আগামী বছর লোকসভা ভোট। তার আগেই ২২ জানুয়ারি অযোধ্যার রামমন্দিরে প্রধানমন্ত্রী মোদীর হাতে প্রতিষ্ঠা করা হবে রামলালার মূর্তি। তার আগেই অবশ্য, 'নরম হিন্দুত্ব' তাসে বিজেপিকে বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করতে ময়দানে ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেডি প্রধান নবীন পট্টনায়েক।
২০২৪ সালে ওডিশায় লোকসভা ভোটের সঙ্গেই হবে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে শ্রীক্ষেত্র পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরকে কেন্দ্র করে 'শ্রীপরিক্রমা' প্রকল্পের সূচনা করতে চলেছেন পট্টনায়ের সরকার। নবনির্মিত রামমন্দিরের উদ্বোধনের দিন কয়েক আগেই হবে 'শ্রীপরিক্রমা'র সূচনা। পুরীকে হেরিটেজ সিটিতে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওডিশা সরকার। এই সূচনা সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ণের প্রথম পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। ৮০০ কোটি খরচ করে রাজ্য সরকার ৭৫ মিটারের একটি পথ তৈরি করেছে পুরীর মন্দিরের চারপাশে। সরকারি সূত্রে খবর, মন্দিরের নিরাপত্তা দেওয়া হবে এবং প্রতিদিন মন্দিরে আসা লক্ষাধিক ভক্তদের জন্য মৌলিক নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
গত ৩ নভেম্বর পুরীর রাজপরিবার এবং শ্রী জগন্নাথ মন্দির ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারপার্সন দিব্যসিংহ দেবের পর্যালোচনার পর সরকার প্যাসেজ বা করিডোরটি উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা করেছে যা ১৭ জানুয়ারি। ওইদিনই সেই প্যাসেজ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। প্রকল্পটি সূচনার আগে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়েছে।
আরএসএস যেমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ভারত জুড়ে রামমন্দিরের পবিত্রতা উদযাপনের পরিকল্পনা করেছে, পট্টনায়েক সরকারেরও করিডোর উদ্বোধনের মাধ্যমে সেই কাজ করবে। এটিকে ওড়িশাবাসীর অস্মিতা প্রচার করে সেরাজ্যের বাইরে বসবাসকারীদের মনেও আবেগের সঞ্চার ঘটানোর চেষ্টা করবেন। জগন্নাথ মন্দিরের প্রধান প্রশাসক রঞ্জন দাসের কথায়, '১৫ জানুয়ারি থেকে পুজো শুরু হবে। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ও ধর্মীয় নেতাদের তালিকা রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে। বিভিন্ন জায়গায় জগন্নাথ মন্দিরে অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।'
বিজেডির রাজনৈতিক ফায়দা
'জগন্নাথমন্দির পরিক্রমা' প্রকল্পের পাশাপাশি, রাজ্য সরকার ওডিশার প্রতিটি বিখ্যাত মন্দির যেমন কোনারকের সূর্য মন্দির, ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দির, সম্বলপুরের সমলেশ্বরী মন্দিরের সৌন্দর্যায়ন করছে। জেলা থেকে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মন্দির উন্নয়নের জন্য বিশেষ অনুদান মঞ্জুর করা হয়েছে।
সরকারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের মতে, এই মন্দিরের সৌন্দর্যায়ন অভিযানের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল নরম হিন্দুত্ব এবং আঞ্চলিক গর্বকে চাগিয়ে তুলে বিজেপিকে আটকে রাখা। পট্টনায়কের বিজু জনতা দল (বিজেডি) গত বিধানসভা নির্বাচনে স্বাচ্ছন্দ্যে জয়লাভ করলেও, লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খেয়েছিল। ২০১৯ সালে বিজেপি ওডিশা থেকে আটটি আসনে জয়লাভ করে (ওড়িশায় মোট সংসদীয় আসন সংখ্যা ২১)।
পট্টনায়ের সরকারের এক শীর্ষ আমলা বলেছেন, ওডিশা ঐতিহ্যগতভাবে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের দেশ, মন্দিরের উন্নয়ন করে, সরকার এই মন্দিরগুলির সঙ্গে যুক্ত ওড়িয়া অস্মিতা সম্পর্কে গর্ববোধ চাগিয়ে তুলতে পারে। এই পদক্ষেপটিকে বিজেডি সরকারের নরম হিন্দুত্বের দিকে ঠেলে দেওয়ার প্রচেষ্টা হিসাবেও দেখা হচ্ছে।'
প্রবীণ বিজেপি নেতা পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন বলেছেন যে, 'বিজেডি রাম মন্দির নিয়ে ভয় পেয়েছে। সে কারণেই তারা এই সমস্ত মন্দির পুনর্নির্মাণ প্রকল্পগুলিতে মননিবেশ করেছে। বিজেডি নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ দল বলে দাবি করে। ২৩ বছর পর, তাদের মাথায় এসেছে যে মন্দিরের জন্য তহবিল অনুমোদন করলে নরম হিন্দুত্ব তাস খেলে বিজেপিকে হারানো সম্ভব।' গত বছর, বিজেপির ভুবনেশ্বরের সাংসদ অপরাজিতা সারঙ্গি লোকসভায় পট্টনায়ের সরকারের এই হেরিটেজ করিডোর নির্মাণের সময় বহু বেআইনি কাজ হচ্ছে বলে সরব হয়েছিলেন। যা উড়িয়ে দিয়েছিল ওডিশা সরকার।