দলত্যাগের শুনানিতে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে যোগ দিলেন না কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়। এক মাস সময় চেয়েছেন তিনি। এ দিকে মুকুল রায়ের অসুস্থার কারণ জানিয়ে স্পিকারকে লেখা চিঠি ত্রুটিপূর্ণ বলে দাবি করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিধায়কের দলত্যাগ ইস্যুতে শুনানি দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়ে এবার শুভেন্দু অধিকারীও আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে মঙ্গলবার দাবি করেছেন।
গত ১১ জুন মুকুল রায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু বিজেপির প্রতীকে নির্বাচিত বিধায়ক পদ তিনি ছাড়েননি। ফলে কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়কের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে অভিযোগ তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজের জন্য স্পিকারের কাছে ৬৪ পাতার আবেদন জমা করেছেন তিনি। সেই প্রেক্ষিতেই চলছে শুনানি।
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দলত্যাগের বিষয়ে স্পিকারের কাছে এ দিনই জবাবদিহির কথা ছিল মুকুল রায়ের। কিন্তু, অসুস্থাতার কারণ দেখিয়ে এই উত্তরের জন্য আরও একমাস সময় দাবি করেছেন কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক। জানা গিয়েছে, স্পিকার মুকুল রায়ের আর্জি মেনে নিয়েছেন। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ঘোষণা করে দেন স্পিকার।
শুনানি উপলক্ষে এ দিন অবশ্য স্পিকারের ঘরে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিধায়ক বিধায়ক অম্বিকা রায় সহ তাঁদের আইনজীবীরা। পরে, সাংবাদিকদের শুভেন্দু বলেন, "অসুস্থ বলে দাবি করেছেন মুকুল রায়। তিনি স্পিকারকে চিঠি দিয়ে এক সাম সময় চেয়েছেন। যা মঞ্জুর করেছেন স্পিকার। তবে আমাদের মনে হচ্ছে ওই চিঠি ত্রুটিপূর্ণ। কারণ সেখানে আবেদনকারীর বয়স ও তারিখের উল্লেখ নেই। বিষয়টি আমরা স্পিকারকে জানিয়েছি।"
তৃণমূল জমানায় গত ১০ বছরে একাধিক দলত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। দলত্যাগী বিধায়কদের পদ খারিজের আবেদনও জানানো হয়েছিল। কিন্তু শুনানি হলেও একটির সমাধান হয়নি। এক্ষেত্রে শাসক শিবির ও স্পিকারকে আগেই কাঠগড়ায় তুলেছিলো গেরুয়া শিবির। এ দিনও একই অভিযোগ করেন বিরোধী দলনেতা। শুনানির নামে নানা কারণ দেখিয়ে সময় নষ্ট করা হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। এক্ষেত্রে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করবেন বলে দাবি করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। বলেছেন, "খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকরের কথা সংবিধানের দশম তফশিলে বলা আছে। কিন্তু, বর্তমান অধ্যক্ষের আমলে গত ১০ বছরে দলত্যাগ বিরোধী আইন বিধানসভায় কার্যকর করা হয়নি। গাজোলের বিধায়কের ২৩ বার শুনানি হওয়ার পরেও কোনও নিষ্পত্তি হয়নি। সেই অভিজ্ঞতা ও তথ্য আমাদের হাতে রয়েছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি দ্রুতই কলকাতা হাই কোর্টে যাব।"
এদিকে বিধানসভায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান মুকুল রায়কে করার প্রতিবাদে বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায় আগেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছেন।
আরও পড়ুন- মমতাদির সঙ্গে ৪০ বছরের সম্পর্কের টানেই তৃণমূলে: সুস্মিতা দেব
এইসব বিতরক্রে মাঝেই গত কয়েকদিনে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা বাড়িয়েছেন মুকুল রায়। দিনকয়েক আগেই নিজের বিধানসভা কেন্দ্র কৃষ্ণনগর উত্তরে গিয়ে নিজেকে বিজেপি নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন মুকুল রায়। দাবি করেন, 'উপনির্বাচনে তৃণমূল পর্যুদস্ত হবে।' তাঁর সেই মন্তব্য ভুলবশতই মুখ ফস্কে বেরিয়ে গিয়েছিল বলে পরে দাবি করেন তাঁর ছেলে শুভ্রাংশু। কিন্তু বিতর্কের সেখানেই ইতি হয়নি। গত সপ্তাহেই বিধানসভার পিএসি কমিটির বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন বিধায়ক মুকুল রায়। সেখানে তিনি বলেন, 'বিজেপির টিকিটে উপনির্বাচনে দাঁড়ালে কৃষ্ণনগর উত্তরে আমিই জয়লাভ করব।'
মুকুলের এই মন্তব্য প্রসঙ্গে এদিন শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, "উনি কোথায় রয়েছেন তা সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন