শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে (প্রস বিজ্ঞপ্তিতে) তাঁর নাম না থাকায় চরম ‘ব্যথিত’ হয়েছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিস্থিতি এতটাই কঠিন হয়ে গিয়েছিল যে ‘বিজেপিতে আর পা-ই রাখতাম না, শুধু শোভনবাবুর জন্যই আসছি’ বলে মঙ্গলবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানান বৈশাখী। এ বিষয়ে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তাঁর উষ্মার কথা ইতিমধ্যে দিল্লির নেতৃত্বের কাছে 'নালিশ' আকারে জানিয়েছেন অধ্যাপিকা বৈশাখী। আর এরপরই নাকি রাজ্য বিজেপির তরফে জয়প্রকাশ মজুমদার এবং মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা তাঁকে জানান, 'ভুল বশত' নাম ছাপা হয়নি। 'ভুল' হয়েছে জেনে 'ক্ষমা করার' সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্য বিজেপি দফতরে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শেষ পর্যন্ত যাওয়ার সিদ্ধান্তই নেন বৈশাখীদেবী।
এক্সক্লুসিভ শোভন: মমতাকে তৈরি করতে সব নষ্ট করে জীবন দিয়েছিলাম, আর উনিই রাজনীতি করলেন:
তবে জয়প্রকাশ মজুমদাররা যাই বলে থাকুন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি এ বিষয়ে আবার সম্পূর্ণ ভিন্ন তত্ত্ব সামনে এনেছেন। তাঁর মতে, ‘‘আমি সবাইকে আসতে বলেছি। সবার তো নাম দিই না আমরা। শোভনবাবু মেয়র ছিলেন, বিধায়ক, তাই ওঁর নাম দেওয়া হয়েছে। তবে ওঁর (বৈশাখী) নাম দেওয়া উচিত ছিল’’। এরপরই হেসে দিলীপ বলেন, ‘‘তাছাড়া আমরা জানি যেমন ভাত-ডাল, তেমনই শোভনদা-বৈশাখীদি। আলাদা করে বলার কী আছে!’’ শোভন-বৈশাখীকে ‘ডাল-ভাতের’ সঙ্গে তুলনা করে দিলীপ ঘোষের এদিনের এই মন্তব্য সম্পূর্ণ ঘটনাক্রমে নয়া বিতর্কের মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ‘শোভনদা তখন স্কুটারে ঘুরতেন, আমি সাইকেলে’, স্মৃতিমেদুর দিলীপ
বৈশাখী প্রথমে ক্ষুব্ধ থাকলেও শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার বিজেপি রাজ্য দফতরের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। কিন্তু, এদিন আগা গোড়াই বৈশাখীর 'গোমড়া মুখ' চোখে পড়েছে। এমনকী সাংবাদিক বৈঠকের সময় তাঁর পাশে বসা দিলীপ ঘোষকে ডাল-ভাত প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, 'হ্যাঁ বলেছি'। এরপরই এ প্রসঙ্গে বৈশাখীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'আমি ঠিক বুঝলাম না, দিলীপ দা কী বলতে চেয়েছেন। কে ডাল, আর কে ভাত তা আমি জানি না...আমার স্বতন্ত্র পরিচয় আছে'। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়ে কথা বলার সময় দিলীপ ঘোষ যে দৃশ্যতই অস্বস্তিতে তা স্পষ্ট হয়েছে।
আরও পড়ুন: শোভন-বৈশাখীর আপত্তি সত্ত্বেও দেবশ্রী কি বিজেপিতেই?
ঠিক কী ঘটেছে?
শোভন চট্টোপাধ্যায়কে মঙ্গলবার রাজ্য বিজেপির তরফে সংবর্ধনা দেওয়া হবে, এই মর্মে দুটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরমধ্যে একটি সোমবার রাতে এবং অন্যটি আরেকটা ১২ ঘণ্টা পর অর্থাৎ এদিন। কিন্তু, এই দুটি বিজ্ঞপ্তির কোথাও বৈশাখীর নামোল্লেখ করা হয়নি। অনুষ্ঠানে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। আর এতেই ‘ব্যথিত’ হয়েছেন বৈশাখী। মিল্লি আল আমিন কলেজের অধ্যক্ষার পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া বৈশাখী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, ‘‘শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আমার কাছে নিঃসন্দেহে আনন্দের। কিন্তু আমি দীর্ঘদিন ওয়েবকুপার জেনারেল সেক্রেটারি থাকাকলীন একটা জিনিস অনুভব করেছি, সেটা হল আমায় কেউ কখনও অসম্মান করেননি। কখনও নিজেকে আনওয়ান্টেড মনে হয়নি। ধাক্কা লেগেছে এ ধরনের আমন্ত্রণপত্রে’’। এরপরই বৈশাখী বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি শোভনবাবুকে জানাই। ওঁরও খারাপ লেগেছে। উনি বিষয়টি তদারকি করেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানাই বিষয়টি। এরপরই মনে হয়, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছে। এরপরই রাজ্য নেতৃত্বের তরফে জয়প্রকাশ দা’ (মজুমদার) বলেন, এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল। যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল হয়, সে ক্ষেত্রে ক্ষমা করা আমার কর্তব্য। ইচ্ছাকৃত হলে, এটার কোনও প্রয়োজনীয়তা ছিল না’’। সামগ্রিকভাবে এই ‘স্বীকৃতিহীনতা’ থেকেই ক্ষুব্ধ ও ‘ব্যথিত’ হন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।