বাংলা হোক বা ত্রিপুরা, দুই বাঙালি রাজ্যেই ধরাশায়ী বামেরা। বিজেপি বিরোধী মুখ হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়তেই আস্থা রাখেছেন এ রাজ্যের মানুষ। ত্রিপুরাতেও গেরুয়া দলকে উৎখাতে কোমর বেঁধেছে জোড়া-ফুল শিবির। বিপ্লব দেব সরকারের বিরুদ্ধে পোক্ত লড়াইয়ে ইতিমধ্যেই বামপন্থী মনোভাবাপন্নদের সহায়তার আর্জি জানিয়েছে তৃণমূল। যা নিয়ে ক্ষয়িষ্ণু বামেদের তরফে নানা ব্যাখ্যা উঠে আসছে। দল যাই বলুক না কেন, এবার ত্রিপুরায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা আদ্যপান্ত সিপিএম কর্মী নৃপেন চক্রবর্তীর নাতিই কলম ধরলেন তৃণমূলের হয়। তাঁর লেখা গানেই তৃণমূল নেত্রীর জয়গান। আপাতত ত্রিপুরায় "খেলা হবে"র অন্যতম হাতিয়ার প্রখ্যাত বামপন্থী নৃপেনবাবুর নাতির গান।
বিপ্লব জমানায় ত্রিপুরা নানাভাবে বঞ্চিত। নৃপেন চক্রবর্তীর নাতি সন্দীপের গানে একদিকে সেই বঞ্চনাকে যেমন তুলে ধরা হয়েছে, তেমনই তা থেকে মুক্তির উপায় হিসাবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতার নানা কাজ, কর্মসূচিরও উল্লেখ রয়েছে। গানে গানেই বিজেপি বিরোধী সকল শক্তিকে হাত মেলানোর আহ্বান জানিয়েছেন বামপন্থী পরিবারের বেড়ে ওঠা এই যুবক।
কোন তাগিদ থেকে তৃণমূলের হয়ে কলম ধরলেন সন্দীপ চক্রবর্তী? দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে নৃপেনবাবুর নাতি বলেন, "আইনের শাসন নেই ত্রিপুরায়, সেখানে জঙ্গলরাজ চলছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলকে এ রাজ্যে কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হয় না। বাংলা থেকে আসা তৃণমূল নেতা, কর্মীরা ত্রিপুরায় থাকার হোটেল পান না। তাঁদের গাড়িতে হামলা হচ্ছে। স্থানীয় গাড়ির চালকরা তৃণমূল নেতাদের গাড়ি চালাতে রাজি হন না। এছাড়াও ত্রিপুরায় নৈরাজ্য চলছে। হাজারের বেশি বহিষ্কৃত শিক্ষক ও বঞ্চিত মানুষদের কথা তুলে ধরে আমি ইতিমধ্যেই গান লিখেছি। আর রাজ্যকে বিজেপির হাত থেকে বাঁচাতে আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াইয়ের হাত শক্ত করতে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছি।"
আরও পড়ুন- সরকারে না থেকেও শাসকের মতো আচরণে দলের ভোট বিপর্যয়: সিপিএম সাংগঠনিক রিপোর্ট
আরও পড়ুন- এবার আগরতলার কলেজে আক্রান্ত TMCP, তড়িঘড়ি ত্রিপুরা যাচ্ছেন তৃণমূল সাংসদ
ত্রিপুরায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বাম নেতা নৃপেন চক্রবর্তীর নাতি বছর ৪৫-এর সন্দীপের বেড়ে ওঠা ত্রিপুরায়। অবশ্য বর্তমানে তিনি এ রাজ্যের সরকারি কর্মী। কাজ করেন রাজ্য পরিবহণ দফতরে। থাকেন বরাহনগরে। সন্দীপের লেখা, "ত্রিপুরার সব ভাই বোনেরা নিপিড়িত যাঁরা জাগোরে আজ", "আগামির কাণ্ডারি অভিষেক" ও "খেলা হবে এবার ত্রিপুরার মাটি"তে ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়।
কর্মসূত্রে বাংলায় থাকলেও ২০২৩-য়ে তৃণমূলের হয়ে প্রচারে মাতৃভূমি ত্রিপুরায় যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সন্দীর চক্রবর্তীর।
এ দেশে বাম আন্দোলনের অন্যতম বাঙালি নেতৃত্ব নৃপেন চক্রবর্তী। পার্টির কাজেই প্রথম থেকে (১৯৫০ সাল) ত্রিপুরায় কাজ করেছেন তিনি। বলা ভাল, বাঙালি অধ্যুষিত সে রাজ্যে বাম আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। পরে ১৯৭৮ থেকে ৮৮ পর্যন্ত ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব সামলান জনপ্রিয় বাম নেতা নৃপেন চক্রবর্তী। আজন্ম বাম ঘরানা ও রাজনীতি বিশ্বাসী এহেন নেতার নাতির তৃণমূলের হয়ে গান লেখা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট তাৎপর্যবাহী বলেই মনে করা হচ্ছে।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন