Advertisment

খোল করতালে বিপুল টাকা ব্যয় অনুব্রতর, তৃণমূলের প্রচারে কীর্তনীয়ারা

প্রায় দু কোটি টাকার এই কীর্তন সামগ্রীর টাকা কোথা থেকে এল, সে নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব কোনও কথা বলতে চাননি। কবে খোল করতাল কীর্তনীয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হবে, তার দিন তারিখও জানানো হয়নি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

চারহাজার খোলের দাম পড়েছে এ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা

বীরভূমের লোক সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে আছে বাউল কীর্তন গান। কবি জয়দেব যেমন বীরভূমের কেদুঁলি গ্রামের মানুষ ছিলেন, তেমন শ্রী চৈতন্যর স্মৃতিও জড়িয়ে আছে বীরভূমের নানা প্রান্তে, চৈতন্যদেবের সহকারী নিত্যানন্দ গোস্বামী ও জেলার বীরচন্দ্রপুর এলাকার মানুষ ছিলেন। বীরভূমের ময়নাডাল গ্রামে একসময় দেশের প্রথম কীর্তন গান শেখার স্কুল চালু করেছিলেন বৈষ্ণব পণ্ডিতেরা, আর ফি বছর কেঁদুলি মেলায় শতাধিক কীর্তন আসরে রাতভর সামিল হতে আসেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। জেলার গ্রামাঞ্চলে গ্রীষ্ম বা শীতের রাত্রে বসে কীর্তন পালাগানের আসর, সেখানে গানের কথা সুরে ভক্তিতে আপ্লুত হয়ে কীর্তনীয়াদের ঈশ্বরের দূত ভেবে প্রণাম করেন গ্রামবাসীরা।

Advertisment

মানুষের এই সারল্য ও ভক্তি ভাবকে এবার কাজে লাগাতে অগ্রণী তৃণমূল কংগ্রেস। অতীতে বাম জমানায় জেলার লোকশিল্পীদের সরকারি ভাবে প্রচারে লাগানো হতো স্বাক্ষরতা এবং জনস্বাস্থ্যের প্রচারে। অনেকটা সেই ধারা মেনেই তৃণমূলের লক্ষ্য উন্নয়নের প্রচার। তাঁরা এঁর সঙ্গে যুক্ত করলেন উপঢৌকন প্রথা, তবে প্রচারের ভাতা বা মজুরি কী হবে তা এখনও ঘোষিত হয় নি।

আরও পড়ুন: আবারও জোট? কংগ্রেসকে সমর্থনের বার্তা সূর্যের

কীর্তনীয়াদের বাদ্যযন্ত্র হিসেবে খোল করতাল উপহার দেওয়ার পিছনে অঙ্কটা পরিষ্কার। বিজেপির ধর্মীয় ভাবাবেগের রাজনীতি রুখতে বীরভূমে ধর্মের ছোঁয়া মাখা প্রচারকেই অস্ত্র করছে তৃণমূল কংগ্রেস। খোল করতালের কথা তিন মাস আগে তৃণমূলের জেলা কমিটির সভার শেষে ঘোষণা করেছিলেন দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। ঘোষণা ছিল, জেলার ১৯টি ব্লকের ৪,০০০ কীর্তনীয়াদের চিহ্নিত করে তাঁদের খোল করতাল দেওয়া হবে। সেই মোতাবেক ৪,০০০ খোল ও ৪,০০০ করতালের বরাত দেওয়া হয় নবদ্বীপ এবং মুর্শিদাবাদে। এত পরিমাণ বরাত পেয়ে প্রথমে হতবাক হলেও তড়িঘড়ি সেসব বানিয়ে তৃণমূলের জেলা অফিসে পৌঁছেও দেওয়া হয়েছে।

তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রতিটি খোল বানানোর জন্য খরচ দেওয়া হয়েছে ৪,০০০ টাকা, প্রতি করতাল পিছু ৫০০ টাকা। অর্থাৎ, খোলের জন্য খরচ পড়েছে ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা এবং করতালের খরচ ২০ লক্ষ টাকা। এই কীর্তন সামগ্রীর টাকা কোথা থেকে এল, সে নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব কোনও কথা বলতে চাননি। কবে খোল করতাল কীর্তনীয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হবে, তার দিন তারিখও জানানো হয়নি। অনুব্রত জানিয়েছেন, সময় হলেই এ ব্যাপারে জানানো হবে।

publive-image চার হাজার করতালের খরচ ২০ লক্ষ টাকা

কিন্তু কেন বিজেপি নিয়ে এত চিন্তিত বীরভূমের তৃণমূল নেতৃত্ব? জেলায় বিজেপির তেমন কোনও প্রভাব কাগজ কলমে না থাকলেও নলহাটি, রামপুরহাট, ময়ূরেশ্বর, সিউড়ি, লোকপুর থানা এলাকায় বহু দিন ধরে সঙ্ঘের লাগাতার প্রচারে বিজেপি বিরোধী শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে। এ ছাড়া মুকুল রায়ের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রেখে দলেরই বিক্ষুব্ধ কিছু নেতা অত্যন্ত গোপনে কাজ করছেন, এমন খবর পুলিস সূত্রে পেয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। তার মোকাবিলায় সব হাতিয়ার নিয়েই নামতে চাইছে তৃণমূল।

এর আগে রাজপুত সন্মেলন, আদিবাসী সন্মেলন, এমনকি পুরোহিত সম্মেলনও করিয়েছেন অনুব্রত। পুরোহিতদের নামাবলী, গীতা এবং স্বামী বিবেকানন্দর ছবি উপহার দেওয়া হয়েছে। প্রচারে বিজেপির পালের হাওয়া কাড়তে মরিয়া অনুব্রত এর আগে ঘোষণা লোকসভায় জেলায় দুটি আসনে জয়ের ব্যবধান আরও বাড়বে এবার। কিন্তু গোপন ভয় যে তাঁকেও ছাড়ছে না, খোল-করতালে এত খরচে তার বেশ প্রমাণ মিলছে।

আরও পড়ুন: রাম মন্দির নিয়ে এবার এ রাজ্যে পুরোদমে ঝাঁপাচ্ছে ভিএইচপি

এদিকে এ খবর শুনে বিজেপির রাজ্য নেতা সায়ন্তন বসু বলেছেন, "ওরা যদি ৪,০০০ খোল করতাল সত্যিই দেয়, তাহলে আমরা ১০,০০০ খোল করতাল দেব।" বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের বক্তব্য, "তৃণমূলের এবার জয় শ্রী রাম বলে মিছিল করাটা বাকি। আসলে ওদের তোষণের রাজনীতির প্রতিবাদে হিন্দুরা একজোট হচ্ছে দেখে ওরা ভয় পেয়ে এসব করছে। কখনও রামনবমীর মিছিল করছে, কখনও পুজো পাঠ করছে, মানুষ এসব প্রতারণা ধরে ফেলেছেন।"

সিপিআই (এম) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, প্রাক্তন সাংসদ ডঃ রামচন্দ্র ডোম বলেন, "এই প্রথম এ ঘটনার কথা শুনলাম। জেলার গর্বের লোক সংস্কৃতি নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা করছে তৃণমূল-বিজেপি।" তাঁর দাবি, কোথা থেকে এত লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে, সেই আয়ের উৎস মানুষকে জানানো হোক।

বীরভূমের কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টন রশিদের আক্ষেপ, "রাজ্যের সম্প্রীতির একটা গর্বের ঐতিহ্য রয়েছে আমাদের, খোল করতাল নিয়ে বিজেপি তৃণমূল সেটা নষ্ট করতে মাঠে নেমেছে।"
কখনও পুলিশকে বোমা মারার নির্দেশ দেওয়া, কখনও ভোটের আগে বিরোধীদের চমকে দিতে চড়াম চড়াম আওয়াজের ঘোষণা করা, কখনও বা গুড়জল দেওয়ার নামে আতঙ্কের ইঙ্গিত ছুড়ে দেওয়া অনুব্রত মণ্ডলের খোল করতালে কী ধ্বনি ছড়ায় সে দিকেই এখন তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।

tmc bjp
Advertisment