জঙ্গলমহলে বিজেপির জয়ে মাও-হাত
এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গলমহলের ফলাফল রাজনৈতিক বোদ্ধাদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রামে পদ্ম ফোঁটার মাত্রা দেখে বিচলিত হয়ে পড়েছে শাসকদল। সেখানে ভাল ফলের ব্য়াখ্য়া দিতে হেয়েছে বিজেপি সভাপতিকেও। বিজেপির রাজ্য় সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য়, সমালোচনার জবাব দিয়েছে জঙ্গলমহল। মাওবাদীদের নিয়ে একসময় ঘুরেছে তৃণমূল। তাঁর দাবি, জঙ্গলমহল অপমান ভোলেনি। তার জবাব দিয়েছে ব্য়ালটে। তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্য়ােয়র দাবি, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রামে তাঁরা জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি পেয়েছেন। ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়ায় বিজেপির উত্থান আমরা বিশ্লেষণ করেছি বলে জানিয়েছেন। জঙ্গলমহলের কোনও কোনও জায়গায় আশানুরূপ ফল হয়নি সেটা খতিয়ে দেখব। মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বৃহস্পতিবার বলেছেন, মাওবাদীদের সঙ্গে জোট করেছে বিজেপি ও সিপিএম।
ত্রিশঙকু পঞ্চায়েতের চাবিকািঠি নির্দলদের হাতে
এবারে গ্রামপঞ্চায়েত ভোটে নির্দল প্রার্থীরা নজরকাড়া ফল করেছে। গ্রামপঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে নির্দল জয়ী প্রার্থীদের সংখ্য়া ছাপিয়ে গিয়েছে কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের জয়ীদের থেকে। এবার দেখার বিষয় এই জয়ী নির্দলরা কোন দলে পা বাড়ায়। এই দলহীন প্রার্থীদের জয়ের ফলে ত্রিশঙকু হয়েছে একাধিক গ্রামপঞ্চায়েত। বেশ কিছু পঞ্চায়েত সমিতিও ত্রিশঙকু হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই ত্রিশঙকুরা শাসকদলের সঙ্গেই হাত মেলাবেন। এঁদের অধিকাংশই শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দলের টিকিট না পাওয়ায় নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন তাঁরা। স্থানীয়স্তরে তাঁদের প্রভাব বেশি থাকায় দলীয় প্রার্থীরা এঁদের কাছে পরাজিত হন। এবার বোর্ড গঠনে তাঁরা বেশি গুরুত্ব পাবেন। নির্দলদের জয়ের প্রভাব শাসকদলের শীর্ষস্তরেও চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তা তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের বক্তব্য়ে পরিষ্কার। এদিন পার্থবাবু বলেন, নির্দলের সংখ্য়া সিপিএম ও কংগ্রেসের থেকে বেশি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা কোথায় কোথায় রয়েছে তা দেখতে হবে। সেটা এখন থেকেই ঠিক করতে হবে। ত্রিশঙকু পঞ্চায়েত ও সমিতির চাবিকাঠি এখন নির্দলদের হাতে।
আরও পড়ুন, পঞ্চায়েতে ঘাসফুলে পদ্মকাঁটার খোঁচা, শক্তিহ্রাস হাত-কাস্তের
মালদায় পদ্মকাঁটায় বিদ্ধ গণি পরিবারের হাত
মালদায় দুটি লোকসভা আসন কংগ্রেসের দখলে। গণিখান চৌধুরীর পরিবারের দুই সদস্য় দলের সাংসদ। কংগ্রেসের ঘর ভাঙতে ভাঙতে নিঃস্ব করে দিয়েেছ তৃণমূল। মুর্শিদাবাদের মতো মালদার কংগ্রেসকেও তছনছ করে দিয়েছে শাসকদল। এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে ধুলোয় মিশে গেল সংখ্য়ালঘু অধ্য়ুিষত জেলার কংগ্রেস। এখানে গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি জয় পেয়েছে ৫২৬টি আসেন, অন্য় দিকে কংগ্রেস জয়ী হয়েছে ৩৭৯টি আসনে। এই জয়ের সংখ্য়ায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে কংগ্রেসের সাংগঠনিক দুর্বলতার চিত্র। এই ভোটের ফলের প্রভাব পড়বে আগামাী লোকসভা নির্বাচনে। পদ্মশিবিরের এই জয়ে মুখ পুড়েছে গণির পরিবারের। এখানে জেলা পরিষদ আসনে কংগ্রেস জয় পেয়েছে দুটিতে। সেখানে বিজেপি জয়ী হয়েছে ৬টি আসনে।
ফের পুনর্নির্বাচন দুটি বুথে
এর আগে ১৯ জেলায় ৫৩৭টি বুথে পুনর্নির্বাচন হয়েছে। কখনও এতগুলো বুথে পুনর্নির্বাচন হয়নি পঞ্চায়েত ভোটে। রাজ্য়ে গণনা পক্রিয়া শেষ হওয়ার পর এবার পুনরায় পঞ্চায়েত নির্বাচন জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের ফুলবাড়ি এক গ্রাম পঞ্চায়েতের দুটো বুথে। এই বুথে ব্য়ালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছিল। পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইনের ৭৪ ধারা মেনেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য় নির্বাচন কমিশন। ১৮৯ এক, ও ১৮৯, এই দুটি বুথে পুনর্নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, জলপাইগুড়ির জেলাশসকের রিপোর্টের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এই দুই বুথের ভোটে কড়া নিরাপত্তার ব্য়বস্থা করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
আরও পড়ুন, বাম-কংগ্রেস নয়, ভবিষ্যতে তৃণমূলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপিই, প্রমাণ করছে পঞ্চায়েতের ফল
জেলা পরিষদ শুধুই তৃণমূলের, কাঁটা পুরুলিয়ায়
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে শুধু বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী আসনগুলোর ফল ঘোষণা বাকি। জেলা পরিষদের গণনাতেও দেখা যাচ্ছে বিজেপি বাম ও কংগ্রেসের থেকে বেশি আসনে জয়লাভ করেছে। যদিও সেই সংখ্য়াটা শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে শত যোজন দূরে। পুরুলিয়ায় জেলা পরিষদেও ভাল ফল করেছে গেরুয়া শিবির। জঙ্গলমহলের ওই জেলায় ১০ টি আসন পেয়েছে বিজেপি। মালদায় জয়ী হয়েছে ৬টি আসনে। কংগ্রেস ও বামেদের কথা যত না বলা যায় ততই ভাল। কংগ্রেসের শিকেয় সাকুল্য়ে ৫টি জেলা পরিষদের আসন, অন্য় দিকে বামেরা পেয়েছে লোকসভার সমান ২টি আসন। দুই নির্দল প্রর্থীও জয় পেয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস ৫৮0টি আসনে জয় পেয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে। বাঁকুড়া, দুই বর্ধমান, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, জলপাইগুড়ি, হুগলি, হাওড়ায় বিরোধীরা কোনও আসন পায়নি।