‘এক দেশ এক নির্বাচন’-এর পথে দ্রুত এগোতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কমিটি গঠনের ঘোষণা করেছে। এই কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন' কমিটির বিষয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও কমিটির চেয়ারম্যান রামনাথ কোবিন্দ বলেছেন আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের সভাপতিত্বে 'ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন' কমিটি ২৩ সেপ্টেম্বর তার উদ্বোধনী বৈঠকের আয়োজন করতে চলেছে। এর আগে, সরকার লোকসভা, রাজ্য বিধানসভা, পৌরসভা এবং পঞ্চায়েতের একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমীক্ষা করে সুপারিশ করার জন্য আট সদস্যের একটি উচ্চ-স্তরের কমিট গঠন করে।
কমিটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী, রাজ্যসভায় বিরোধী দলের প্রাক্তন নেতা গুলাম নবি আজাদ এবং প্রাক্তন অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান এন কে সিং রয়েছেন। এছাড়াও প্রাক্তন লোকসভা সেক্রেটারি জেনারেল সুভাষ সি কাশ্যপ, সিনিয়র অ্যাডভোকেট হরিশ সালভে এবং প্রাক্তন চিফ ভিজিল্যান্স কমিশনার সঞ্জয় কোঠারি সদস্য হিসাবে কমিটিতে রয়েছেন।
আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল কমিটির সভায় বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, এবং আইন বিষয়ক সচিব নিতেন চন্দ্র প্যানেলের সচিব হিসাবে মনোনীত হয়েছেন। কমিটি সংবিধান, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন এবং অন্য যেকোন আইন ও বিধিমালার সুনির্দিষ্ট সংশোধনী পরীক্ষা করে সুপারিশ করবে যা একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে সংশোধনের জন্য প্রয়োজন হবে।
ভারতজুড়ে লোকসভা এবং সমস্ত বিধানসভায় একযোগে নির্বাচনের দাবি ও বিরোধিতার যথেষ্ট যুক্তি আছে। পক্ষে যুক্তি হল- ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ নীতি কার্যকর হলে ভোটের খরচ কমবে। নিরাপত্তা নিয়ে কমিশনকেও সমস্যায় পড়তে হবে না। বর্তমানে, বছরের প্রায় সব সময়ই কোথাও না-কোথাও নির্বাচন হয়। রাজনৈতিক দলগুলো অভিযোগ করে যে আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি পালন করতে গিয়ে জনগণকে তাদের প্রাপ্য প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া যাচ্ছে। সরকারের কল্যাণমূলক নীতি পালন করা যাচ্ছে না। জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় নতুন প্রকল্প ঘোষণা করা যাচ্ছে না।
পালটা যুক্তি দেখানো হয়- শুধুমাত্র একটি মেগা নির্বাচনের মাধ্যমে যাবতীয় নির্বাচনের প্রয়োজন মেটানো খুব কঠিন ব্যাপার। ভারতের মতো বিশাল এবং জটিল দেশে তো প্রায় অসম্ভব! এর মোকাবিলা করার জন্য একটি মহড়া আগে দরকার। কারণ, এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বয়ে নিয়ে যাওয়াও ব্যাপক সমস্যার ব্যাপার। যেমন, এখন যতটা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন এবং ভোটার ভেরিফাইয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল মেশিনের প্রয়োজন পড়ে, একসঙ্গে সব ভোট হলে, তার কমপক্ষে তিনগুণ মেশিনের দরকার পড়বে।
এমনটাও ধারণা আছে যে একযোগে নির্বাচন হলে ছোট আঞ্চলিক দলগুলোর তুলনায় সর্বভারতীয় দলগুলো বেশি লাভবান হবে। ঘুরিয়ে বললে, বিজেপির মত দলগুলো বেশি সুবিধা পাবে। যা, অন্যায্য বলে অভিযোগ ছোট দলগুলোর। তাদের প্রশ্ন, কোনও সরকার তার মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই যদি সেই সরকারের পতন ঘটে, তখন তাহলে কী হবে? যেমন সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভায় অত্যন্ত অস্থিরতা দেখা গেছে। এই অস্থিরতার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। পাশাপাশি, অতীতে যেমন দেখা গেছে যে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থা টালমাটাল। যেমন, ১৯৫২ সাল থেকে ১৭টি লোকসভার মধ্যে সাতটি নির্ধারিত সময়ের আগেই ভেঙে দেওয়া হয়েছিল (১৯৭১, ১৯৮০, ১৯৮৪, ১৯৯১, ১৯৯৮, ১৯৯৯ এবং ২০০৪ সালে)। এসব ক্ষেত্রে তো ফের নির্বাচন করতেই হবে। তাহলে, একসঙ্গে নির্বাচন করে লাভটা কী হল? এমনটাই প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিক দলগুলো।