/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/05/Subrata-Mukherjee-Feature-1.jpg)
সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এক্সপ্রেস ফটো: শশী ঘোষ।
ষষ্ঠ দফা লোকসভা নির্বাচনেই শুধু নয়, এবারে রাজ্যের ৪২ টি আসনের মধ্যে অন্যতম নজরকাড়া কেন্দ্র বাঁকুড়া। এই আসনে এবার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ২০০৯ সালে কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে এই রাঙামাটির দেশে দ্বিতীয় হয়েই থামতে হয়েছিল একদা কলকাতার মেয়রকে। এরপর কংসাবতী ও দ্বারকেশ্বর দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। রাজ্যের সঙ্গে বদলে গিয়েছে বাঁকুড়ার রাজনৈতিক চিত্রও। সেবার সুব্রতবাবু লড়াই করেছিলেন সিপিএমের বাসুদেব আচারিয়ার বিরুদ্ধে। বাসুদেববাবুকে ২০১৪ সালে হারিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেন।
এবার সেই কেন্দ্রে ঘসফুল পতাকা হাতে লড়তে নেমেছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কিন্তু জঙ্গলমহল এলাকায় নাকি রীতিমতো সংগঠন তৈরি করেছে গেরুয়া বাহিনী। তাই কি এবার সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি? এমন অনেক প্রশ্নই উঠে আসছে। সেসব প্রশ্ন নিয়েই বহু নির্বাচনী লড়াইয়ের সৈনিক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মুখোমুখি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা।
২০০৯-এর নির্বাচন মনে পড়ছে?
এখানকার পালস আগে ফিল করেছি। আমি যে সময়ে ভোট পেয়েছিলাম, তখন কংগ্রেসের হাল ঠিক ছিল না। একদম আমি একাই সেই ভোট পেয়েছিলাম। তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে মিটিং করেন নি। কাশীনাথ মিশ্র ছাড়া আমার পাশে কেউ ছিলেন না। তা সত্ত্বেও বাম আমলে লড়াই দিয়েছিলাম। সম্মানের সঙ্গে দ্বিতীয় হয়েছিলাম। ঘুরে ঘুরে নির্বাচনী প্রচার করে ফল মিলেছিল। কোনও কাজ না করেই 'মিথ' ছিলেন বাসুদেব আচারিয়া। হয় তো অন্য প্রার্থী হলে সেবারই জয় পেতাম।
এবার আপনার অ্যাডভান্টেজ?
আমার প্লাস পয়েন্ট আমার নামের সঙ্গে রাজনীতি ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। এই কেন্দ্রের অন্যান্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সেটা নেই। সেই স্তর অবধি নেই। আমি ৪৯ বছরের এমএলএ। স্বভাবতই একজন মানুষের মনে এই ভাবনা আসবেই যে কে বেশি কাজ করতে পারে।
বিরোধী প্রার্থী নিয়ে কী ভাবছেন?
আমার বিপরীতে একজন তো রাজনীতি করতেন, কিন্তু ছেড়ে দিয়েছেন। এতটাই ছেড়ে দিয়েছেন যে, নিজের এলাকায় ১৪ হাজার ভোটে হেরে গিয়েছেন কলকাতার একটি ছেলের কাছে। কোন তত্ত্ব দিয়ে তাঁকে বিচার করবেন? আর অন্য একজন জীবনে কখনও রাজনীতিই করেন নি। তিনি ডাক্তার।
শুধুই কি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলে আপনি এগিয়ে?
তা কেন, কাজ দিয়ে বিচার করলেও আমিই এগিয়ে থাকব। আমার কাজ যাঁকে স্পর্শ করবে না, তাঁর আমাকে ভোট দিতে হবে না। আমার জল খাবেন না, আমার রাস্তায় হাঁটবেন না। আমার জল ধরো জল ভরো প্রকল্পে নামবেন না। আমার ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করবে না, স্বনির্ভর প্রকল্পে কাজ করবেন না। মরিয়া হয়ে এখানে ১৩ টা পাইলট প্রকল্পের কাজ করেছি। নির্মলগ্রামও হয়ে গিয়েছে। কোথায় আমাকে বাদ দেবে!
আপনি ২০০৯ সালে এখানে দাঁড়িয়েছিলেন। তারপর তো জানতেন না এখানে নির্বাচনে ফের লড়াই করবেন। তবু কাজ করে গিয়েছেন। কেন?
প্রথমত, এখানকার জলে ফ্লোরাইড আছে। তাই শুদ্ধ পানীয় জল দিতে উদ্যোগ নিই। পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে এই বাঁকুড়া, পুরুলিয়া আদর্শ জায়গা। তাই বাঁকুড়াকে বেছে নিয়েছিলাম।
তাছাড়া, মানুষের জন্য কাজ করায় আমি বিশ্বাসী। ২০০৯-এর পরও নিয়মিত বাঁকুড়া এসেছি শুধু মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ঘটাতে। জলসমস্যার সমাধান ছিল আমার অন্যতম উদ্দেশ্য। এর পাশাপাশি অন্যান্য প্রকল্প তো রয়েছেই। এককথায় গ্রামীণ জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটানোই আমার উদ্দেশ্য। ভোট আসবে ভোট যাবে, মানুষের পাশে থাকাই তো বড় ব্যাপার। কোনও সময় বলি নি জল দিয়েছি, মালা পরাও। কাজ করতে চাইলে কাজ করা যায়। কাজ করতে ভালবাসি।
বিজেপির তালিকায় জঙ্গলমহলের এই আসনটি ধরা রয়েছে। কী বলবেন?
বিজেপি কি কোনদিন আমার মত প্রতিটা ব্লক, প্রতিটা অঞ্চল ঘুরেছে? ওদের গিয়ে জিজ্ঞেস করুন। এক একদিন কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা ধরে ঘুরছি। সারাক্ষণ ঠায় রোদে দাঁড়িয়ে থেকেছি। মাথায় ছাতার কোনও ব্যাপারই নেই। ওই ধরনের প্রচার করে কোনও লাভ নেই।
বাঁকুড়ার এই কড়া রোদ আর তীব্র গরমে অনায়াসে কী ভাবে প্রচার করছেন?
আমি প্রতিদিন সকাল আটটা-সাড়ে আটটায় প্রচারে বেরিয়ে পড়ছি। রোজই নিজের ঘরে ঢুকতে রাত সাড়ে দশটা-এগারোটা বেজে যায়। ১৩ মার্চ থেকে লাগাতার প্রচারে রয়েছি। প্রতিটি ব্লকে দলীয় সাংগঠনিক বৈঠক করেছি, যা প্রায় সভায় পরিণত হয়ে গিয়েছে। গ্রামে গ্রামে রোড শো করেছি।
আদিবাসীদের একটা অংশের কি বিজেপির প্রতি ঝোঁক আছে?
আগে একটা একটু ঝোঁক হয়েছিল। সেটা পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে। কিন্তু এখন আর তেমন পরিস্থিতি নেই। আদিবাসীরা না এলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাও হয় না।
বাঁকুড়ায় জলের সমস্যা তো বরাবরই তীব্র...
বাঁকুড়ার পুকুরে জল থাকে না, একটু কাটলেই পাথর মিলবে। জলের দেখা মিললেই পাথরের ফাঁক দিয়ে নিচে চোঁ করে চলে যাবে। এখানে জলের সমস্যা তীব্র। বাঁকুড়া এবং কিছুটা পুরুলিয়া, অন্য কোনও জেলায় জলের এত সমস্যা নেই। সেই ব্যাপারটার সমাধান করতে চেয়েছি। গ্রামে গ্রামে জলের পাইপ লাইন চলে গিয়েছে। পঞ্চায়েতগুলোকে বলা হয়েছে, সম্ভব হলে অল্প পয়সার বিনিময়ে বাড়ি বাড়িও জল সরবরাহ করতে পারে।
এমন জল প্রকল্প কীভাবে করলেন?
জলের জন্য বিদেশ থেকে টাকা যোগাড় করেছি। রাজ্যের ৮৩টি ব্লকের জলে আর্সেনিক আছে। আর্সেনিক ক্যান্সারের কারণ। আর্সেনিকযুক্ত জল পান করলে মায়েদেরও বিপদ। সেক্ষেত্রে মাতৃদুগ্ধ থেকে ক্যান্সার হতে পারে। তাই সতর্কতা প্রয়োজন। বাঁকুড়ার জলে ফ্লোরাইড আছে। এই জলের ফলে ১০ বছর বয়সেই দাঁত পড়ে যাবে। যেখানে আর্সেনিক এখন নেই, পরে সেখানেও এগিয়ে যায়। আজ নেই, কিন্তু অন্য জায়গা থেকে আসবে না বলা যায় না। জল আর্সেনিক মুক্ত করাই আমার লক্ষ্য। কংসাবতী, বড়জোড়ায় জল প্রকল্পের কাজ হয়ে গিয়েছে। মেজিয়া সংলগ্ন একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। গ্রামীণ এলাকায় ৬০০ কিলোমিটার রাস্তাও হয়েছে।
শিল্পের কোনও সম্ভাবনা আছে বাঁকুড়ায়?
অবশ্যই আছে। শিল্প স্থাপনের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে এই জেলায়। শিল্পের পর্যাপ্ত জমি রয়েছে। এখানে বিদ্যুতের কোনও অভাব নেই। রেল ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বন্দর নেই। ব্লুপ্রিন্ট করা আছে শিল্পের।
জয় নিয়ে কতটা নিশ্চিত আপনি?
বাঁকুড়া শহরের লোক রাজনৈতিকভাবে খুবই সচেতন। ৪৯ বছর ধরে আমি এমএলএ। এটা অন্য কোনো প্রার্থীর আছে? এখানে সিপিএমের কিছু হওয়ার নেই। সব ফ্লোটিং ভোট, আমিই পাব। কট্টর সিপিএম-এর ভোট ওদের প্রার্থী পাবে। তবে কংগ্রেসের একশো শতাংশ ভোট আমিই পাব।