/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/11/ex-mayor.jpg)
বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকের পর সদ্য় প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্য়ায়ের মুচকি হাসি।
যা হওয়ার ছিল তাই হলো। প্রাক্তন মেয়র, প্রাক্তন মন্ত্রী, এবং বর্তমান কাউন্সিলর শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বর্তমানে বিচ্ছিন্ন স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায় তাঁকে আইনি নোটিস পাঠালেন, রত্নার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানারকম "অভিযোগ" করার অপরাধে।
অভিযোগ বলে অভিযোগ! এক টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত সাক্ষাৎকারে শোভনবাবু বলেন, রত্না শোভনের "দুঃসময়ের বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী" বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভাড়াটে খুনি দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, শোভনবাবুকে শুদ্ধু বিষ মেশানো কেক খাইয়ে সাবাড় করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল রত্নার। প্রাক্তন মহানাগরিকের আরও দাবি, রত্না তাঁর অজান্তেই "আরেকজন পুরুষের" সঙ্গে একটি কোম্পানি খুলেছিলেন।
রত্নার প্রতিক্রিয়া, "এখন আমার চরিত্র হনন করার জন্য আরেকজন পুরুষের গল্প আমদানি করা হয়েছে। ওঁকে কোর্টে জবাবদিহি করতে হবে। শুধু আমার সম্বন্ধে নয়, আমাদের দুই ছেলেমেয়ে সম্বন্ধে পর্যন্ত মিথ্যে বলছেন উনি। যে কেকের কথা বলেছেন, সেই কেক তো ছেলেমেয়েও খেয়েছিলো। তাহলে তারা কী করে বেঁচে থাকে?"
আরও পড়ুন: শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ইস্তফা: মন্ত্রিত্বের ইতি ও সম্পূর্ণ বৃত্ত
ইতিমধ্যে গতকাল পদত্যাগ করবার ঠিক আড়াই ঘণ্টা পর বিকেল চারটেয় গোলপার্কে নিজের অ্যাপার্টমেন্টের লনে সাংবাদিক বৈঠকে সদ্য প্রাক্তন মেয়র এমন একটা ভাব করলেন, যেন কিছুই হয়নি। দলের নির্দেশে তিনি পদত্যাগ করেছেন। দলের একনিষ্ঠ সৈনিক। দল যা বলবে তাই করবেন। দুঁদে রাজনীতিকের মত আসল কারণটা কোনভাবেই খোলসা করেননি শোভন। নানা প্রশ্নের জবাব সুকৌশলে এড়িয়ে গেলেন। দলের জন্য প্রয়োজনে কাউন্সিলর পদ ছেড়ে শহিদ হতেও তিনি রাজি বলে আনুগত্য প্রদর্শন করতেও ছাড়েননি ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।
মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেওয়ার সময়ই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, মেয়র পদও ছাড়তে হবে। বৃহস্পতিবার তিনি তাই করেন। তবে বিকেলের সাংবাদিক বৈঠকে নিজেকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে যান, মুচকি হেসে সরাসরি উত্তর এড়িয়ে যান। তাঁকে প্রশ্নের জালে জড়ানো যাবে না বলে বড়াই করতেও ছাড়েননি ৪০ বছর ধরে রাজনীতি করে আসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই "সৈনিক"।
বেগুনি কলারের সঙ্গে ধবধবে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী। একেবরে হিন্দি বলয়ের স্টাইলে লনে সাংবাদিক বৈঠক। রাস্তার পাশের পথচলতি উৎসুক জনতা মাঝেমধ্যেই উঁকি মারছেন। সবাই বোঝার চেষ্টা করছেন কী হচ্ছে। শহর বুধবারই জেনে গিয়েছিল আর মেয়র থাকছেন না সাতবারের কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর। কেন তাঁর পদত্যাগ, তার কোনও জুতসই উত্তর দিলেন না 'জল শোভন'। দল এবং দলনেত্রীর প্রতি নিবেদিত প্রাণ বলে এদিন প্রায় প্রতিটি প্রশ্নের জবাবে বলেছেন। ৪০ বছর আগের ছাত্র রাজনীতির কথা স্মরণ করেছেন। তবে নিজেকে যতই আড়াল করতে চান শোভনবাবু, তাঁর ইতিহাস হাতড়ে বেড়ানোতে স্পষ্ট হয়ে উঠছিল ভিতরে সদ্য পদত্যাগের দগদগে ঘা।
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই কি তাঁকে মেয়র ও মন্ত্রী পদ ছাড়তে বাধ্য করল? এই একটি প্রশ্নের জবাব দিলেন আগের মতই সোজা ব্যাটে। "বিপদের দিনের বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী" বলেই বৈশখীকে সম্বোধন করেছেন তিনি।
এদিকে তাঁর সাংবাদিক সম্মেলনের একটু পরেই সেই একই চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শোভনবাবুর পদত্যাগের দুঃখে রীতিমত চোখের জল ফেললেন বৈশাখী। বললেন রত্নার সঙ্কীর্ণ মনের কথা। নস্যাৎ করে দিলেন রত্নার সমস্ত অভিযোগ। বললেন তিনি স্রেফ বন্ধুত্বের খাতিরে শোভনদাকে ইডি-সিবিআই তদন্তের সময় সাহায্য করেছিলেন।
এখনি এ নাটকের কোরো না বিচার!