পঞ্চনদের তীরে আম আদমি পার্টির চমকপ্রম উত্থান ঘটেছে। ঝাড়ু ঝড়ে কার্যত ধুয়ে গিয়েছে দুই জাতীয় দল বিজেপি ও কংগ্রেস। গোয়াতেই দু'টি আসনে জয় পয়েছে আপ। দেশজুড়ে এবার এই জয়যাত্রা দেখা যাবে বলে আত্মবিশ্বাসী আরবিন্দ কেজরিওয়াল। তাহলে কী বিজেপির সামনে জাতীয় রাজনীতিতে এবার নতুন চ্যালেঞ্জ আপ? গেরুয়া শিবির তেমনটা মনে করছে না। উল্টে আপের এই সাফল্যে নিজেদের জয়ের গতি আরও ফুলেফেঁপে উঠবে বলেই মনে করছে গেরুয়া দলের নেতারা।
কেন এমন দাবি বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের? এক্ষেত্রে সরল পাটিগণিতের অঙ্কেই ভরসা করছেন তাঁরা। পদ্ম নেতারা মনে করছেন, আপের এই সাফল্য, শাসক বিজেপির কাছে এখনই কোনও ভয়ের বার্তা বয়ে আনবে না। কিন্তু, ক্ষমতা দখলের ইঁদুর দৌড়ে দিল্লির (মূলত) এই দল বিরোধী জোটে কাঁপুনি ধরাতে পারে। বিজেপির দাবি, জাতীয়স্তরে আপের উত্থান হেল বিরোধী ভোট ব্যাঙ্ককে বিভক্ত করবে। ফলে, লাভের গুড় মিলবে শাসক দলের। তৃতীয়বার মোদী সরকার গঠন সহজ হবে।
সিনিয়ার বিজেপি নেতা পি মুরলীধর রাও দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, 'জাতীয় রাজনীতির যা অবস্থা তাতে আরও ২০ বছর বিজেপি কেন্দ্রে থাকতে পারে। জাতীয়স্তরে বিজেপির গুরুত্ব বাড়বে। অতীতে যেমন কংগ্রেস ছিল। বিরোধী রাজনীতির ক্ষেত্র উন্মুক্ত হচ্ছে। কংগ্রেস কতটা প্রাসঙ্গিক থাকবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সে জায়গা বিভিন্ন পরিষরে আপ, তৃণমূল, ডিএমকে আঞ্চলিক দলগুলির ভোট বাড়তে পারে। তবে জাতীয়স্তরে বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিকল্প হিসাবে আপকে উঠে আসতে হলে অন্তত ১০০টি আসন জিততে হবে।' যা কার্যত কোনও আঞ্চলিক বা ব্যক্তি নির্ভরদলের পক্ষে জোগাড় করা অসম্ভব বলেই মনে করছেন গেরুয়া নেতারা।
আরও পড়ুন- জায়ান্ট কিলার মোবাইল মেকানিক, মুখ্যমন্ত্রীকে হারিয়ে এখন তিনিই সুপার-স্টার
আপ কেবল কংগ্রেস বা বিজেপি বিরোধিতা করে করেনি, উন্নয়নকে ইস্যু করে বিকল্পের দিশা দেখাতে পেরেছে। বিজেপিও প্রচারে জাতপাতের রাজনীতিকে প্রচ্ছন্ন করে হাতিয়ার করেছে উন্নয়নকে। আপের এই নীতি বিজেপির কাছে কতটা ভয়ের? এই তত্ত্ব মেনে নিয়েছেন বিজেপি নেতারা। তবে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ অনীল জৈনের মতে, উন্নয়নকে ভর করে ভোটে জেতার বিষয়টি শুরু করেছেন তারাই। আপাতত এই বিষয়ে তারা সিদ্ধহস্ত। গত ৮ বছরের জাতীয় ও আঞ্চলিকস্তরে বহুবার এর প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু, আপকে এগোতে হলে শুধু মুখে উন্নয়ের কথা বলেই হবে না, বারে বারে তার প্রমাণ দিতে হবে। দল বাড়লে যা করা বেশ কষ্টসাধ্য। ফলে এখনই এই নিয়ে পদ্ম শিবিরের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে মত তাঁদের।
দিল্লি, পাঢঞ্জাবে জয়ের পর আপ এবার হিমাচল প্রদেশ ও গুজরাটেও লড়াই করতে পারে। পরে লড়তে পারে হিমাচল প্রদেশ ও হরিয়ার ভোটেও। গেরুয়া শিবিরের চ্যালেঞ্জ, যদি ২০২৪ সালে বিজেপির যোগ্য বিরোধী হতে হয় তবে আপকে অন্তত ৫০টি লোকসভা কেন্দ্রের জয় হাসিল করতে হবে। অনীল জৈনের কথায়, 'বিরোধী পরিষর দখলের সুযোগ বেশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা এম কে স্টালিনের। কারণ তাদের রাজ্যে যথাক্রমে ৪১ এবং ৩৯টি লোকসভা আসন রয়েছে। কিন্তু পাঞ্জাব ও দিল্লি আসন সংখ্যা একত্রে করলে ২০ টি হবে। দিনের শেষে, এটি পাটিগণিত। কেজরিওয়াল খুব জোর একজন এইচডি দেবগৌড়া বা আই কে গুজরাল হতে পারেন, তার বেশি কিছু নয়।'
Read in English