লোকসভা বৃহস্পতিবার কিছু মুহুর্তের সাক্ষী হল। আর, এই মুহূর্তগুলো সামনে এল দিল্লি বিলকে কেন্দ্র করে। আমলাদের নিয়ন্ত্রণ করবে দিল্লি সরকার। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশকে গুরুত্বহীন করতে মোদী সরকার এই ন্যাশনাল ক্যাপিটাল টেরিটরি অফ দিল্লি (সংশোধন) বিল, ২০২৩ এনেছে। এই বিলের পক্ষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান যে জওহরলাল নেহরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, সি রাজাগোপালাচারী, রাজেন্দ্র প্রসাদ এবং বিআর আম্বেদকরের মত স্বাধীন ভারতের প্রতিষ্ঠাতারা দিল্লির পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পাওয়ার ধারণার বিরোধী ছিলেন।
উত্তরে শাহর উদ্দেশ্যে কটাক্ষ ছুড়ে দেন লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, 'আজ যখন আমরা হাউসে এসেছি, তখন ভাল লেগেছে যে অমিত শাহজি বারবার নেহেরু এবং কংগ্রেস পার্টির প্রশংসা করছিলেন। মনে মনে ভাবলাম, কী দেখছি? এটা দিন নাকি রাত? আমি ভাবলাম ওঁর কাছে ছুটে গিয়ে ওঁর মুখে একটা মিষ্টি দিই। কারণ নেহরু এবং কংগ্রেসের জন্য তাঁর মুখ থেকে প্রশংসা আমার কাছে খুশির পাশাপাশি বিস্ময় উদ্রেক করেছে।' অধীর চৌধুরীর এই বক্তব্যে বাধা দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি দাবি করেন যে নেহরুর প্রশংসা করেননি। অধীর বলেন, 'আমি পণ্ডিত নেহরুর প্রশংসা করিনি। তিনি যা বলেছেন, তা আমি সহজভাবে উদ্ধৃত করেছি। তাতে তাঁরা যদি একে প্রশংসা বলে বিবেচনা করতে চান, তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই।'
অধীর পালটা বলেন, 'যখন আপনার প্রয়োজন হয়, আপনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সাহায্য নেন। আপনি যদি সত্যিই নেহরুর সাহায্য নিতেন, তাহলে দেশ মণিপুর ও হরিয়ানার সাক্ষী থাকত না।' প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তাঁর বিবৃতির সময় মণিপুরের জাতি হিংসা এবং হরিয়ানার নুহ এলাকায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করেন। এই মন্তব্য এমন একটা অধীর করলেন, যখন কেন্দ্রীয় সরকার সংসদের মাধ্যমে দিল্লি বিলটি পাশ করানোর চেষ্টা করছে। এই বিল সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশ কেন্দ্র ১৯ মে, ২০২৩-এ জারি করেছিল। সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ দিল্লি বনাম ভারত সরকার মামলায় তাঁর রায় ঘোষণার আট দিন পরে কেন্দ্র এই অধ্যাদেশ আনে। সুপ্রিম কোর্ট, তার রায়ে পরিষেবাগুলোর ওপর দিল্লি সরকারকে আরও ক্ষমতা দিয়েছিল।
অধীর চৌধুরীর বক্তব্যের পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, 'এই অর্ডিন্যান্স সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশ অনুযায়ী আনা হয়েছে। যে নির্দেশ বলে যে জাতীয় রাজধানী অঞ্চল দিল্লির সঙ্গে সম্পর্কিত যে কোনও বিষয়ে আইন তৈরি করার অধিকার সংসদের আছে। সংবিধানে এমন বিধান রয়েছে, যা কেন্দ্রকে দিল্লির জন্য আইন তৈরি করার অনুমতি দেয়। আমি দলগুলোর কাছে আবেদন করছি যে আপনি জোটে থাকার কারণে দিল্লিতে যে সমস্ত দুর্নীতি হচ্ছে তাকে সমর্থন করবেন না। কারণ জোট সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী মোদী পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জিতবেন।'
আরও পড়ুন- জয়পুর-মুম্বই ট্রেন গুলিচালনা, কতদূর এগোল তদন্ত?
বিলটি এর আগে বিরোধী সদস্যদের সোচ্চার প্রতিবাদের মধ্যে লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই পেশ করেছিলেন। অমিত শাহ বলেন, '২০১৫ সালে, একটি দল দিল্লিতে ক্ষমতায় এসেছিল, যার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল লড়াই করা, সেবা নয়। সমস্যাটি পোস্টিং ট্রান্সফার করার অধিকার পাওয়া নয়। তাদের বাংলো তৈরির মত দুর্নীতি আড়াল করার জন্য ভিজিল্যান্স বিভাগের নিয়ন্ত্রণ পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে।'