শেষ পর্যন্ত ভোটের দিন ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন। ভবানীপুর কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। গোটা দেশে একমাক্র এই কেন্দ্রেই উপনির্বাচনের ছাড়পত্র দিন কমিশন। পাশাপাশি ওই দিনই সামশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরেও ভোট হবে। ভোটের গণনা ও ফলাফল প্রকাশের দিন স্থির করা হয়েছে আগামী ৩রা অক্টোবর।
কমিশনের তরফে বলা হয়েছে যে কড়া কোভিডবিধি মেনেই এই ভোট হবে। মনোনয়নের সময় কোনও মিছিল হবে না। ভোট প্রচারেও কড়া নিয়ন্ত্রণ থাকবে। বাড়ি বাড়ি প্রচারে মাত্র ৫ জন যেতে পারবেন। স্ট্রিট কর্নার মিটিং করা যাবে মাত্র ৫০ জনকে নিয়ে। এছাড়া ভোটের ৭২ ঘন্টা আগে প্রচারকাজ শেষ করতে হবে। ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হবে ৬ সেপ্টেম্বর। মনোনয়ন জমার শেষ দিন ১৩ সেপ্টেম্বর ও স্ক্রুটিনির শেষ দিন ১৪ সেপ্টেম্বর। প্রার্থীপদ প্রত্যাহের শেষ দিন ১৬ তারিখ। কমিশনের নির্দেশ, ইন্ডোর প্রচারে ২০০-র বেশি জমায়েত করা যাবে না। এছাড়া ভোট কর্মীদের টিকার ২টি ডোজ নেওয়া বাধ্যতামূলক। নির্বাচনী প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে ৫ অক্টোবরের মধ্যে।
রাজ্যের ৫ কেন্দ্রে উপনির্বাচন ও ২ কেন্দ্রে বিধানসভা নির্বাচন থমকে ছিল। কবে এই ভোট হবে তা নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজা চলছিল। তৃণমূলের দাবি ছিল, বাংলায় করোনা সংক্রমণের হার নিম্নমুখী ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ফলে বিধি মেনে ভোট করা যেতেই পারে। দিল্লিতে কমিশন দফতরে গিয়েও তৃণমূলের সংসদীয় প্রতিনিধি দল বাংলায় ভোটের জন্য দরবার করেছিলেন। অন্যদিকে, কোভিড পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে এখনই রাজ্যের উপনির্বাচনের বিরোধিতা করছিল বিরোধী দল বিজেপি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভবানীপুরে উপনির্বাচন ও সামসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করল জাতীয় নির্বাচন কমিশন।
কমিশনের এই ঘোষণায় স্বাভাবিকভাবেই স্বস্তিতে তৃণমূল। কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। বিজেপি-র প্রতিবাদ সত্ত্বেও দেশের মধ্যে একমাত্র ভবানীপুরেই উপনির্বাচন হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতির জন্যই এই পদক্ষেপ। এপ্রসঙ্গে বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেছেন, "কমিশন স্বতন্ত্র সংস্থা। তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে মান্যতা দিতেই হবে। প্রমাণ হল যে, কমিশন বিজেপির কথায় চলে না।"
২ মে ফলাফল প্রকাশের পর ৫ মে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংবিধানিক নিয়ম মেনে ৫ নভেম্বরের মধ্যে তাঁকে বিধায়ক হয়ে আসতে হবে। কিন্তু রাজ্যে উপনির্বাচন না হলে ৫ নভেম্বরের পর কীভাবে মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকবেন মমতা? তা নিয়ে জোর জল্পনা ছিল। তার মধ্যেই ভবানীপুরের ভোটগ্রহণের দিন ঘোষণা করে দিল নির্বাচন কমিশন।
অন্যদিকে, মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর ও সামশেরগঞ্জের বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের অকাল প্রয়াণ ঘটেছিল। যার জেরে এই দুই আসনেও ভোট হয়নি। কমিশনের নির্দেশ, একই দিনে ওই দুই নির্বাচনের হবে। ফল ঘোষণাও হবে একই দিনে।
রাজ্যে উপনির্বাচন বাকি রয়েছে খড়দহ, গোসাবা, শান্তিপুর ও দিনহাটায়। ২ মে নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগেই করোনা সংক্রমণে মৃত্যু হয় খড়দহের তৃণমূল প্রার্থী কাজল সিনহার। এছাড়াও প্রয়াণ ঘটে গোসাবার তৃণমূল বিধায়ক জয়ন্ত নস্করেরও। পাশাপাশি এবার বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়ে জিতেছিলেন দুই বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক ও জগন্নাথ সরকার। দিনহাটা ও শান্তিপুর কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু, সাংসদ পদে থাকবেন বলে বিধানসভা নির্বাচনে জিতেও পজদত্যাগ করেন তাঁরা। ফলে ওই দুই কেন্দ্রেও উপনির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু হাইপ্রোফাইল ভবানীপুর ছাড়া এই চার কেন্দ্রে কবে উপনির্বাচনের হবে তা কমিশন জানায়নি।
উল্লেখ্য, সবার নজরে ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচন। কারণ এই কেন্দ্র থেকেই উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একুশের ভোটে এই কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু, নন্দীগ্রামে মমতার পরাজয় হলে তাঁকে বিধায়ক করার জন্য ওই কেন্দ্র থেকে পদত্যাগ করেন শোভনবাবু। খড়দহ থেকে উপনির্বাচনে প্রার্থী হবেন রাজ্যেরই এই মন্ত্রী। দেখার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিজেপি কাকে প্রার্থী করে? আগে শোভনদেববাবুর বিরুদ্ধে ভবানীপুর থেকে পদ্ম শিবির প্রার্থী করেছিল রুদ্রনীল ঘোষকে। পাশাপাশি লক্ষ্যণীয় যে, ভবানীপুরে বাম-কংগ্রেস সহ সংযুক্ত মোর্চার জোট বজায় থাকার বিষয়টিও।
Read in English
ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেসবাংলাএখন টেলিগ্রামে, পড়তেথাকুন