বিজেপি সাংসদ অভিনেতা-অভিনেত্রীর দ্বৈরথ কী নাটকীয়!

বিজেপির দুই সাংসদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য উপভোগ করলেন শ্রোতারা। শত্রুঘ্নর বিপ্লব আদৌ নাটক কী না তা সময়ই উত্তর দিয়ে দেবে। তবে দুজনের বক্তব্য একইরকম হলে অনুষ্ঠানটির কোনও আকর্ষণই থাকত না।

বিজেপির দুই সাংসদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য উপভোগ করলেন শ্রোতারা। শত্রুঘ্নর বিপ্লব আদৌ নাটক কী না তা সময়ই উত্তর দিয়ে দেবে। তবে দুজনের বক্তব্য একইরকম হলে অনুষ্ঠানটির কোনও আকর্ষণই থাকত না।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

শত্রুঘ্ন সিনহার বক্তব্যের জবাবে রে-রে করে উঠলেন রূপা। (ফোটো- শুভম দত্ত)

শহরের এক পাঁচতারা হোটেলে বিজেপির দুই সাংসদ এক আলোচনায় পাশাপাশি বসলেন। দুজনই আবার অভিনয় জগতের। পাশাপাশি বসা সত্ত্বেও খণ্ডযুদ্ধ বাঁধালেন প্রতিটি বিষয়ে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসন নিয়ে রীতিমত ক্ষোভপ্রকাশ করলেন লোকসভার সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা। ওদিকে বিহারী বাবুর প্রতিটি বাউন্সার সোজা ব্যাটে সামলালেন রাজ্য সভার সাংসদ রূপা গাঙ্গুলি। কিন্তু শেষমেষ এত বিদ্রোহ সত্ত্বেও শত্রুঘ্ন সিনহা জানিয়ে দিতে ভুললেন না, যে তিনি ফেডারেল ফ্রন্টের সঙ্গে নেই। তাহলে তো কয়েক বছর ধরে চলা তাঁর অন্তর্দলীয় বিপ্লবই এখন প্রশ্নচিহ্নের মুখে!

Advertisment

মঙ্গলবার কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলে 'ইন্ডিয়ান ইকোনমি অ্যান্ড ইটস চ্যালেঞ্জেস' শীর্ষক আলোচনায় বক্তা হিসাবে হাজির হয়েছিলেন বিজেপির ওই দুই সাংসদ। বক্তব্যের প্রথম থেকেই তেড়েফুঁড়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে শুরু করেন শত্রুঘ্ন সিনহা। পাটনা সাহিবের এই সাংসদ মোদীর 'মন কী বাত' নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। "মন কি বাত নহি কহ সকতে..." দিয়ে বাক্য বিপ্লব শুরু করেন শ্ত্রুঘ্ন। রাজনীতিতে সদ্য প্রয়াত অটল বিহারী বাজপেয়ী যে তাঁর গুরু, তা-ও মনে করিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, "অটলজি আদবানীর কাছে আমাকে সঁপে দিয়েছিলেন। অটলজি চলে যাওয়ায় অনাথ হয়ে গিয়েছি।"

আরও পড়ুন: ২০১৯ লোকসভা: জঙ্গলমহলে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রায় জোর বিশ্ব হিন্দু পরিষদের

এরপর মোদী জমানা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন বিহারী বাবু। তাঁর মতে, "নোটবন্দিতে বেকারত্ব বেড়ে গিয়েছে। গরিবের জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছে। পাহাড় ভেঙে পড়েছে। কাগজ মাটি হয়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছিলাম, খুব খারাপ হয়েছে নোটবন্দি। মানুষ মারা পর্যন্ত গিয়েছেন। নোটবন্দির ধাক্কা সামলানোর আগেই নিয়ে আসা হয়েছে জিএসটি। এটার দ্বারা সব জিনিসে কর বসানো হচ্ছে। জিএসটি কে জানে। ডিজিট্যাল ব্যবহার করতে কতটা সক্ষম দেশবাসী? এসব খেয়াল না করে চালু করা উচিত হয়নি।"

