দেশজুড়ে চলা কৃষক আন্দোলনের চাপে কেন্দ্রীয় সরকার বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে। তারপরও একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রত্যাহার করা ওই সব বিতর্কিত কৃষি আইনের হয়ে গলা ফাটিয়েছেন। এমনকী, ফের ওই সব আইন চালুর সম্ভাবনারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সেই সব মন্তব্যের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে গোটা দেশ। এবার ধন্দ তৈরি করলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর দাবি, বিতর্কিত ওই সব কৃষি আইন কৃষকদের স্বার্থেই এনেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। দেশরক্ষার স্বার্থে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী-সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা বারবার জল্পনা তৈরির চেষ্টা করেছেন যে, আন্দোলনকারী কৃষকদের পিছনে আসনে খালিস্তানি জঙ্গিরা ছিলেন। ছিল বিদেশি শক্তির মদত। সেই মদতে ভুল বুঝেই কৃষকরা দিনের পর দিন রাজধানী দিল্লি অবরোধ করে দেশে অচলাবস্থা তৈরির চেষ্টা করেছেন। তাই, দেশ বাঁচাতে বিতর্কিত কৃষি আইনগুলো প্রত্যাহার করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। শুধু তাই না। পঞ্জাব সফরে তাঁর কনভয়ের পথে আন্দোলনকারীদের একাংশ বিক্ষোভ দেখানোয়, বিদেশি শক্তির মদতে তাঁকে হত্যার চেষ্টা বলেও দাবি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
এই ধরনের আচরণের জেরে কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অমানবিকতা এবং কৃষকবিরোধী মনোভাবের অভিযোগ করেছিল কৃষক সংগঠনগুলো। সেই অভিযোগ গলা মিলিয়েছিলেন বিরোধীরাও। কিন্তু, তারপরও যে তিনি বিতর্কিত কৃষি আইনের ব্যাপারে নিজের অবস্থান থেকে সরতে নারাজ ফের বুধবার তা বুঝিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। উত্তরপ্রদেশ, গোয়া, মণিপুর, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব- পাঁচ রাজ্যে ভোট কার্যত রাত পোহালেই। বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশে প্রথম দফা নির্বাচন। তার ঠিক আগের দিন ফের প্রধানমন্ত্রীর থেকে বিতর্কিত কৃষি আইনের পক্ষে সওয়াল শুনলেন দেশবাসী।
আরও পড়ুন- ‘যে শোনে না, সংসদ এড়ায়, কীভাবে তাঁকে জবাব দেব?’ ফের মোদীর নিশানায় রাহুল
বৃহস্পতিবার মূলত উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের ১১টি জেলায় ভোট হবে। ৪০৩ আসনের উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় ৫৮টি আসনের ভাগ্য স্থির হয়ে যাবে বৃহস্পতিবার। এই এলাকার আবার বেশিটাই কৃষিপ্রধান। বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে যে সব রাজ্যের কৃষকরা সবচেয়ে বেশি অংশ নিয়েছিলেন, তার মধ্যে পঞ্জাবের পরেই ছিল উত্তরপ্রদেশ। এই অবস্থায় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া তাঁর সাক্ষাত্কারে বিতর্কিত কৃষি আইনের হয়ে গলা ফাটানো প্রধানমন্ত্রী কিন্তু, কৃষকদের সঙ্গে তাঁর সখ্যতার দাবিও করলেন। সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী এই দাবির পাশাপাশি, মোদীর আরও দাবি, তিনি উত্তরপ্রদেশে বিজেপির জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত।
বিজেপি বরাবর স্থায়ী সরকারের পক্ষে। প্রশাসনের বিরোধিতার বদলে প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করাতেই বিজেপি বেশি আগ্রহী। প্রথম দফা ভোটের আগে উত্তরপ্রদেশবাসীকে দেওয়া এই বার্তার পাশাপাশি, মোদীর নিশানায় ছিল সমাজবাদী পার্টি। কখনও মুলায়ম সিং যাদবের দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন 'পরিবারবাদ'-এর। কখনও তাঁদের 'ভুয়ো সমাজবাদী' বললেন। কখনও আবার 'গণতন্ত্রের শত্রু', 'গণতন্ত্রের কাছে বিরাট হুমকি' বলতেও ছাড়লেন না।
সমাজবাদী পার্টির পাশাপাশি, সাক্ষাত্কারে মোদী কটাক্ষ করলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীকেও। সম্প্রতি রাহুল গান্ধী চিন সীমান্তে ব্যর্থতা এবং দেশজুড়ে বেকারত্ব বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর চুপ থাকা নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন। তার পালটা হিসেবে বুধবার প্রধানমন্ত্রী কটাক্ষের সুরে বলেন, 'যিনি শোনেন না, সংসদে আসেন না, তাঁর জবাব আমি কীভাবে দেব'? বিরোধীরা তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে বেআইনিভাবে বিরোধীদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর অভিযোগ করেছেন। বুধবার সেই দাবি উড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাফাই, তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোতেই দেশের বিপুল সম্পদ উদ্ধার সম্ভব হয়েছে।
Read in English