বাংলার তিন উপনির্বাচনে একশ শতাংশ পরাজয়ের পর ছাপ্পা-রিগিংয়ের তত্ত্ব আওড়ালেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে দিলীপ জানিয়ে দেন, "আমাদের হারের কারণ পর্যালোচনা করা হবে। দোষ-ত্রুটি কোথায় আছে তা অনুসন্ধান করে দেখা হবে"। একইসঙ্গে তিনি দিলীপ ঘোষের হুঁশিয়ারি, "আসল লড়াই ২১ সালে, তার জন্য প্রস্তুত থাকুন"।
শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহে ভাঙচুর হওয়া দলীয় কার্যালয় ও জখম বিজেপিকর্মীকে দেখতে যাওয়ার কর্মসূচি ছিল দিলীপ ঘোষের। তাঁর এই সফরকে কন্দ্রে করেই তুলকালাম ঘটনা ঘটে। তৃণমূল কংগ্রেস রাস্তা আটকে, কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে, এমনটাই অভিযোগ। বিজেপিকর্মীদের সঙ্গে গেরুয়া সমর্থকদের সংঘর্ষও শুরু হয়ে যায়। এলাকায় নামে বিশাল পুলিশ বাহিনী। শেষ পর্যন্ত কর্মসূচি বাতিল করেন দিলীপ। এরপরই এদিন রাজ্য দফতরে দিলীপবাবু বলেন, "সংঘর্ষ, সংঘাত করবে, ভয়ের পরিবেশ তৈরি করবে তা হবে না। আমাকে আটকে বিজেপিকে আটকাতে চাইছে। ৫বার গাড়ি ভাঙা হয়েছে। ৫০ বার কালো পতাকা দেখানো হয়েছে। আরও ৫০ বার দেখাবে। যথক্ষণ না মাথা ভাঙছে, দিলীপ ঘোষ রাস্তায় থাকবে।"
কিন্তু, উপনির্বাচনে এমন হারের কারণ কী?
ফলাফলের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, কর্মীরা উপনির্বাচন বলে মরিয়া হয়ে খাটেনি। লোকসভার ফলাফল দেখে ভেবেছিল, এমনিতেই জিতে যাবে। তবে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন বা এরপর একবারও ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ না তুললেও এদিন সেই সুর শোনা গিয়েছে দিলীপের গলায়। তিনি বলেন, "আমাদের এজেন্টরা ভয়ে রিগিং-এর কথা বলেননি। সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার পর ছাপ্পা হয়েছে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে আমাদের সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ লাঠি চালিয়েছে। সংঘর্ষ ও সন্ত্রাস একটা কারণ। কর্মীরা লড়াই করেছে, সবাই কাজ করেছে।"
উল্লেখ্য, খড়্গপুর বিধানসভায় ২০১৬-তে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। এরপর ২০১৯-এ মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ হন তিনি। ওই লোকসভা ভোটের নিরিখে বিজেপি খড়্গপুরে এগিয়ে ছিল প্রায় ৪৫ হাজার ভোটে। অথচ এই উপনির্বাচনে সেই আসন তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে বিজেপিকে হারতে হল ২০ হাজারের বেশি ভোটে। দিলীপবাবুর স্বীকারোক্তি, "খড়্গপুরে এনআরসির জন্য আমরা হারিনি। সেখানে অন্য কারণ আছে। জেতার পর ধরে রাখার অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। পুলিশ প্রশাসনকে সামলাতে পারি না। শাসক দল উপনির্বাচনে জেতে, এতে এত উতসাহিত হওয়ার কী আছে? এদিন তাঁর দাবি, খড়্গপুরে ২৭টা বুথে রিগিং হয়েছে।
উপনির্বাচেন হারের পিছনে কী এনআরসির ভূমিকা আছে? দিলীপবাবুর যুক্তি, "এনআরসি হচ্ছে আসামে, কিন্তু সেখানে ভোটের ফল খারাপ হয়নি। এখানে মানুষকে ভয় দেখানো হয়েছে। মমতা নিজে রাস্তায় নেমেছেন। এনআরসি হলে লোকের কাছে যাব। জানতে চাইব। সমস্ত উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেব।"
তিন আসনের উপনির্বাচনে করিমপুরে যে প্রথম থেকেই বিজেপি পিছিয়ে ছিল তাও এদিন জানিয়ে দেন রাজ্য সভাপতি। ওই কেন্দ্রে প্রার্থী ছিলেন বিজেপি-র রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার। দিলীপবাবু বলেন, "আমরা আশঙ্কা করিনি। তৃণমূলেরও এমন বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ছিল না যে ওরা জিতবে। করিমপুরে এগিয়ে ছিল, ওটা জেতার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বাকি দুটোতে আমরাই এগিয়ে ছিলাম। নির্বাচনে লড়েছি। রেজাল্ট যা হয়েছে মানতে হবে। তা মেনে নিয়ে আমরা এগোব।"