জম্মু-কাশ্মীরে ফের ৩৭০ ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। গত প্রায় দু'বছর ধরেই এই দাবিতে অনড় উপত্যকার রাজনৈতিক দলগুলো। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী মোদীর ডাকা বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার আগেও এই দাবিতে সহমত পোষণ করে গুপকার জোটের নেতৃত্ব। কিন্তু, বৈঠকে এই নিয়ে কোনও কথা হয়নি বলে দাবি ভূস্বর্গের রাজনৈতিক দলগুলোর। প্রশ্ন উঠছিল তাহলে কী ৩৭০ ধারা নিয়ে অনড় অবস্থান থেকে সরে আসছে এনসি, পিডিপি? এই জল্পনাই আরও উস্কে দিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ওমর বলেছেন, 'জম্মু-কাশ্মীরে এখনই ৩৭০ ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি বোকামি হবে।'
উপত্যকায় ভোট, রাজনৈতিক কার্যক্রম চালু করতে আগ্রহী কেন্দ্রীয় সরকার। সেই লক্ষ্যেই গত বৃহস্পতিবার জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্করী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই বৈঠকে অংশ নেওয়া গুপকার জোটের ১৪ জনের অন্যতম ওমর আবদুল্লা। কেন ওই বৈঠকে বহু কাঙ্খিত ৩৭০ ধারা পুনপ্রতিষ্ঠার কথা বলা হল না? জবাবে ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর বলেন, 'স্বাধীনতার ৭০ বছর পর বিজেপি তার কাঙ্খিত লক্ষ্যপূরণে সফল হয়েছে। কিন্তু, আমাদের আন্দোলন, সংগ্রামের সবে শুরু। বৈঠকে আমরা ৩৭০ ধারা পুনপ্রতিষ্ঠান দাবি জানিয়েছি- এ কথা বলে রাজ্যবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করবো না। এখনই সেই বিশেষ ক্ষমতা ফিরে আসবে এমনটা ভাবানা বোকামো। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা ফের লাগুর কোনও ইঙ্গিত বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের দেয়নি।' উল্টে আইনি পথেই দাবি আদায়ের পক্ষে ন্যাশনাল কনফারেন্স। তাঁর কথায়, 'সংবিধান মোতাবেক, শান্তিপূর্ণভাবে আইনি পথেই দাবি আদায় করতে হবে। কৌশলী হয়ে সুপ্রিম কোর্টেই আমরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করবো। সেখানেই আমারা সবচেয়ে বেশি কথা বলতে পারবো।'
২০১৯ সালের ৫ অগাস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ ক্ষমতা ৩৭০ ধারার অবলুপ্তি ঘটায় কেন্দ্র। রাজ্যের তকমা কেড়ে জম্মু-কাশ্মীরকে দু'টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়। অশান্তির আশঙ্কা সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্ব ও অসংখ্য কর্মীকে বন্দি করা হয়। সেই সময় থেকেই ৩৭০ ধারা পুনপ্রতিষ্ঠার দাবিতে সরব উপত্যকার রাজনৈতিক দলগুলো। এরপর এই প্রথম কেন্দ্রের ডাকে জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠককে 'সদর্থক ও আস্থাবর্ধক' বলে দাবি করেছেন ওমর আবদুল্লা।
ন্যাশনাল কনফারেন্সের এই নেতার কথায়, 'প্রধানমন্ত্রীজি জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট, রাজ্যের তকমা ফিরিয়ে দেওয়া, গণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতা হস্তান্তর ও সীমানা পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা করেছেন। কাউন্সিল ভোটের সাফল্যের পর পরই কেন্দ্র এই উদ্যোগের চিন্তা করেছে।'
মোদীর বৈঠকে যোগ দেওয়ার দু'টি লক্ষ্য নিয়েও এদিন মুখ খোলেন ওমর। বলেন, 'প্রথমত জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে কেন্দ্রের পরবর্তী কি ভাবনা তা আমাদের জানা প্রয়োজন ছিল। দ্বিতীয়ত, আমাদের কথাও তাঁদের জানানোর ছিল। তবে এনসি, পিডিপির শ্রীনগরে যে কথ বলেছিল তার থেকে সরে আসেনি। আমরা তাদের বলতে পেরেছি যে, কেন্দ্রের পদক্ষেপে উপত্যকার বেশিরভাগ মানুষই অসন্তুষ্ট।'
ভূস্বর্গে সীমানা পুর্নবিন্যাসের পরই ভোট হবে বলে ভাবনা কেন্দ্রের। তবে, সীমানা পুর্নবিন্যাস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওমর আবদুল্লা। তাঁর প্রশ্ন, 'কেন্দ্র গোটা দেশের সঙ্গে ২০২১ সালের জনগণনা অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীরের সীমানা পুর্নবিন্যাস হবে না? ৩৭০ ধারা বিলোপ করে দেশের সব রাজ্যের সমততুল করা হয়েছে উপত্যকাকে। তাহলে কেন ১০ বছর আগের জনগণনা অনুযায়ী এখানে সীমানা পুনর্বিন্যাস হবে?'
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন