নেতৃত্ব, কমিটি গঠন নিয়ে রাজ্য বিজেপির অন্দরে কাজিয়া ছিলই। বৃহস্পতিবার দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির কথায় যা আরও প্রকট হল। বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বদানের ক্ষমতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন দিলীপ ঘোষ।
দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে গত বছর এ রাজ্যের বিজেপির সভাপতি করা হয় সুকান্ত মজুমদারকে। তারপর গঠন করা হয়েছে নানা কমিটি। সেখানে ঠাঁই পাওয়াকে কেন্দ্র করেই গেরুয়া শিবিরে দ্বন্দ্ব তুঙ্গে। প্রকাশ্যেই দলের সাংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা মতুয়া নেতা শান্তনু ঠাকুর রাজ্য বিজেপির বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কামান দেগেছিলেন। জাহাজ মন্ত্রকের গেস্ট হাইসে দলের 'বিক্ষুব্ধ' নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। এরপর সুকান্ত মজুমদারদের বার্তা দিতে পিকনিক পলিটিক্সের সূচনা হয়। তবে, পাল্টা শান্তনুদের বার্তা দিতে তাঁর শিবিরে থাকা দুই নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার ও রীতেশ তিওয়ারিকে দলবিরোধী কাজের দায়ে বরখাস্ত করেন সুকান্ত এন্ড কোম্পানি।
বিজেপির অভ্যন্তরের এই কাজিয়া যখন চলছে, তখন একুশের ভোটের পর এ রাজ্যের একের পর এক উপনির্বাচন, পুরসভা ভোটে গোহারা হেরেছে পদ্ম বাহিনী। এর দায়ে রাজ্য নেতৃত্বের ঘাড়েই চাপিয়েছেন সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, দলের সর্বভারতীয় সংগঠনের সম্পাদক অনুপম হাজরারা। নেতৃত্বের পরিকল্পনার অভাবেই জোড়া-ফুলের কাছে গেরুয়া শিবিরকে বার বার ধরাশায়ী হতে হচ্ছে বলে প্রকাশ্যেই গত দুই উপনির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন দাবি করেছিলেন সৌমিত্র ও অনুপম।
এবার কার্যত একই দাবি করলেন বাংলার প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ । তিনি এদিন বলেছেন, 'সুকান্ত মজুমদার সবে দায়িত্ব পেয়েছেন, ওনার অভিজ্ঞতা কম। যারা এতদিন আন্দোলন করেছেন তাদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে যে, যাঁদের বিশ্বাস করে মানুষ রাস্তায় নেমেছেন, পতাকা ধরেছেন, তাদের গুরুত্ব দিতেই হবে। যোগ্য লোকেদের বাদ দিলে হবে না।'
বরখাস্ত হওয়ার পর পরই নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন জয়প্রকাশ মজুমদার ও রীতেশ তিওয়ারি। বঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী, এ রাজ্যের দলের পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য ও সুকান্ত মজুমদারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন তাঁরা। নেতৃত্ব প্রশ্নে সম্প্রতি দলের রাজ্য কমিটির সর্বস্তরের পদ থেকে মোট ১৩ জন পদত্যাগ করেছেন। তারপরই সুকান্ত মজুমদারকে নিশানা করে দিলীপবাবুর এ দিনের মন্তব্য রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে যথেষ্ট তাৎপর্যবাহী। তাহলে কী দলের 'বিক্ষুব্ধ'দেরই আদতে সমর্থন করছেন দিলীপ ঘোষ?
সর্ব ভারতীয় বিজেপির সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের এ দিনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেছেন, 'আমার দলের কোনও নেতার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আমি কোনও কথা বলি না।'
রাজ্য বিজেপিতে আদি-নব্য বিবাদ স্পষ্ট। এ নিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, 'আমরা এটা প্রথম থেকেই বলে আসছি। এবার দিলীপ ঘোষের কথায় তা সাফ বোঝা গেল। মানুষ তাই আগেই ওদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। সুকান্তবাবুর উচিত দিলীপ ঘোষের পাঠশালায় গিয়ে পাঠ নেওয়া।'