নির্বাচন কমিশনের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ উদ্ধব। আজই শুনানি। শিবসেনার নির্বাচনী ‘তির-ধনুক’ছিনিয়ে নিতে ২ হাজার কোটির ডিল! চাঞ্চল্যকর অভিযোগে এনেছেন শিবসেনা সেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত। একনাথ শিন্ডে দলকেই আসল শিবসেনা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ঠাকরে গোষ্ঠীর আবেদনের শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে। মঙ্গলবার, উদ্ধব গোষ্ঠীর পক্ষে উপস্থিত হয়ে আইনজীবী কপিল সিব্বল, সিজেআই বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি পিএস নরসিমার বেঞ্চের সামনে আবেদনের উপর জরুরি শুনানির আহ্বান জানান। যা সুপ্রিম কোর্ট গতকালই গ্রহণ করেছে। বুধবার বিকাল সাড়ে তিনটেয় এ বিষয়ে শুনানি হবে বলে জানিয়ে শীর্ষ আদালত।
শিন্ডে শিবিরকে শিবসেনার নাম ও প্রতীক দেওয়ার নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছে উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী। ঠাকরে গোষ্ঠীর হয়ে আইনজীবী কপিল সিব্বল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি কৃষ্ণ মুরারি এবং বিচারপতি পিএস নরসিমার বেঞ্চের সামনে বিষয়টি্র উল্লেখ করেছেন। আবেদনে শিবসেনা নাম ও প্রতীক ব্যবহার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করার আবেদন জানিয়েছে উদ্ধব শিবির।
'সুপ্রিম কোর্টই আমাদের শেষ ভরসা'
এর আগে, এই বিতর্কের বিষয়ে, উদ্ধব ঠাকরে অভিযোগ করেছিলেন যে নির্বাচন কমিশন তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করেনি। ঠাকরে বলেন নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাব এবং বিষয়টি নিয়ে শুনানি হবে। সুপ্রিম কোর্টই আমাদের শেষ ভরসা। অন্যদিকে শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত অভিযোগ করেছে শিবসেনার নির্বাচনী প্রতীকের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার চুক্তি হয়েছে, দলীয় প্রতীক ছিনিয়ে নেওয়ার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ ঘিরে উত্তাল রাজনীতি। শিন্ডে শিবিরকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছে শিবসেনার এই নেতা।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, শিবসেনা নাম এবং প্রতীক কোনওটাই ব্যবহার করতে পারবেন না বালাসাহেব পুত্র উদ্ধবের শিবির। এই মুহূর্তে বিদ্রোহী শিবিরের নেতৃত্বে থাকা একনাথ শিণ্ডে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে রয়েছেন। সিংহভাগ বিধায়ক-সাংসদ তাঁর শিবিরে। একপ্রকার পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন এবং বিধানসভা নির্বাচনে একনাথদের আর চিন্তা থাকল না। বর্তমানে বিজেপির সঙ্গে জোটে রয়েছেন তাঁরা।
এতদিন শিবসেনার প্রতীক দেখে যাঁরা সেনাকে ভোট দিতেন, তাঁরাই এবার নির্দ্ধিধায় ভোট দেবেন শিণ্ডেদের। কারণ, শিণ্ডে বাহিনীকেই শিবসেনার নাম আর প্রতীক দিয়েছে কমিশন। এতে উদ্ধবদের শক্তি এমনিতেই অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। মহারাষ্ট্রবাসীকে তাদের ‘জ্বলন্ত মশাল’ প্রতীক চেনাতে আপাতত নাকানিচোবানি খেতে হবে উদ্ধব-আদিত্যদের। এমনটাই ধারণা বিজেপি নেতাদের।
অন্যদিকে, মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা পড়ল উদ্ধবদের উপর। একেই সরকার থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। এবার দলের নাম ও প্রতীক দুই-ই গেল। একসময় বিজেপির সঙ্গে জোট ভেঙে কংগ্রেস-এনসিপিকে নিয়ে মহাবিকাশ আঘাড়ি বানিয়ে মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় এসেছিলেন উদ্ধব। এবার দলের নাম এবং প্রতীক হারালেন দলেরই বিদ্রোহী বিধায়ক একনাথ শিণ্ডের কাছে। যিনি আবার বিজেপির সঙ্গে জোট করে কুর্সিতে বসেছেন। সুতরাং চার বছর পর আবার জুড়ে গেল শিবসেনা-বিজেপি।
শিবসেনা মুখপাত্র এবং সাংসদ সঞ্জয় রাউত অবশ্য বলেছেন, “আমাদের কোনও চিন্তা নেই। জনতা আমাদের সঙ্গে আছেন। আমরা নয়া প্রতীক নিয়ে নতুন করে শুরু করব। জনতার আদালতে এর বিচার হবে।” সেই সঙ্গে তিনি বলেন, শিবসেনার প্রতীকের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার ডিল হয়েছে। দলীয় প্রতীক ছিনিয়ে নেওয়ার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ এনেছেন সঞ্জয় রাউত।
উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠীর নেতা সঞ্জয় রাউত রবিবার মুম্বইয়ে বলেন, ‘শিবসেনার নির্বাচনী প্রতীক (ধনুক এবং তির) কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং এর জন্য এখনও পর্যন্ত দুহাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।
ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ শিন্ডে শিবিরও
উদ্ধব ঠাকরের অভিযোগের ভিত্তিতে চুপ করে বসে নেই শিন্ডেও শিবিরও। শিবসেনা সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত বহাল রাখার জন্য তার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নিচ্ছেন। একদিন আগে, শিন্ডে শিবিরের তরফে গোষ্ঠীর তরফে সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত বহাল রাখার জন্য একটি পিটিশন দাখিল করা হয়।
এই আবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানাতে উদ্ধব গোষ্ঠী সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে এই বিষয়ে কোনও রায় দেওয়ার আগে মহারাষ্ট্র সরকারের যুক্তিও শুনতে হবে শীর্ষ আদালতের।