এক হাজারেরও বেশি সরকারি মাদ্রাসার নাম পরিবর্তন করল হিমন্ত বিশ্বশর্মা সরকার। চলতি বছরেই অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছিলেন 'আসামে ৬০০টি মাদ্রাসা বন্ধ করা হয়েছে। বাকিগুলির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে"। সেই লক্ষ্যেই আরও একধাপ এগিয়ে গেলো অসম সরকার। শিক্ষামন্ত্রী পেগু এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, 'সমস্ত সরকারি এবং প্রাদেশিক মাদ্রাসাকে অসমের মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অধীনে আনা হয়েছে। সেই কারণেই ওই মাদ্রাসাগুলির নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। ১২৮১টি এম ই মাদ্রাসার নাম পরিবর্তন করে মিডল ইংলিশ (ME) নাম দেওয়া হয়েছে'।
২১টি জেলা মিলিয়ে মোট ১২৮১টি মাদ্রাসার নাম বদলে ফেলা হয়েছে। মাদ্রাসার নাম পরিবর্তন করে মিডল ইংলিশ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মার্চ মাসে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছিলেন, 'আমাদের মাদ্রাসা দরকার নেই। আমাদের ইঞ্জিনিয়ার এবং ডাক্তার প্রয়োজন। তাই নতুন ভারতে মাদ্রাসার বদলে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় দরকার'। ২০২০ সালে অসম সরকার জানিয়েছিল, যে স্কুলগুলিতে মাদ্রাসা শিক্ষা দেওয়া হয় সেগুলির বহু খরচ বহন করে সরকার। তাই কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা করে আর খরচ বহন করবে না সরকার'। বিজেপি নেতৃত্বাধীন আসাম সরকার ১২৮১ মাদ্রাসার নাম পরিবর্তন করে মিডল ইংলিশ (এমই) স্কুল করেছে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী রণোজ পেগু বলেছেন যে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় অভিন্নতার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুসারে, ধুবরি জেলায় সর্বাধিক ২৬৯ টি মাদ্রাসার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এরপরে ১৬৫ টি রয়েছে নগাঁও এবং ১৫৮ টি বারপেটা জেলায়। গোয়ালপাড়ায় মোট ৯৯টি এবং হাইলাকান্দিতে ৮৭টি মাদ্রাসার নাম পরিবর্তন করে ‘এমই স্কুল’ করা হয়েছে।
রাজ্য সরকারের অধীনে পরিচালিত মাদ্রাসাগুলো গত কয়েক বছরে বহু বিতর্কে ঘেরা
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুসারে, এর আগেই মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তাঁর সরকার সমস্ত মাদ্রাসা বন্ধ করে দেবে। তিনি দাবি করেছিলেন যে 'নতুন ভারতে' তাদের প্রয়োজন নেই। সরকার আরও বলেছে যে মাদ্রাসাগুলি পরিচালনা করতে তাদের ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। শর্মার মন্তব্য শীঘ্রই এই অঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যেও জনপ্রিয়তা লাভ করে। ত্রিপুরার বিজেপি বিধায়ক শম্ভুলাল চাকমা বিধানসভায় বলেছিলেন যে সরকার-চালিত মাদ্রাসাগুলি বন্ধ করা উচিত কারণ এই ধরনের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি সন্ত্রাসবাদী তৈরি করে, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার নয়।
অসমের চারটি মাদ্রাসা দেশবিরোধী ও জিহাদি কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। বুধবার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের তরফে সুরঞ্জনা সেনাপতির জারি করা আদেশে বলা হয়েছে যে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদেরর অধীনে রাজ্য জুড়ে ১২৮১ উচ্চ প্রাথমিক এমই মাদ্রাসা অবিলম্বে এমই স্কুল হিসাবে পরিচিত হবে। সুরঞ্জনা সেনাপতি বলেন, এই আনুমানিক ১৩০০ টি মাদ্রাসা এমই স্কুলে নিয়মিত ক্লাস চলছে এবং সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী তাদের নামকরণে সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: < Premium: নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, বাংলার মঙ্গল কামনায় পায়ে হেঁটেই রামমন্দির রওনা দিনমজুরের >
সেনাপতি বলেন, 'এসব মাদ্রাসায় ছাত্র, শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মচারী রয়েছে। বহু বছর ধরে মাদ্রাসায় ক্লাস হচ্ছে এবং কোনো পরিবর্তন ছাড়াই ক্লাস চলবে।’ আদেশ জারি হওয়ার আগে মাদ্রাসায় ধর্মীয় শিক্ষাও দেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বাধীন অসম সরকার প্রথম থেকেই মাদ্রাসার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক অবস্থান গ্রহণ করেছে। এমনকি যখন সন্ত্রাসবাদী ঘটনার সঙ্গে মাদ্রাসার যোগসাজশের প্রমাণ মেলে, তখন হিমন্ত সরকার সেগুলিকে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা রাজ্যের সমস্ত মাদ্রাসা বন্ধ করার ইচ্ছা প্রকাশ করার পরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অসম সরকারের গত বছর সমস্ত সরকার পরিচলিত সকল মাদ্রাসা বন্ধ করে সাধারণ স্কুলে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
উল্লেখ্য এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে, অসমের ডিজিপি ভাস্কর জ্যোতি মহন্ত বলেছিলেন যে রাজ্যের ১০০ টিরও বেশি ছোট মাদ্রাসাকে বড় মাদ্রাসার সঙ্গে একীভূত করা হয়েছে। তিনি দাবি করেছিলেন যে এই পদক্ষেপ রাজ্যে শিক্ষাব্যবস্থার "আমূল বদল আনবে"।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সাথে কথা বলার সময়, অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ) বিধায়ক আমিনুল ইসলাম মাদ্রাসার নাম পরিবর্তন করার জন্য সরমা সরকারের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি। এটা গণতন্ত্রের মৃত্যু। শিক্ষা ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। আমি আমার সন্তানদের শিক্ষা কোথায় পেতে পারি সেটা আমার পছন্দ বা আমার সন্তানদের পছন্দের বিষয়। বিজেপি সরকার পছন্দের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে।” তিনি যোগ করেছেন যে তার দল আইনজীবীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবে এবং আইনি পথেই সরকারের মোকাবিলা করবে।