২৮ বছর আগের রক্তাক্ত স্মৃতিতে ডুব দুধকুমারের

১৯৯২-তে অযোধ্যা থেকে করসেবা করে ফিরে আসার সময় বেধরক মার খাওয়ার স্মৃ্তি এদিন বারে বারে ফিরে ফিরে আসছে দুধকুমারের।

১৯৯২-তে অযোধ্যা থেকে করসেবা করে ফিরে আসার সময় বেধরক মার খাওয়ার স্মৃ্তি এদিন বারে বারে ফিরে ফিরে আসছে দুধকুমারের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

লকডাউনের মাঝে রামের পুজো করতে হবে। যেতে হবে গ্রামে। উপায় কী? পাজামা-পাঞ্জাবী পড়ে ৫-৬ কিলোমিটার রাস্তা গেলেন মেয়ের সাইকেল চালিয়ে। পাছে পথে টহলরত পুলিশের যাতে কোনও সন্দেহ না হয়। অনায়াসে বিনাবাধায় পৌঁছলেন ব্রাহ্মনবহরা গ্রামে। বুধবার যখন পুলিশ অফিসারের ফোন এল, ততক্ষণে রামের পুজো সম্পূর্ণ, হরিনাম সংকীর্তন সহ গ্রাম প্রদক্ষিণ সারা। প্রসাদ বিতরণ করে বাড়ি ফিরছেন করসেবক দুধকুমার মন্ডল। ১৯৯২-তে করসেবা করে ফেরার পথে বর্ধমানে ঘটে যাওয়া সেদিনের ‘ভয়ঙ্কর’ ঘটনা দুধকুমারের স্মৃতিতে এখনও টাটকা।

Advertisment

রাস্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের প্রচারক ছিলেন দুধকুমার। তারপর সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। গ্রামপঞ্চায়েতের সদস্য হলেও বাংলার রাজনীতির যাঁরা খবর রাখেন তাঁদের সঙ্গে পরিচিতি আছে বীরভূমের দুধকুমার মন্ডলের। ১৯৯২-তে অযোধ্যা থেকে করসেবা করে ফিরে আসার সময় বেধরক মার খাওয়ার স্মৃ্তি এদিন বারে বারে ফিরে ফিরে আসছে দুধকুমারের। তাঁর কথায়, "স্রেফ অচৈতন্য হয়ে গিয়েছিলাম। তাই সে যাত্রায় বেঁচে বাড়ি ফিরেছিলাম।"

কী বললেন দুধকুমার

১৯৯২ সালে ৬ ডিসেম্বর ধুন্ধুমার অবস্থা অযোধ্যায়। আমি মন্দিরের সামনেই ছিলাম। করসেবা করে ফিরেছি রাতের ট্রেনে। প্রথমে ৭ ডিসেম্বর গয়া পৌঁছই। সেখানেও উত্তেজনা চরমে। সেখান থেকে ট্রেনে পরের দিন বর্ধমানে ভোরে পৌঁছলাম। ঘটনাটি ঘটে বর্ধমানে তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ডে সিটুর অফিসে। আমার ডান হাত ভাঙা, প্লাস্টার রয়েছে, বাদিকে ঝোলা ব্যাগ। স্টেশনে একুট বাইরে খোঁজখবর করছি কখন ট্রেন আছে, কী অবস্থা স্টেশন থেকে চ্যাংদোলা করে জিটিরোড ধরে সোজা নিয়ে যায় তিনকোনিয়া বাস স্ট্যান্ডের সিটু অফিসে। তারপর আমার ব্যাগে অযোধ্যার একটা শিলা ছিল। সেটা পেতেই আরও খেপে যায়। আমাকে দরজা বন্ধ করে বেধরক মারধর করে। আমি অচৈতন্য হতেই আমাকে সেখানে ফেলে রেখে দরজা বন্ধ করে চলে যায়। সকাল ৯টা নাগাদ আমার জ্ঞান ফেরে। এখানে পড়ে থাকলে মেরে ফেলে দিতে পারে। আমি দেখছি দরজা ভেজানো। একটু ফাঁক করে দেখলাম আশেপাশে কেউ নেই। দরজা খুলে সটান দৌড়তে থাকি। তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বেরিয়েই এক পরিচিতর বাড়িতে অর্ধেক নামানো সাটার দিয়ে ভিরতে ঢুতে যাই। চৌকির তলায় লুকিয়ে পড়ি। বাড়ির লোকেরাও জানত না যে আমি ঢুকেছি। ওরা পিছনে এসে খোঁজ করেছিল। ওরাও না পেয়ে তারপর চলে যায়। পরে সেখান থেকে আর একজনের বাড়িতে যাই। আমাকে একজন অন্য রাস্তা দিয়ে লোকো কলোনী হয়ে স্টেশনে পৌঁছে দেয়। দুপুরের ট্রেনে বীরভূম রওনা দিই। তবে সিউড়ি পৌঁছেও অনেক হ্যাপা পোহাতে হয়েছে। এদিকে ওদিক লুকিয়ে থেকে চার-পাঁচ দিন পরে বাড়িতে পৌঁছেছিলাম।
তার আগে একবার করসেবা করতে গিয়ে ১২ দিন জেল খেটেছেন দুধকুমারবাবু। গাজিয়াবাদ জেলে ছিলেন। তারপর ফের ১৯৯২-তে। এদিন আবেগে ভেসেছেন করসেবক। পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে এবার সাতসকালে কোটাসুর থেকে সাইকেলে করে গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মনবহরা গিয়েছেন। রাম পুজো করে আজ পালন করলেন দিনটা।