বিমুদ্রাকরণের সময়ে সবচেয়ে বেশি মূল্যের নোট বদল হয়েছিল যে ১০টি জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে, সেই ব্যাঙ্কগুলির হর্তাকর্তা পদে আসীন ছিলেন বিজেপি-কংগ্রেস-এনসিপি-শিবসেনাসহ দেশের সবকটি মুখ্য রাজনৈতিক দলের নেতারা। তথ্যের অধিকার আইনের (আরটিআই) আওতায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের হাতে এই তথ্যসম্বলিত নথি এসেছে।
নাবার্ডের কাছ থেকে পাওয়া আরটিআই তথ্য অনুসারে দেশের ৩৭০টি জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে ১০ নভেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মোট ২২,২৭০ কোটি টাকার পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বদল করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১০টি সমবায় ব্যাঙ্কে বদল করা হয়েছিল ৪১৯১.৩৯ কোটি টাকা, শতাংশের হিসেবে যা ১৮.৮২।
নথিতে এও দেখা যাচ্ছে, এই দশটির মধ্যে চারটি ব্যাঙ্ক গুজরাটের, চারটি মহারাষ্ট্রের, একটি হিমাচল প্রদেশের ও একটি কর্নাটকের।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পুরনো নোট বদল করা হয়েছিল আমেদাবাদ জেলা সমবায় ব্যাঙ্কে, যে ব্যাঙ্কের একজন ডিরেক্টর অমিত শাহ, ও চেয়ারম্যান হলেন এক বিজেপি নেতা অজয়ভাই এইচ প্যাটেল। এখানে নোট বদলের পরিমাণ ৭৪৫.৫৯ কোটি টাকা। তালিকার দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে রাজকোট জেলা সমবায় ব্যাঙ্ক, যেখানে নোট বদলের পরিমাণ হল ৬৩৯.১৯ কোটি টাকা। সে ব্যাঙ্কের কর্ণধার হলেন গুজরাটের মন্ত্রী জয়েশভাই রাডাডিয়া।
তিন নম্বরে রয়েছে পুনে জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক, নোট বদলির পরিমাণ ৫৫১.৬২ কোটি টাকা, যার মাথায় ছিলেন এনসিপি বিধায়ক রমেশ থোরাট। কংগ্রেস নেত্রী অর্চনা গারে সে ব্যাঙ্কের ভাইস চেয়ারম্যান, এবং ডিরেক্টরদের মধ্যে রয়েছেন এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের আত্মীয়।
তালিকার সাত নম্বরে রয়েছে কর্নাটকের সাউথ কানাড়া জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক। এখানে নোট বদলির পরিমাণ ৩২৭.৮১ কোটি টাকা। সে ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান হলেন ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের সময়ে জেলা কংগ্রেসের দায়িত্বে থাকা কংগ্রেস নেতা এম এম রাজেন্দ্র কুমার।
নাসিক জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক তালিকার অষ্টম স্থানে রয়েছে। সে সময়ে এই ব্যাঙ্কের শীর্ষ পদে ছিলেন শিবসেনা নেতা নরেন্দ্র দারাডে। গত বছরের নভেম্বরে বিমুদ্রাকরণের প্রভাব সামলাতে না পারার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে দায়ী করে পদত্যাগ করেছেন তিনি।
আরটিআই নথি অনুসারে ৩৭০টি জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে যাঁরা পুরনো নোট জমা দিয়েছেন, তেমন ৩১,১৫,৬৯৪ জন গ্রাহকের পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখেছে নাবার্ড।
নথিতে পাওয়া তথ্য অনুসারে বহু জেলা সমবায় ব্যাঙ্কের মাথায় রয়েছেন, সেই রাজ্যের রাজনৈতিক নেতারা, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
যেমন ধরা যাক তামিলনাড়ুর নোটবদলির শীর্ষে রয়েছে সালেম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক। যেখানে ১৬২.৩৭ কোটি টাকার পুরনো নোট বদলি করা হয়েছিল। এর মাথায় রয়েছেন এআইডিএমকে নেতা আর এলাঙ্গোভান। পশ্চিমবঙ্গে নোটবদলির শীর্ষে রয়েছে নদিয়া জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক, যার শীর্ষস্থানে রয়েছেন তৃণমূল নেতা শিবনাথ চৌধুরী। এখানে নোট বদলি হয়েছিল ১৪৫.২২ কোটি টাকার। মধ্যপ্রদেশের নোটবদলির শীর্ষে রয়েছে খারগান জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক, যার মাথায় রয়েছেন রণজিৎ সিং ডান্ডির। নোট বদলির পরিমাণ ১১৩.২৩ কোটি টাকা।
উত্তরপ্রদেশের নোট বদলির শীর্ষস্থানে রয়েছে মীরাট জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক। নোট বদলির পরিমাণ ৯৪.৭২ কোটি টাকা। এ ব্যাঙ্কের শীর্ষপদে তখন ছিলেন সমাজবাদী পার্টির নেতা জয়বীর সিং। অন্ধ্রপ্রদেশে নোটবদলির শীর্ষে গুন্টুর জেলা সমবায় ব্যাঙ্ক (৮৩.২৩ কোটি টাকা), শীর্ষপদাসীন টিডিপি নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক এম ভেঙ্কট সুব্বাইয়া। তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদ জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক (৭৯.১৬ কোটি টাকা), শীর্ষপদাসীন টিআরএস নেতা এস পেন্টা রেড্ডি।
তালিকা এখানেই শেষ নয়। ছত্তিসগড়ের নোটবদলির শীর্ষস্থানে থাকা রায়পুর জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক (৬০.৬৫ কোটি টাকা)-এর চেয়ারম্যান বিজেপি নেতা যোগেশ চন্দরকর। ওড়িশার শীর্ষস্থানাধিকারী বালাোসোর-ভদ্রক জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক (৫৯.৪৩ কোটি টাকা)-এর চেয়ারম্য়ান হলেন বিজেডি নেতা রঘুনাথ লেঙ্কা এবং ভাইস চেয়ার পার্সন হলেন, ওই দলেরই আরেক নেত্রী অনীতা ভুঁইয়া।
রাজ্য ওয়ারি তালিকার হিসেবে কেরালার কাসারাগড় জেলা সমবায় ব্যাঙ্ক তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এখানে নোটবন্দির সময়ে মোট ২৯৩.৫৮ কোটি টাকার পুরনো নোট বদল করা হয়েছিল। এ ব্যাঙ্কটি বাম পরিচালিত রাজ্য সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। নোটবদলিতে কাসারাগড়ের পরেই পাঞ্জাবের সাংরুর সমবায় ব্যাঙ্ক। নোটবদলির পরিমাণ এখানে ২১৬.২৭ কোটি টাকা।