কেউ একে অপরের নাম মুখে নেননি। কিন্তু, তৃণমূলের ক্ষমতা আরোহনের অন্যতম ধাত্রীভূমি নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়েই শুভেন্দুকে নিশানা করলেন ফিরহাদ হাকিম। সকালে তেখালির জনসভায় নাম না করে দলীয় নেতৃত্বের উদ্দেশে যে যে প্রশ্ন ছুঁড়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী বিকেলে হাজারাকাটর জনসভায় তারই জবাব দিলেন ফিরহাদ। দুই মন্ত্রীর আকছাআকছিতে স্পষ্ট হল দলের সঙ্গে দূরত্ব ক্রমশ চওড়া হচ্ছে শুভেন্দু আধিকারীর।
'১৩ বছর পর নন্দীগ্রামকে মনে পড়েছে? ভোটের পর আসবেন তো?' সকালে নন্দীগ্রামে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ব্য়ানারে সভায় দলীয় নেতৃত্বকে নিশানা করে প্রশ্ন ছঁড়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। আর বিকেলে নন্দীগ্রামেই তৃণমূলের সভায় পালটা দিলেন ফিরহাদ হাকিম। বললেন, 'কে বলল আসিনি! ১৩ বছরে অনেকবার নন্দীগ্রামে এসেছি। আমি এসেছি, পার্থদা, বক্সীদা, পূর্ণেন্দু দা, দোলা দি অনেকবার করে নন্দীগ্রামে এসে এখানকার আন্দোলনকে সমর্থন জুগিয়েছি। এই নন্দীগ্রাম থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের উত্থান। নন্দীগ্রাম ছিল বলেই সিপিএমের মতো জগদ্দল পাথরকে সরাতে পেরেছি। নন্দীগ্রাম, ভাঙড়, সিঙ্গুর না থাকলে মানুষ অত্যাচারী সিপিএমকে চিনতে পারত না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আন্দোলনের কাণ্ডারি। নন্দীগ্রাম আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা কেউ অস্বীকার করতে পারে! যারা ভাবছে পালে হাওয়া দিয়ে এই রাজ্যে বিজেপিকে শক্ত ভিতে দাঁড় করাবে তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছে।'
এরপরই ফিরহাদ শুভেন্দুর 'হেলিকপ্টারে নয়, সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে উঠেছি' প্রসঙ্গ টেনে বলেন, 'আমরা কেউ হেলিকপ্টারে করে আসিনি। প্রত্যেকে সিঁড়ি দিয়ে উঠেছি। কিন্তু সেই সিঁড়ি তৈরি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।' তবে ফিরহাদ জানিয়েছেন, 'এটা আমার কথা। কাউকে জবাব দিতে কোনও কথা বলছিন না। আমি রথ নই, পথ নই, সেটা অন্তর্যামী জানে।' আর এতেই জোড়া-ফুলের অন্দরের ফাটল আরও উজ্জ্বল হয়েছে।
বঙ্গ রাজনীতিতে শুভেন্দুর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। তার মধ্যেই এ দিন তিনি বলেছেন, 'ক্ষমতা নিয়ে কোনও কিছু করিনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করেছি। এই আন্দোলন শুভেন্দু অধিকারীর আন্দোলন নয়, স্বত:স্ফূর্ত লোকের আন্দোলন।' জবাবে ফিরহাদ নন্দীগ্রামের আন্দোলনকে স্বাধীনতার লড়াইয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন, স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন দলনেত্রীর ভূমিকার কথা। বলেছেন, 'নন্দীগ্রাম আন্দোলন বাংলার মানুষের কাছে স্বাধীনতা অন্দোলনের থেকে কম নয়। আর এই অন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে। এই কথা কেউ যেন ভুলে না যায়। এই কথা কেউ যেন অস্বীকার না করে। ভারতের স্বাধীনতা অন্দোলনের কথা উঠলে গান্ধীজিকে অস্বীকার করা যাবে না। তেমনই নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কথা যতবার উঠবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও উচ্চারণ করতে হবে। আমি আমি করে কিছু হয় না। আমরা বললেই টিঁকে থাকা যায়।'
শুভেন্দুকে ঘিরে জল্পনা বাড়িয়েছেন আরেক মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। হোসেনপুরের সভায় তিনি বলেন, 'শুভেন্দু রাজ্য তথা দেশের শত্রু বিজেপির হয়ে একটুও কাজ করলে সবাই রুখে দাঁড়াব। তবে এখনই ধরে নিচ্ছি না যে ও (শুভেন্দু অধিকারী) ওদিকে যাবে।' প্রশ্ন হল কেন আগেভাগেই জল্পনা উস্কে মন্ত্রীর দলত্যাগের কথা বললেন পূর্ণেন্দু অধিকারী?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন