লোকসভা নির্বাচনের আগে শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের বর্ধিত কোর কমিটির বৈঠকে দলের পুরোনো সদস্যদের ফিরিয়ে আনার বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার হুঁশিয়ারি, "ব্ল্যাকমেইল করবেন না। দুজন যাবে, ১০ জন আসবে। যাঁরা দূরে সরে গিয়েছেন তাঁদের ডেকে আনুন। সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করুন।" ৪২টি লোকসভা আসনে ৪২-এই জয় চান, তা ফের এদিন নেতা-কর্মীদের জানিয়ে দেন দলনেত্রী।
এদিন একেবারে চাঁচাছোলা ভাষায় বক্তব্য শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে তিনি বলেন, "চাওয়া বন্ধ করুন, দেওয়া শুরু করুন। অনেক মানুষ আছেন, ভুল বুঝে দূরে সরে গিয়েছেন। তাঁদের ডেকে নিন। নাহলে আমি ডেকে নেব। না পারলে আমাকে তাঁরা চিঠি দিন, আমি দেখব কার কত ক্ষমতা। দেখি কে কত বড় নেতা হয়ে গেছেন। যাঁরা দুর্দিনে তৃণমূলের সঙ্গে ছিলেন, তাঁদের টেনে আনবেন। এখন তাঁরা মাথা নিচু করে বসে আছেন। আর নতুন যাঁরা ভাল কাজ করছেন, তাঁদের সম্মানের সঙ্গে কাজ করতে দিন। শুধু আমি করব আর আমি ভোটে দাঁড়াব, এটা হতে পারে না। ঘরটাকে বড় করতে হবে, ছোট করলে চলে না। আপনি নিচ্ছেন না তাই অন্য দল গুন্ডামি করছে।"
আরও পড়ুন: লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলে দায়িত্ব বণ্টন করলেন মমতা
অন্যান্য ক্ষেত্রেও লড়াইয়ের আভাস দিয়েছেন মমতা। "আরএসএসের লোক এলাকায় বসে আছে। লোকে অস্ত্র নিয়ে ঢুকছে, টাকা নিয়ে ঢুকছে। আপনারা পুলিশকে খবর দিন। আপনাদের দায়িত্ব নিতে হবে। সেক্ষেত্রে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।" ঝাড়খন্ড থেকে লোক আসছে, এমনটা দাবি করে সতর্ক থাকতে বলেছেন তিনি।
মমতার হুঁশিয়ারি, "দিদি যদি সকাল থেকে রাত অবধি এত খাটতে পারে, তাহলে আপনাকেও পারতে হবে। কাজ না করতে পারলে আমি চেঞ্জ করে দেব। দুটো যাবে, দশটা নিয়ে আসব। এটা উত্তর-পূর্ব ভারত নয়, ব্ল্যাকমেইলিং চলবে না। দল নিয়ে ভাবুন। টাকা নিলেও দিদি খবর পাবে। চক্রান্ত হলেও দিদি খবর পাবে। আমি বড় নেতা, ও বড় নেতা, এসব চলবে না। একটাই ছাতা, তৃণমূল কংগ্রেস। এলাকায় একটাই দলীয় কার্যালয় থাকবে। কোনও ভাগাভাগি হবে না।" নেত্রীর পরামর্শ, "পায়ে হেঁটে এলাকায় ঘুরুন। শরীর ভাল হবে। গরিব মানুষের সঙ্গে কথা বলুন। জিজ্ঞেস করুন, কেমন আছেন। খাটিয়াতে বসুন।" বামেদের মধ্যে থেকেও "ভাল লোককে" দলে টানার কথা বলেছেন তৃণমূল নেত্রী।
আরও পড়ুন: অন্ধ্রে সিবিআই প্রবেশ নিষিদ্ধ করলেন চন্দ্রবাবু নাইডু, পরোক্ষে সমর্থন মমতার
এদিন দলের বিধায়কদের কড়া ধমকও দেন মমতা। তিনি বলেন, "যেসব বিধায়ক নিয়মিত বিধানসভায় আসেন না, তাঁদের মাইনে বন্ধ করে দেব। ইচ্ছে হলে গেলাম, ইচ্ছে না হলে গেলাম না, তা হবে না। আমি কখন কখনও দেখি মাত্র কুড়িজন বিধায়ক বসে রয়েছেন। আমি সবটাই করি। আর কত করব? কয়েকজন মন্ত্রী কাজ করেন। কেউ কেউ কিছু করেন না। দলও করতে হবে, কাজও করতে হবে।" বিশেষ করে নদীয়া জেলা নেতৃত্বকে জরুরী ভিত্তিতে মিটিং করার নির্দেশ দেন মমতা।
বিজেপির আসন্ন রথযাত্রাকে "রাবণ যাত্রা" বলে কটাক্ষ করেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি ঘোষণা করেন, "রথের পরের দিনই আমরা সেখানে পবিত্র যাত্রা করব। এভাবেই আমরা পবিত্র করব।"
নির্বাচনের ইভিএম নিয়ে তাঁর নির্দেশ, তিনবার করেই ইভিএম চেক করতে হবে। "ভোটের সময় ৪০ শতাংশ ইভিএম খারাপ করে দেওয়া হয়" বলে মন্তব্য করেন তিনি। ভোটার তালিকা সংশোধনের ক্ষেত্রে ব্লক সভাপতিদের বিধায়কদের সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা।