নেতাই তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা ত্রাণ দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জোড়া-ফুল শিবিরের এই পদক্ষেপকে 'লোক দেখানো' বলে কটাক্ষ করেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছেন, 'এই ধরনের দুর্নীতি একমাত্র তৃণমূলের পক্ষেই সম্ভব। ত্রাণ দুর্নীতি নিয়ে একটা পদক্ষেপ নজরে পড়ল। কিন্তু, এর আগে রেশন দুর্নীতি নিয়ে প্রচুর অভিযোগ থাকলেও খাদ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। তাই পুরোটাই আইওয়াশ। দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে কটা অভিযোগ পুলিশে দায়ের হয়েছে?'
দুর্নীতির অভিযোগে শনিবারই রাজ্যের প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী তথা বিষ্ণুপুরের বিধায়ক শ্যাম মুখোপাধ্যায়কে শোকজ করেছে তৃণমূল। একই অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে বাঁকুড়ার আরও দুই দলীয় নেতাকে। যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাঁকাড়া জেলার দলীয় নেতৃত্বের ভার্চুয়াল বৈঠকের পরই এই পদক্ষেপ করা হয়। এছাড়াও তালডাংরা ও পাত্রসায়র ব্লক সভাপতিদের কার্যকলাপও তৃণমূল নেতৃত্বের নজরদারিতে রয়েছে।
লকডাউনে রেশন দুর্নীতির পর আমফান পরবর্তী অধ্য়ায়ে ত্রাণ দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। একাধিক জেলায় শাসক দলের পঞ্চায়েত প্রধান বা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনের ছবি প্রকাশ্যে আসে। সরব হয় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। মমতা সরকারকে নিশানা করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। ত্রাণ বন্টনের ক্ষেত্রে রাজনীতি না করে স্বচ্ছতা বজায় রাখার পরামর্শ দেন তিনি। ত্রাণ দুর্নীতিতে জড়িত আমলাদের বিরুদ্ধেও কড়া শাস্তির দাবি তোলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীও জানিয়ে দেন, দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতি নেবে। দলকেও একই পদক্ষেপের নির্দেশ দেন তিনি। তারপরই তৃণমূলের তরফে দলীয় নেতাদের তড়িঘড়ি শোকজ পদক্ষেপ করা শুরু হয়।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন