সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া কিছু আইনের সংস্কার দরকার কারণ সুপ্রিম কোর্টের সেই নির্দেশ সবাইকে মেনে চলতে হবে। এমনটাই মনে করেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ।
কড়া ভাষায় নির্বাচন কমিশনকে তুলোধনা করে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী কমিশন। অফিসারদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হওয়া দরকার। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না জানালে ২ মে ভোট গণনা বন্ধ করে দেব’। তাঁর সেই রায়ে চিকিৎসক মহল থেকে আম জনতা সকলেই আশার আলো দেখেছিলেন। মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি হিসাবে ২০২১ সালে বিচারপতি ব্যানার্জির পর্যবেক্ষণ ভারত জুড়ে তোলপাড় ফেলে। তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনের সময় কোভিড প্রোটোকল লঙ্ঘনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে এক হাত নিয়েছিলেন তিনি।
মেঘালয় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসাবে অবসর নেওয়ার কয়েক দিন পরে বিচারপতি বন্দোপাধ্যায় দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছিলেন, “একজন বিচারক অবশ্যই সংযত হওয়া উচিত। তবে নির্বাচন কমিশন এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার অনেক বড় দায়িত্ব রয়েছে। সুতরাং, কোনভাবে কমিশন যদি তার দায়িত্ব ভুলে যায়, তা হোক না খুব সামান্য মাত্রায়, তাহলেও তা গণতন্ত্রের জন্য ভয়ঙ্কর পরিণতি ঘটাতে পারে, "। মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে ১১ মাস বহাল থাকার পর, বিচারপতি ব্যানার্জিকে মেঘালয় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে বদলি করা হয়। গত ১ লা নভেম্বর তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন Premium: বদ্ধ সুড়ঙ্গে প্রায় ১০ দিন! কোন মিরাকলে এখনও বেঁচে আটকে থাকা ৪১ শ্রমিক?
বিচারপতি বন্দোপাধ্যায় সেদিনের সেই মামলা প্রসঙ্গে বলেন, “কেসটি কিছুক্ষণের জন্য (মাদ্রাজ হাইকোর্টে) শুনানি হচ্ছিল এবং আমি অনুভব করেছি যে তাতে কিছু বিভ্রান্তি ছিল তাই এই পর্যবেক্ষণ। সমাবেশে ভিড় করা এবং কোভিড প্রোটোকল অনুসরণ না করা অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়। যখন পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন আট ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তামিলনাড়ুতে কেন এটি একক পর্বে অনুষ্ঠিত হয়েছিল? আপনাকে সেই প্রেক্ষাপটে এটি দেখতে হবে এবং কেবল দুটি বাক্য বেছে নেওয়া উচিত নয়,”।
কমিশন মাদ্রাজ হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল, এগুলিকে "অনাকাঙ্ক্ষিত, স্পষ্টভাবে অপমানজনক এবং অবমাননাকর" বলে অভিহিত করেছিল। যদিও শীর্ষ আদালত পর্যবেক্ষণটি অপসারণ করতে বা মিডিয়াকে এই নিয়ে রিপোর্ট করতে বাধা দিতে অস্বীকার করেছিল, বিচারপতি ব্যানার্জির পর্যবেক্ষণগুলি আইনী মহলে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল যখন তাকে হঠাৎ মেঘালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছিল, এটি ছিল তুলনামূলক ভাবে একটি ছোট হাইকোর্ট। তাঁর অস্বাভাবিক বদলির কারণ জানেন কিনা জানতে চাইলে বিচারপতি ব্যানার্জি বলেন যে তিনি এই বদলি নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন ছিলেন না”।
তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত যে আমার বদলির জন্য যুক্তিযুক্ত কারণ ছিল কিন্তু আমি এটি সম্পর্কে সচেতন নই। আমি একটি ইমেলে বদলির নির্দেশ পেয়েছিলাম। আমি তাতে সম্মতি দিয়েছিলাম। জাস্টিস বন্দোপাধ্যায় বলেন, “ আপনি একবার বিচারপতি হয়ে গেলে, আপনার কোনো নির্দিষ্ট পদে থাকার কোনোপ্রকার উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে না। তাই বদলিতে আমার সম্মতি না দেওয়ার প্রশ্নই আসে না,” বিচারপতি বন্দোপাধ্যায় বলেছিলেন যে ইমেলটি কেবলমাত্র ইঙ্গিত দিয়েছে যে “স্থানান্তর প্রক্রিয়া ছিল ভাল প্রশাসনের স্বার্থে"।
প্রায় দুই দশক ধরে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে আসীন ছিলেন তিনি। জাস্টিস বন্দোপাধ্যায় বলেন, উচ্চ বিচার বিভাগে দুর্নীতি প্রশ্ন সর্বদা তাকে চিন্তিত করে। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি একটি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ কিন্তু প্রমাণ সংগ্রহ করা কঠিন। এসব কর্মকাণ্ড দিবালোকে করা হয় না তবে দুর্নীতির কিছু প্রমাণ সংগ্রহ করা সম্ভব। একজন আপসকারী বিচারক সব রাজনৈতিক দলের জন্য সুবিধাজনক। এটি এমন একটি দিক যা সিস্টেমের প্রতি আস্থা নষ্ট করে এবং এর সঙ্গে মোকাবিলা করা দরকার”।