Advertisment

publive-image মোদী জমানা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন বিহারী বাবু। (ফোটো- শুভম দত্ত)

দেশের গণতন্ত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলে তুলতে ছাড়েননি তিনি। অভিনেতা সাংসদ বলেন, "গণতন্ত্র বজায় রয়েছে বলব না। শুধু গোরক্ষা বা গণপিটুনি নয়। আরও অনেক ধরনের ঘটনা ঘটেছে। গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশে একসঙ্গে নির্বাচন হতে পারত। কিন্তু তা হয় নি। গণতন্ত্রের কী হাল সেটা সুপ্রিম কোর্টের চার বিচারপতির সাংবাদিক বৈঠক প্রমান করে দিয়েছে। নির্বাচন বলে সংসদ বন্ধ থাকে।" তাঁর মতে, নিজের দলের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকারই গণতন্ত্র। নভজ্যোত সিং সিধু যে পাকিস্তানের সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে সে দেশে গিয়েছেন, এটা কোনও ভুল নয় বলেই তাঁর দাবি। এবং এনআরসি নিয়ে বললেন, “কোনও ভারতীয়র নাম যেন না বাদ যায়।’’

শত্রুঘ্ন সিনহার বক্তব্যের জবাবে রে-রে করে উঠলেন রূপা। শুরুতেই রূপার কটাক্ষ, মিত্র না বলে শত্রু বললে ভাল লাগবে। এবার রূপা সাফাই গাইতে শুরু করলেন মোদী সরকারের। তিনি বলেন, “চার বছরে নরেন্দ্র মোদি কোনও দুর্নীতি করেনি। দিল্লি নোংরা হয়ে গিয়েছিল। তা সাফ করে এখন পুরো স্বচ্ছ। আচ্ছে দিন আনার চেষ্টা করে চলেছেন মোদী। জনগণ এখন কথোপকথন করতে পারছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। আগে এসব কেউ দেখেনি। এখন ফোনে সার্ভিস নিচ্ছে বলে রেলে লম্বা লাইন আর দেখা যায় না। এটাও আচ্ছা দিন।"

publive-image শেষ মুহূর্তে চমক দিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। (ফোটো- শুভম দত্ত)

আরও পড়ুন: দলবদলে তৃণমূল কংগ্রেসকে টেক্কা দেওয়ার হুঁশিয়ারি বিজেপির

তবে রূপাও নোটবন্দিতে অসুবিধার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর মতে, “শুধু যেটুকু সমস্যা হয়েছে, তা নোটবন্দি নিয়ে। অনেকে সমস্যায় পড়েছেন ঠিকই, তবে হঠাৎ না করলে তা সম্ভব হত না। এটা অনেক কষ্ট দিলেও। মানুষের বিশ্বাস ছিল। পয়সা কাগজ হয়নি, সবার টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে। এরপর নির্বাচনে জয় হয়েছে। জিএসটি আনেক আগে চালু করার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। সেজন্য কোনও জিনিস কোনও না কোনও দিন চালু করতে হবে। এর জন্য জিএসটি কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। জিএসটি সহজ সরল করা হয়েছে। এত কিছু পাওয়া সত্ত্বেও অভিযোগের শেষ নেই।"

তাঁর অভিযোগ, উন্নয়ন আটকাতে রাজ্য সভায় বিল পাস করা যাচ্ছে না। বিল আটকে দিলে উন্নয়ন হবে না। সিধু নিয়ে বিহারী বাবুর সঙ্গে একমত নন রূপা। তাঁর মতে, "প্রধানমন্ত্রী যা করতে পারেন, তা অন্য কেউ করতে পারেন না।

দুই সাংসদের বিতর্ক শুনলেন সবাই। কিন্তু শেষ মুহূর্তে চমক দিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। এত কিছু বলার পর জানিয়ে দিলেন, “আমি ফেডারেল ফ্রন্টের অংশ নই।’’ রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, তাহলে তাঁর বিদ্রোহ কি দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদন সাপেক্ষ? ২০১৯ লোকসভা ভোটের আগে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।

bjp