তাঁর ‘আন্তরিকতা’য় মুগ্ধ হয়েই বিজেপিতে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, একথা পদ্মপতাকা হাতে তোলার পরই জানিয়েছেন খোদ শোভন চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিজেপি রাজ্য দফতরে সংবর্ধনা শেষে তাঁর পাশে বসেই শোভন বললেন, ‘‘নতমস্তকে যেভাবে (দিলীপ ও বিজেপি নেতৃত্ব) পরিচালনা করবেন, যেভাবে কাজ করতে বলবেন, সেভাবেই কাজ করব’’। শোভনের মুখে একথা শোনার পরই সাংবাদিক বৈঠকে স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েন দিলীপ। নব্বইয়ের দশকে বেহালায় থাকাকালীন তিনি যখন ‘সাইকেল আরোহী’, তখন থেকেই স্কুটার নিয়ে ঘুরে বেড়ানো শোভনকে তিনি চিনতেন বলে এদিন জানান দিলীপ ঘোষ। শোভন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে দিলীপ বললেন, ‘‘তখন উনি স্কুটারে ঘুরতেন, আমি সাইকেলে ঘুরতাম। এখন গাড়ি বদলে গিয়েছে’’।
এক্সক্লুসিভ শোভন: মমতাকে তৈরি করতে সব নষ্ট করে জীবন দিয়েছিলাম, আর উনিই রাজনীতি করলেন
ঠিক কী বলেছেন দিলীপ ঘোষ?
মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে আগাগোড়াই তাঁরা যে অত্যন্ত আন্তরিক সে কথা বোঝানোর চেষ্টা করেন শোভন-দিলীপ উভয়েই। এদিন বিজেপি রাজ্য সভাপতি বলেন, ‘‘শোভনদা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। যেইমাত্র শুনেছি, উনি ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, ওঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কেন্দ্রীয় নেতারাও বলেছিলেন। আমি বলেছিলাম, আদর্শ আলাদা হতে পারে, কিন্তু ক’দিন আর এভাবে বসে থাকবেন। রাজনীতিতে ফিরুন’’। এরপরই স্মৃতির সরণি বেয়ে দিলীপ বলেন, ‘‘১৯৯২-৯৪ সালে বেহালায় থাকতাম। তখন আমি কেউ না। ওঁর নাম অনেক শুনেছি। তখন উনি স্কুটারে ঘুরতেন, আমি সাইকেলে ঘুরতাম। এখন গাড়ি বদলে গিয়েছে। এরপর রাজনৈতিক পরিবর্তন হল, ঘাত-প্রতিঘাত হল। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল-বিজেপি জোটের সময়ও আমি কাজ করেছিলাম’’।
আরও পড়ুন: চরম ক্ষুব্ধ বৈশাখী! ‘বিজেপিতে আর পা-ই রাখতাম না, শুধু শোভনবাবুর জন্যই আসছি’
দিলীপ ঘোষ আরও বলেন, ‘‘যাঁকে দলের জন্য মারধর খেতে হয়, তাঁকে যদি সেই দল ছাড়তে হয় , তাহলে সেটা খুবই কষ্টের। এটা মুকুলদার সময়ও দেখেছি। আমরা কিন্তু বেঁধে আনিনি শোভনদাকে। উনি স্বেচ্ছায় এসেছেন। উনি বলেছেন, ক্ষমতার জন্য আসেননি, সম্মানের জন্য এসেছেন। সবার সম্মান পাওয়ার অধিকার রয়েছে’’। অন্যদিকে, শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার নম্বরই দিলীপদার কাছে ছিল না, বৈশাখীর মাধ্যমেই যোগাযোগ হয়। এখনও আমার নম্বর ওঁর কাছে নেই’’।
আরও পড়ুন: শোভন-বৈশাখী ‘ভাত-ডাল’, মত দিলীপের! মানে বুঝলেন না ‘অসন্তুষ্ট’ বৈশাখী
প্রসঙ্গত, শোভন-বৈশাখীর যোগদানের পর দিলীপ বলেছিলেন, সারদা-নারদে যাঁরা অভিযুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে, তাঁদের দল থেকে বের করে দেওয়া হবে। এ ইঙ্গিত শোভন চট্টপাধ্যায়-মুকুল রায়দের উদ্দেশেই করেছিলেন দিলীপ ঘোষ, এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। এই প্রেক্ষিতে এদিন মুখ খোলেন শোভন। তিনি বলেন, অভিযোগ থাকা মানেই দোষী হয়ে যাওয়া নয়। তবে ৬, মুরলীধর সেন লেনে শোভনের প্রথম দিনে যেভাবে তাঁর সম্পর্কে দিলীপের গলায় স্তুতি শোনা গেল তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত রাজনীতির কারবারিদের একাংশের।