প্রয়াত হলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শরদ যাদব। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। বৃহস্পতিবার রাতে গুরুগ্রামের এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। টুইটে এমনটাই জানিয়েছেন তাঁর মেয়ে সুভাষিণী যাদব। বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন প্রাক্তন এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বৃহস্পতিবার তাঁকে যখন ফর্টিস মেমোরিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউটে আনা হয়, সেই সময় জ্ঞান ছিল না প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর। হাসপাতালের তরফে জানা গিয়েছে, তাঁর নাড়ির স্পন্দন বা রক্তচাপ কিছুই না-মেলায় চিকিৎসকরা রাত ১০টা ১৯ নাগাদ তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় (১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৪ সাল) শরদ যাদব ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ২০১৮ সালে তিনি রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) সঙ্গে তাঁর তৈরি লোকতান্ত্রিক জনতা দল (এলজেডি) মিশিয়ে দিয়েছিলেন। শরদ যাদবের মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর শোকপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শোকবার্তায় মোদী লিখেছেন, 'শরদ যাদবের প্রয়াণে ব্যথিত। তাঁর দীর্ঘ জনজীবনে নিজেকে মন্ত্রী ও সাংসদ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। তিনি ডক্টর লোহিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা আমার আজীবন মনে থাকবে। তাঁর পরিবার ও গুণমুগ্ধদের প্রতি সমবেদনা জানাই।'
প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও শোকপ্রকাশ করেছেন অন্যান্য বিশিষ্ট নেতা-নেত্রীরাও। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে টুইট করেছেন, 'আমি সমাজতান্ত্রিক নেতা এবং প্রাক্তন জেডি(ইউ) সভাপতি শরদ যাদবের মৃত্যুতে শোকাহত। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং কয়েক দশক ধরে একজন অসামান্য সাংসদ হিসেবে দেশের সেবা করে তিনি সাম্যের রাজনীতিকে শক্তিশালী করেছিলেন। তাঁর পরিবার এবং সমর্থকদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা রইল।'
রাহুল গান্ধী লিখেছেন, 'শরদ যাদব একজন সমাজবাদী হওয়ার পাশাপাশি নম্র স্বভাবের ব্যক্তি ছিলেন। আমি ওঁর থেকে অনেক কিছু শিখেছি। ওঁর শোকার্ত আত্মীয়দের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। দেশের প্রতি তাঁর অবদান চিরকাল মনে রাখা হবে।'
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করেছেন, 'শ্রী শরদ যাদবের মৃত্যুর খবর শুনে আমার মন ভারাক্রান্ত।একজন দৃঢ়চেতা রাজনীতিবিদ এবং একজন অত্যন্ত সম্মানিত সহকর্মীকে হারালাম। তাঁর উত্তরাধিকার বেঁচে থাকবে। আমি প্রার্থনা করি, তাঁর পরিবার ও অনুগামীরা এই শোকের মুহুর্তে যেন সান্ত্বনা এবং শক্তি পায়।'
শরদ যাদবের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ১ জুলাই মধ্যপ্রদেশের বাবাই গ্রামে। মধ্যপ্রদেশে জব্বলপুরের রবার্টসন কলেজ এবং গভর্নমেন্ট সায়েন্স কলেজ থেকে বিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া করেছিলেন। জব্বলপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকেই ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিঙে বিটেক পাশ করেন। জয়প্রকাশ নারায়ণের হাত ধরে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালে লোকসভা উপনির্বাচনে জব্বলপুর থেকে জয়ী হন। ১৯৭৭ সালেও ফের জব্বলপুর থেকে সাংসদ হন।
আরও পড়ুন- ‘নরেন্দ্র মোদীই আধুনিক ভারতের স্বামীজি’, দাবি বিজেপি সাংসদের
১৯৭৯ সালে জনতা পার্টি ভাঙার পর চরণ সিংয়ের লোকদলে যোগ দেন। ১৯৮১ সালে আমেঠি থেকে লোকদলের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু, রাজীব গান্ধীর কাছে পরাজিত হন। ১৯৮৪ সালে বদায়ুঁ থেকেও লোকদলের প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন। ১৯৮৯ সালে জনতা দলের প্রার্থী হিসেবে বদায়ুঁ থেকেই জয়ী হন। এরপর ১৯৯১, ১৯৯৬, ১৯৯৯ ও ২০০৯ সালে বিহারের মাধেপুরা থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। মধ্যে ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালে মাধেপুরায় লালুপ্রসাদ যাদবের কাছে পরাজিত হন।
সংযুক্ত জনতা দলের যাবতীয় ক্ষমতা নীতীশ কুমার দখল করে নিলে ২০১৮ সালে লোকতান্ত্রিক জনতা দল গঠন করেন। পরে অবশ্য সেই দলকে লালুপ্রসাদ যাদবের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় জনতা দলে মিশিয়ে দেন। অল ইন্ডিয়া ব্যাওকওয়ার্ড (এসসি/এসটি/ওবিসি) অ্যান্ড মাইনরিটি কমিউনিটিজ এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা শরদ যাদব। তাঁর মেয়ে সুভাষিণী যাদব ২০২০ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। ছেলে শান্তনু এখনও লেখাপড়া করছে।
Read full story in English