এক ঢিলে বহু পাখি মেরেছে বিজেপি, মনোহর লাল খট্টরের পদত্যাগ লোকসভা নির্বাচনের আগেই পদ্মশিবিরের নিখুঁত গেমপ্ল্যান? অন্তত এমনটাই মনে করছেন ওয়ালিবহলমহল।
সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগেই জেজেপির সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেছে বিজেপি। পদত্যাগ করেছেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর। জেজেপির সঙ্গে আসন্ন নির্বাচনে লড়ে বিজেপি খুব একটা সুবিধা পাবে মনে করেনি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই জাঠ পার্টির সঙ্গে জোট ভেঙেছে বিজেপি।
হরিয়ানায় ভেঙে গেল বিজেপি-জেজেপির জোট। মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়েছেন মনোহর লাল খট্টর। কেবল মাত্র মুখ্যমন্ত্রী পদেই নয় গোটা মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। হরিয়ানায় ১০ টি লোকসভা আসন রয়েছে। বর্তমানে ১০ টি আসনই বিজেপির দখলে। এই ১০টি আসনে ফের জয়ের 'কৌশল' নিচ্ছে বিজেপি।
হরিয়ানায় ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) যেভাবে উপমুখ্যমন্ত্রী দুষ্যন্ত চৌতালার জননায়ক জনতা পার্টির (জেজেপি) সঙ্গে জোট ভেঙে মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরের জায়গায় নায়েব সাইনিকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেছেন তাতে অবাক সকলেই। অনগ্রসর শ্রেণির প্রভাবশালী নেতা সাইনি কুরুক্ষেত্রের সাংসদ।
রাজনৈতিক মহলের মতে, জননায়ক জনতা পার্টির (জেজেপি) সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরার ফলে জাঠ ভোটব্যাঙ্কে যে ধাক্কা লাগতে পারে, সেটা আঁচ করে ড্যালেম কন্ট্রোলে ওবিসি নেতা সাইনিকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। ৯০ আসন বিশিষ্ট হরিয়ানা বিধানসভার ৪০টি আসন ছিল বিজেপির দখলে। সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনে আসন রফা নিয়ে জেজেপি-র সঙ্গে বিজেপির বিরোধের সূত্রপাত হয়। জেজেপি ১০টি আসনের মধ্যে ৩টি আসনের দাবি জানিয়েছে। যদিও বিজেপি একটির বেশি ছাড়তে নারাজ ছিল।
মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানের মত একই কায়দায় আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে গেম প্ল্যান তৈরি করেছে বিজেপি! দল যেভাবে লোকসভা নির্বাচনের জন্য শিবরাজ সিং চৌহানকে বেছে নিয়েছে একইভাবে খট্টরও আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলেই দলীয় সূত্রে ইঙ্গিত। লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হলে দল খট্টরকে মন্ত্রিসভায় একটি বড় দায়িত্ব দিতে পারে। মজার বিষয় হল, প্রধানমন্ত্রী মোদী সম্প্রতি হরিয়ানায় অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানে খট্টরের প্রশংসা করেছিলেন। তার পরই খট্টরের এই পদত্যাগ বাড়িয়েছে জল্পনা।
বিজেপি জেজেপি থেকে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে পদ্মশিবিরের সুচিন্তিত কৌশল। আসলে, জেজেপির সঙ্গে নির্বাচনে লড়ে বিজেপি খুব একটা সুবিধা পাবে বলে মনে করেনি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই জেজেপির সঙ্গে জোটের ইতি টেনেছে দল। ২০১৯ সালে, বিজেপি রাজ্যের ১০ টি লোকসভা আসন জিতেছিল। এমন পরিস্থিতিতে শরিক দলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে নারাজ পদ্ম শিবির।
২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, বিজেপির প্রতি ক্ষুব্ধ জাঠ ভোটাররা কংগ্রেস এবং জেজেপিকে ভোট দিয়েছে। যখন পাঞ্জাবি এবং ওবিসি ভোটাররা ক্ষমতাসীন বিজেপির পক্ষে ছিল। মাত্র দুদিন আগে বিজেপির জাঠ সাংসদ ব্রিজেন্দ্র সিং দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন : < Sayantika Banerjee: ‘হঠাৎ করে ছাদে ওঠা যায় না’, ‘অভিমানী’ সায়ন্তিকাকে এবার খোঁচা তৃণমূল প্রার্থীর >
বিজেপির এই পদক্ষেপের ফলে, জেজেপি সমস্ত লোকসভা এবং বিধানসভা আসনে এককভাবে নির্বাচনে লড়তে বাধ্য হবে। শুধু তাই নয়, বিজেপি দুষ্যন্ত চৌতালার দাদা রঞ্জিত চৌতালাকেও মন্ত্রী করেছে। যখন ১০ জনের মধ্যে চারজন জেজেপি বিধায়ক শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে হরিয়ানায় কংগ্রেস, আম আদমি পার্টির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে লড়ছে। যা বিজেপির পক্ষে কিছুটা অস্বস্তির কারণ হতে পারে । জেজেপির সঙ্গে জোট ভেঙে আলাদাভাবে নির্বাচনী ময়দানে নামলে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে যেতে পারে।
দলের এক সিনিয়ার নেতা বলেছেন, “নির্বাচনে দল কিছু চমক দেওয়ার পাশাপাশি নতুনদের সুযোগ দিতে চায়। খট্টর একজন ভালো সংগঠক, একজন ভালো প্রশাসক এবং স্বচ্ছ ইমেজের মানুষ। তাঁকে নিয়ে দলের কোনো অভিযোগ নেই। তবে বিজেপির চেষ্টা হল নতুনদের সুযোগ দেওয়া এবং অন্য নেতাদের সুযোগ দেওয়া,”। হরিয়ানার কারনাল লোকসভা আসনকে বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে মনে করা হয়। বর্তমানে এখান থেকে সাংসদ সঞ্জয় ভাটিয়া। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির অশ্বিনী কুমার চোপড়া সেই আসনে জিতেছিলেন। ২০০৯ সালের নির্বাচনে আসনটি কংগ্রেসের অরবিন্দ কুমার শর্মার দখলে ছিল।
এমন পরিস্থিতিতে দলের অভ্যন্তরে গুঞ্জন কারনাল লোকসভা আসন থেকে লড়তে পারেন খট্টর। লোকসভা নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়েই বিজেপি এবং জননায়ক জনতা পার্টি-জেজেপি- মধ্যে বিরোধের সূচনা। বিজেপির কাছে তিনটি লোকসভা আসন দাবি করছিলেন জেজেপি প্রধান। কিন্তু বিজেপি একটাই আসন দেওয়ার কথা বলছিল।
চলতি বছর হরিয়ানায় বিধানসভা নির্বাচনও হওয়ার কথা। লোকসভা নির্বাচনের পর অক্টোবর-নভেম্বরে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। বিজেপি লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেও কৌশল বদল করছে। ৯০ আসন বিশিষ্ট বিধানসভায় ম্যাজিক ফিগার ৪৬। গত নির্বাচনে কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। বিজেপি ৪১ টি আসন নিয়ে বৃহত্তম দল হিসাবে আবির্ভুত হয়। এরপর দুষ্যন্ত চৌতালার জননায়ক জনতা পার্টির (জেজেপি) সমর্থনে সরকার গঠিত হয়। এই জোট ভাঙার পর নায়েব সাইনিকে মুখ্যমন্ত্রী করেছে বিজেপি। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজ্যে পাঞ্জাবি ও জাঠ ভোটব্যাঙ্ককে সরাসরি কাছে টানতে চায় বিজেপি।