দেবশ্রী রায় কবে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন? দেবশ্রী রায়কে সেদিন বিজেপি দফতরে কে নিয়ে গিয়েছিলেন? দেবশ্রীর জন্যই কি শোভন-বৈশাখীর পদ্মকাঁটা বিঁধেছে? বিজেপি-তে যখন যোগ দেবেনই, তাহলে আবার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে কেন যোগ দিলেন? প্রশ্ন অনেক, উত্তর নেই। এমনটাই ছিল পরিস্থিতি। তবে এবার নীরবতা ভাঙলেন নায়িকা। ১৪ অগাস্ট বিজেপির দিল্লির সদর দফতরে শোভন-বৈশাখী পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নেওয়ার দিন সেই যে দেবশ্রী রায়কে দরজার বাইরে এক ঝলক দেখা গেল, ব্যাস ওইটুকুনিই। এরপর থেকেই তিনি 'নিরুদ্দেশ'। তাঁকে নিয়ে বহু কথা হল, কিন্তু তিনি একটিও কথাও বললেন না। সংবাদমাধ্যমের কয়েকশো টেলিফোনও তাঁর সেই কঠোর নীরবতা ভাঙতে পারল না। এবার সেই দেবশ্রী রায়ই সরব হলেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র একান্ত সাক্ষাৎকারে সব প্রশ্নেরই খোলামেলা উত্তর দিলেন নায়িকা। তবে সাক্ষাৎকারের পরতে পরতে প্রকাশ পেল তাঁর ক্ষোভ এবং বিরক্তি।
বিজেপিতে কবে যোগ দিচ্ছেন?
বিজেপিতে কেন যোগ দিতে যাব? আমি তো তৃণমূলেই আছি।
সেদিন তাহলে বিজেপির কেন্দ্রীয় দফতরে গিয়েছিলেন কেন?
আমার এনজিও-র কাজে গিয়েছিলাম। আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাচ্ছেন না নরেন্দ্র মোদীর কাছে! দরকার হলে যাব না? এনজিও-র ভালর জন্য গিয়েছিলাম। আমি একজন প্রাপ্তবয়স্ক, যেতেই পারি। তবে বিজেপিতে যোগ দিতে যাইনি।
আরও পড়ুন: ‘আমি দেবশ্রীর আত্মীয় নই, তাহলে কেন এসেছিলেন?’
শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, আপিনি বিজেপিতে যোগ দিলে উনি আর...
(প্রশ্ন শেষ করতে না দিয়েই রীতিমতো উত্তেজিত গলায় নায়িকা বলেন) আমি সেদিন (গত ১৪ অগাস্ট, এদিনই বিজেপিতে যোগ দেন শোভন-বৈশাখী) বিজেপিতে যোগ দিতে যাইনি। শোভন চট্টোপাধ্যায় কী করে জানলেন যে আমি বিজেপিতে যোগ দিতে গিয়েছি? উনি কি অন্তর্যামী? আমি আমার এনজিও-র কাজে গিয়েছিলাম।
আরও পড়ুন: ‘বৈশাখীর অভিমানের কারণ কি শোভনের পুরনো বান্ধবী?’
শোভন-বৈশাখী যেদিন গেলেন, ঠিক সেদিনই কেন আপনিও সেখানে যেতে গেলেন?
আমি জানতাম না, ওই দিনই শোভন-বৈশাখী ওখানে পৌঁছে যাবেন। যদি জানতাম, তাহলে সেদিন যেতাম না, পরের দিন যেতাম। আমার তো খেয়েদেয়ে কাজ নেই যে ওদের পিছু পিছু যাব। ওঁরা কী করে জানল (যে আমি যোগ দিতে গিয়েছিলাম)? কেউ যদি অকারণে গল্প তৈরি করেন, আর তাতে যদি কেউ একজন মহিলাকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তাহলে কিছু করার নেই। আমার একটা সুনাম আছে। ওঁরা অসভ্যের মতো এগুলি করছেন।
EXCLUSIVE শোভন: মমতাকে তৈরি করতে সব নষ্ট করে জীবন দিয়েছিলাম, আর উনিই রাজনীতি করলেন
অন্তরালে কেন ছিলেন?
আরে বাবা, আমি তো তৃণমূলেই আছি (কণ্ঠে বিরক্তি স্পষ্ট)। এত কৈফিয়ৎ কেন দেব? আমার পরিবারে সঙ্কট চলছে। আমার দিদির (নায়িকা রানি মুখোপাধ্যায়ের মা কৃষ্ণা) বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে। সেইসঙ্গে বাড়িতে নব্বই বছরের মা রয়েছেন। খুব ঝামেলা চলছে পরিবারে। এই সময় এসব (যোগদান বিতর্ক) হচ্ছে। তাই খুবই বিরক্ত হয়ে ফোন সুইচড অফ রেখেছিলাম।
আরও পড়ুন: ‘বৈশাখী গেলে যাক, দেবশ্রীকে বিজেপিতে নিন’
বিজেপি-তে যোগ না দিতে চাইলে, কলকাতায় ফিরে দিলীপ ঘোষের সঙ্গে কেন যোগাযোগ করেছিলেন?
দিলীপ ঘোষের সঙ্গে বৈঠক করেছি এনজিও-র ব্যাপারে। উনিও চেনেন ওই এনজিও-র ব্যক্তিকে।
বলেন কী! দিলীপ ঘোষ প্রকাশ্য সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, দেবশ্রী রায় বিজেপিতে যোগ দিতে চান। আপনি নাকি কিছু শর্ত দিয়েছিলেন?
দিলীপের এই মন্তব্য অস্বীকার করে দেবশ্রী বলেন, আমি কোনও শর্ত দিইনি।
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রই দিলীপবাবুকে আপনার সঙ্গে কথা বলতে বলেছিলেন বলে দাবি করেছিলেন দিলীপ ঘোষ...
(প্রশ্ন শেষ করতে না দিয়েই) না, মহুয়ার সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনও কথা হয়নি। যেদিন থেকে ও সাংসদ হয়েছে, সেদিন থেকে কথা হয়নি। তাছাড়া, উনি (দিলীপ) বলেছেন, আমি নাকি হতাশায় ভুগছি। কারও মুখে শুনে মনে হয় উনি একথা বলেছেন। দিলীপবাবুর দোষ নেই এতে। তো যিনি বলেছেন, তাঁকে কি কোনও মানসিক চিকিৎসক বলেছেন, যে আমি হতাশায় ভুগছি?
আরও পড়ুন: শোভন-বৈশাখীর আপত্তি নাকচ? দেবশ্রীকে দলে নিয়ে নেব, মন্তব্য দিলীপের
এই বিতর্ক নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে?
না, কেন কথা বলব? আমি কী ভুল করেছি?
দেবশ্রী রায়ের এদিনের মন্তব্যের জবাবে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘‘বিজেপির অফিসে এনজিও-র কোনও সেন্টার নেই। সেখানে তিনি গিয়েছিলেন কেন? এনজিও-র জন্য কার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন? এসবের উত্তর দিচ্ছেন না কেন? উনি পশ্চিমবঙ্গের কোনও বড় রাজনীতিবিদ নন, যে বিজেপি ওঁর প্রতি আগ্রহ রয়েছে। একবার যাচ্ছেন বিজেপি অফিসে, একবার যাচ্ছেন দিলীপ ঘোষের বাড়িতে। এসব ভাবের ঘরে চুরি করে লাভ আছে! এতদিন বাদে বলছেন কেন? সেদিন কেন বললেন না? দেবশ্রী রায়ের কোনও কথাই বিশ্বাসযোগ্য নয়, কোনও আচরণও বিশ্বাসযোগ্য নয়’’।
কী বললেন শোভন-বৈশাখী?
শোভন-বৈশাখী প্রসঙ্গে দেবশ্রী রায়ের এদিনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র তরফে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'কেউ যদি পাগলের মতো কথা বলে থাকেন, তাহলে বলে যাক। আমার কাউকে নিয়ে গল্প ফাঁদার প্রয়োজন নেই। উনিই গল্প করছেন'। অন্যদিকে, বৈশাখীদেবী বলেন, "দেবশ্রী রায়কে চিনি না। ওঁর কয়েকটি সিনেমা দেখেছি মাত্র। উনি বিজেপি অফিসে বেড়াতে গিয়েছেন বা অন্য কোনও কারণে গিয়েছেন, সেটা উনিই বলতে পারবেন। আমি বিজেপি দফতরকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে জানি না। আজ বলেছেন, এনজিও-র কাজে গিয়েছিলেন। এই গল্পটি তৈরি করতে এত সময় নিলেন কেন? সেদিনই তো বলতে পারতেন। উনি বিগত দিনের নায়িকা, আর এই গল্পটাও পুরনো দিনের হয়ে গিয়েছে"।