পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ড ‘চেয়ারম্যান’-এর মতো ‘লাভজনক’ পদে বসার জন্য কেন তাঁর বিধায়ক পদ খারিজ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। কলকাতা বন্দর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি কলকাতা পুরনিগমের মেয়র ছিলেন। কিন্তু, সেই বোর্ডের মেয়াদ ফুরোবার পর গত মে মাসে কলকাতা পুরনিগমের প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান পদের দায়িত্বে বসানো হয় তাঁকে। যা নিয়ম লঙ্ঘন কিনা জানতে চেয়েছে কমিশন।
গত ১লা জুলাই রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে চিঠি দিয়ে ব্যাখ্য়া চেয়েছেন কমিশনের ডিরেক্টার (আইন) বিজয় কুমার পাণ্ডে। এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা বলেছেন, 'কমিশনের তরফে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। সঠিক সময়ে ওই চিঠির জবাব দেওয়া হবে।'
কমিশন চিঠি দিয়ে রাজ্যের থেকে মোট ৯টি বিষয় জানতে চেয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ, কলকাতা পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে ফিরহাদ হাকিম বেতন বা ভাতা পান কিনা, কী ধরনের কাজ তাঁকে করতে হয়, কবে তাঁর পদে বসার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে, পুর প্রশাসকের পদটি রাজ্য সরকারের অধীনে কিনা।
এছাড়াও নিয়োগ পত্র, নিয়োগকর্তা, নিয়োগ পদ্ধতির বিস্তারিত বিবরণ সহ জানতে চাওয়া হয়েছে পুর-প্রশাসক হিসেবে আনুসঙ্গিক কী কী সুবিধা ফিরহাদ ভোগ করেন এবং লাভজনক পদ সংক্রান্ত আইনে কলকাতার পুর প্রশাসকের চেয়ারম্যান পদটি ছাড়ের তালিকায় রয়েছে কিনা।
কমিশনের তরফে জানা গিয়েছে, রাজ্যপালের অতিরিক্ত প্রধান সচিব সতীশ তিওয়ারি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরাকে গত ২২ জুন এই সংক্রান্ত বিষয় চিঠি দিয়েছিলেন। সেখানে জানানো হয়, রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ফিরহাদ হাকিম দু'টি লাভজনক পদের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন বলে দুটি অভিযোগ পেয়েছেন। ওই চিঠিতেই সংবিধানের ১৯১(১(এ) ধারায় হাকিমের বিধায়ক পদ খারিজের দাবি জানানো হয়। তিওয়ারি জানান এ প্রসঙ্গে কমিশনের মতামত জানতে চান বাংলার রাজ্যপাল।
জবাবে কমিশন জানায়, প্রথমে রাজ্য সরকারের ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হবে, তারপর পদক্ষেপ করা হবে।
২০০৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের লাভজনক পদের তালিকায় ১১৫টি পদকে সংযুক্ত করা হয়। ২০১১ সালে সেই তালিকা সংশোধন করা হয়। পদের সংখ্যা বাড়িয়ে ১২৬ করা হয়।
উল্লেখ্য, এ বছরই কলকাতা পুরনিগমের প্রশাসক পদটি তৈরি করা হয়েছে। তাই তালিকায় এই পদের অস্তিত্ব নেই। করোনা পরিস্থিতির জন্য নির্দিষ্ট সময়ে পুরনিগমের ভোট স্থগিত হয়ে যায়। ফলে রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রাক্তন মেয়র ফিরহাদ হাকিমকেই পুর প্রশাসক হিসাবে নিযুক্ত করে।
কমিশনের চিঠি নিয়ে ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, 'পুর প্রশাসক পদের জন্য আমি কোনও বেতন বা ভাতা, গাড়ি, অন্যান্য কোনও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করি না। তাই বিধায়ক পদ খারিজের কোনও কারনই নেই।' এক্ষেত্রে রাজ্যপাল ও বিজেপিকে এক আসনে বসিয়ে তিনি বলেছেন, 'ধনকড় ও বিজেপি রাজ্য সরকার ও কলকাতা পুরনিগমের কাজ ব্যহত করতেই এই ধরনের কাজ করেছে। আদালত আমাকে দায়িত্ব পালন করতে নির্দেশ দিয়েছে। সেই মতোই কাজ করে চলেছি।'
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন