লোকসভা ভোটের দামামা বাজতেই না বাজতেই পদ ছাড়লেন নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল। জাতীয় নির্বাচন কমিশনে মোট ৩ জন কমিশনার থাকেন। আগে থেকেই একটি পদ শূন্য ছিল। অরুণ গোয়েলের ইস্তফার পর কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনে থেকে গেলেন একমাত্র মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার।
নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েলের পদত্যাগ ঘিরে উঠেছে নানান জল্পনা। লোকসভা নির্বাচনের ঘোষণার মাত্র কয়েকদিন নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েলের পদত্যাগ নিয়ে বিরোধী দল রবিবার সরকারকে নিশানা করে। পাশাপাশি এ প্রশ্নও তোলা হয়েছে, 'বিজেপির টিকিটে নির্বাচনে লড়তে পদত্যাগ করেছেন তিনি?'
যদিও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা টিএমসি সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে "দিল্লি নেতাদের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করার জন্য" গোয়েলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন অরুণ গোয়েলের পদত্যাগের ৩টি সম্ভাব্য কারণ জানিয়েছে কংগ্রেস। নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল একজন অবসরপ্রাপ্ত IAS আধিকারিক। ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে তার পদত্যাগ ঘিরে শুরু হয়েছে নানান জল্পনা। যদিও কেন লোকসভা ভোটের আগে পদত্যাগ করলেন তিনি তার পিছনে কোন সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ রবিবার নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েলের পদত্যাগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে তার এই সিদ্ধান্তের পিছনে তিনটি কারণ থাকতে পারে। রমেশ বলেন, "আমরা বারবার নির্বাচন কমিশনের কাছে ইভিএম নিয়ে আমাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছি। কারণ ভোটে কারচুপির এটি একটি হাতিয়ার। তবে, আমাদের অনুরোধে কর্ণপাত করা হয়নি। কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাকে তার নিরপেক্ষতা মেনেই কাজ করতে হবে"।
আরও পড়ুন : <
কংগ্রেস নেতা সম্ভাব্য তিনটি কারণের উপর আলোকপাত করেন। প্রথমত, তাঁর এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে মতপার্থক্যর বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিগত কারণে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন। তৃতীয়ত, রমেশ বলেছেন, 'এই পদত্যাগ পিছনে থাকতে পারে রাজনৈতিক অভিসন্ধি'। সেই সঙ্গে রমেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, 'বিজেপির টিকিটে নির্বাচনে লড়তে পারেন তিনি। আগামী দিনই সবকিছুর উত্তর দেবে। পাশাপাশি খাড়গে নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে বিলম্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
সূত্রের খবর, নির্বাচন কমিশনার বাছাইয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন প্যানেলের বৈঠক ১৪ অথবা ১৫ মার্চ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গোয়েলের পদত্যাগের কারণে নির্বাচন ঘোষণার প্রস্তুতিতে কোনো প্রভাব পড়েনি বলে বলেও দাবি সূত্রের ।
ব্রিগেডের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দাবি করেছেন যে অরুণ গোয়েল বাংলায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন নিয়ে চাপের সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ লোকসভা নির্বাচন এবং বাহিনী মোতায়েনের ক্ষেত্রে দিল্লির নেতাদের এবং তার শীর্ষ কর্তাদের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করার জন্য আমি অরুণ গোয়েলকে স্যালুট জানাই। নির্বাচনের নামে তারা কী করতে চায় তা প্রমাণিত। তারা ভোট লুট করতে চায়,”।
গোয়েলের পদত্যাগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, "কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, আগামী দিনে তিনি কী করেন তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। “আমি হাইকোর্টের সেই বিচারপতির কথা ভাবছিলাম যিনি পদত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন…! এখন নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করেছেন, তিনি কী করেন তা দেখার জন্য কিছু সময় অপেক্ষা করুন,” ।
সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব প্রশ্ন তোলেন, নির্বাচন কমিশন চাপের মধ্যে কাজ করছে কি না। তিনি বলেন, “নির্বাচনের ঠিক আগে নির্বাচন কমিশনের উপর কী ধরণের চাপ আসছে তা দেখা উচিত। কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা”। সিপিএম বলেছে যে লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে গোয়েলের পদত্যাগ "অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি করবে"।