জঙ্গলমহল ও পাহাড় থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বেশ কয়েকটি রাজ্য়ে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ায় এই বাহিনী সেখানে নিয়োগ করা হবে। তারপর ফের সেই বাহিনী চলে আসবে ওই দুই জায়গায়। সোমবার নবান্নে একথা জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। একইসঙ্গে এদিন রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় একান্তে বৈঠকও করেছেন। পূর্বাঞ্চলীয় পর্ষদের আলোচনায় উঠে এসেছে মাওবাদী দমন, আর্থ সামাজিক উন্নয়ন-সহ নানা বিষয়।
বিভিন্ন রাজ্যে বিধানসভা ভোট করানোর জন্য নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় বাহিনী তুলে নেওয়া হলেও তা আবার মোতায়েন করা হবে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং রাজ্য সরকারকে আশ্বাস দিয়েছেন। সোমবার নবান্নে পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে সঙ্গে নিয়ে এক যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রাজনাথ বলেন, "রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু ভোটের কাজে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মতো বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাহিনী তুলে নিতে হয়। সেই একই কারণে এ রাজ্য থেকেও বাহিনী প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু তা প্রয়োজনে আবারও মোতায়েন করা হবে।" এর আগে রাজ্যের জঙ্গলমহল ও পাহাড়ে মোতায়েন থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর একটি বড় অংশ প্রত্যাহার করে নেওয়ায়, রাজ্য সরকার একাধিকবার কেন্দ্রের কাছে আপত্তি জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গি মোকাবিলা করতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গ সরকার, পরামর্শ দিতে চান সিদ্ধার্থ সিং
এদিকে পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠকে ৩০টি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে ২০টি বিষয়ে সমাধান সূত্র মিলেছে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন। আন্ত:রাজ্য কাউন্সিল সচিবালয়ের সচিব আর বুহরিল জানিয়েছেন, বৈঠকে মাওবাদী মোকাবিলা, পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির আর্থসামাজিক উন্নয়ন, রেলপথ তৈরি, পণ্য পরিবহণের জন্য পৃথক করিডর নির্মাণ, পশ্চিমবঙ্গ বিহার এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি হতে চলা ফুলবাড়ী বাঁধের অগ্রগতি, তফশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত পড়ুয়াদের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কেন্দ্রীয় বৃত্তির জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দ প্রদান, রাজ্যের পুলিশ বাহিনীর আধুনিকীকরণ, কলকাতা ও হাজিপুরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফার্মেসিউটিক্যাল এডুকেশন এন্ড রিসার্চের জন্য জমি বরাদ্দ, মা ও শিশু র স্বাস্থ্য রক্ষায় গৃহীত প্রকল্পের মতো বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সচিব বলেন, "দেশের স্বার্থকে সামনে রেখে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের ভিত্তিতে সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এই বৈঠকে আলোচনা হয়।" বৈঠকে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়, ওড়িশার অর্থমন্ত্রী শশীভূষন বেহেরা, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস, বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরণ রিজিজু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠকের শেষে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে রাজনাথ তাঁর সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ একান্তে বৈঠক করেন। রাজ্যের স্বার্থে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গেছে। তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, শুধু প্রশাসনিক আলোচনা হয়েছে এমন মনে করার কোনও কারণ নেই। বস্তুত, বিজেপির যে কজন কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন, তাঁদের মধ্য়ে রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সখ্য়তা একটু বেশি। সেক্ষেত্রে রাজৈনতিক আলোচনা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।