রাজ্যে শিল্পায়নের দাবিতে সিঙ্গুর থেকে কলকাতা পর্যন্ত পদযাত্রা করতে চলেছে সিপিএমের কৃষক সংগঠন। একইসঙ্গে থাকছে কৃষকদের দাবি-দাওয়া। সারা ভারত কৃষক সভার এরাজ্যের সম্পাদক অমল হালদার বলেন, "আগামী ২৮ নভেম্বর সিঙ্গুরের রতনপুর থেকে ১০ হাজার কৃষক ও ক্ষেতমজুর মিছিল শুরু করবেন। পদযাত্রা চলাকালীন হাওড়া, বালি সহ নানা জায়গা থেকে আরও কৃষক ওই পদযাত্রায় যোগ দেবেন। ২৯ নভেম্বর কলকাতার রাণী রাসমনি রোডে সভা হবে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন ৫০ হাজার কৃষক।"
এবছরের মার্চ মাসে মহারাষ্ট্রের কৃষকদের পদযাত্রা সাড়া জাগিয়েছিল সারা দেশে। পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু গত সাত বছরে সেভাবে কৃষক আন্দোলন হয়নি। সাম্প্রতিক গেরুয়া শিবিরের কৃষক মোর্চার বিধানসভা অভিযানও মোটের ওপর ব্যর্থ হয়েছে। সিপিএম এবার ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে কৃষকদের ওপর ভর করেই। শুধু তাই নয়, আন্দোলনের সূচনা করা হচ্ছে সিঙ্গুরে। যে সিঙ্গুরে কৃষকদের নিয়ে আন্দোলন করে বাম সরকারের ভিত ভেঙে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেখানে টাটাদের নির্মীয়মান ন্যানো কারখানা ভেঙে ফেলতে হয়েছে। সেই সিঙ্গুর থেকেই রাজ্যে শিল্পায়নের ডাক দিয়ে তৃণমূল সরকারকে বিপাকে ফেলতে চাইছে কৃষক সভা।
সিপিএমের কৃষক সংগঠনের দাবি কী? কৃষকসভার দাবি, সিঙ্গুর সহ রাজ্যের সর্বত্র শিল্পের জন্য অধিগৃহীত জমিতে অবিলম্বে শিল্প স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষি ঋণ মকুব করতে হবে। মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন মোতাবেক (MGNREGA) বছরে ২০০ দিন কাজ ও ৩৫০ টাকা মজুরি দিতে হবে। ফসলের সঠিক মূল্য দিতে হবে। ৬০ বছরের উর্দ্ধে কৃষক, ক্ষেতমজুর সহ সমস্ত গরীব মানুষকে কমপক্ষে মাসে ৬ হাজার টাকা পেনশন প্রদান করতে হবে। মোট ন'দফা দাবির প্রেক্ষিতে পথে নামছেন কৃষকরা।
কৃষকদের নানা দাবির পাশাপাশি রাজ্যে শিল্প স্থাপন করার দাবি জানিয়েছে কৃষকসভা। অমলবাবুর দাবি, "সামান্য কয়েকজন অনিচ্ছুক কৃষকের নামে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছিল সিঙ্গুরে। কয়েক কোটি টাকার নির্মীয়মান গাড়ির কারখানা বুলডোজার ও ডিনামাইট দিয়ে ধংস করে দেওয়া হয়েছে। এই আমলে শিল্প সম্মেলন হয়েছে, পারিষদবর্গ নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ হয়েছে। কিন্তু শিল্প হয়নি। বিগত চার বছরে এরাজ্যে ৫৭ হাজার কৃষি জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে।" প্রসঙ্গত, হরিণঘাটাতে ফ্লিপকার্টকে লজিস্টিক হাব তৈরি করার জমি দেওয়ারও বিরোধিতা করেছে কৃষক সভা।
কৃষক সভার বক্তব্য, সারা দেশের সঙ্গে এরাজ্যেও কৃষকের দুর্দশা বেড়েছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও ধান, আলু, পাট সহ কোন ফসলের দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। কেন্দ্রীয় সরকারও কৃষকদের ওপর "নিপীড়ন" চালাচ্ছে। মোদী সরকারের নীতির ফলে দেশে কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে।
আগামী ২৮ নভেম্বর সকাল ১১টায় সিঙ্গুরের রতনপুর মোড় থেকে পদযাত্রা শুরু হবে। পদযাত্রার সূচনা করবেন সারা ভারত কৃষক সভার সম্পাদক হান্নান মোল্লা। তাদের কর্মসূচি সিঙ্গুর থেকে রাজ ভবন অভিযান। রাণী রাসমনি রোডে সভায় বক্তব্য রাখবেন সূর্যকান্ত মিশ্র, অমল হালদার।