বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না মোদী সরকারের। অনগ্রসর, দুর্বল ও দলিত সম্প্রদায়ের থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন স্রেফ নির্বাচনী চমক। প্রধানমন্ত্রীর নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি-আরএসএস সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতির পদটি নিছক আনুষ্ঠানিকতায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
আগামী ২৮ শে মে নরেন্দ্র মোদী আগামী নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করতে চলেছেন। এই অনুষ্ঠানে টিএমসি, এএপি, সিপিআই(এম) এবং সিপিআই সহ বেশ কয়েকটি দল অংশ নেবেনা বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। মঙ্গলবারের এমন ইঙ্গিতের মধ্যে কংগ্রেস সহ আরও বেশ কয়েকটি বিরোধী দলগুলি অনুষ্ঠান বয়কট করবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। যদিও কংগ্রেস এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেনি, দলীয় সূত্র জানিয়েছে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দলের হাজির থাকার সম্ভাবনা বেশ কম।
সূত্রের খবর, বিরোধী দলগুলি তাদের অনুষ্ঠান বয়কটের ঘোষণা জানিয়ে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করতে পারে। কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলি ২০২০ সালের ডিসেম্বরেও নতুন সংসদ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান এড়িয়ে গিয়েছিল।
নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক লড়াই চরমে পৌঁছেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ না জানানোয় মো্দী সরকারকে নিশানা করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। তিনি বলেন, কেন্দ্রের সরকার দলিত ও আদিবাসী রাষ্ট্রপতি পদে দ্রৌপদী মুর্মুকে বসিয়েছেন তা স্রেফ এক নির্বাচনী চমক। খাড়গে অভিযোগ করেন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে নতুন সংসদ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ও ব্রাত্য রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
খাড়গে আরও বলেন, সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি ভারতের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক ক্ষমতার অধিকারী। তাঁকে সংসদ ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানো টা অসম্মানের। খড়গের আগে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও নতুন সংসদ ভবন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করেছিলেন।একটি টুইট বার্তায় কংগ্রেস সভাপতি বলেছেন ‘রাষ্ট্রপতির উচিত নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করা’। মোদী সরকার ক্রমাগত আইন শৃঙ্খলা, সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে লঙ্ঘন করেছে।
তাঁর অভিযোগ, বিজেপি-আরএসএস সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতির পদটি নিছক আনুষ্ঠানিকতায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাহুল গান্ধী এর আগে বলেছিলেন যে রাষ্ট্রপতির উচিত নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করা, প্রধানমন্ত্রীর নয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী ২৮ মে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করতে চলেছেন।
লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে তাকে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের অনুরোধ জানান। বৃহস্পতিবার (১৮ মে) নতুন সংসদ ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর লোকসভা সচিবালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বঙ্গ সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার দিনেই অনুষ্ঠান বয়কটের ডাক দেন। টিএমসিও কেজরিওয়ালের ডাকে সায় দিয়েছে। দলের রাজ্যসভার সদস্য ডেরেক ও'ব্রায়েন টুইট করে লিখেছেন, ‘সংসদ শুধু একটি নতুন ভবন নয়; ভারতীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি।
মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ঐতিহ্য, মূল্যবোধকে ভুলতে বসেছে। দলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় বলেছেন যে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ না জানানো "অসংসদীয়"। এটা কেন্দ্রের এক"অশালীন" আচরণ। তিনি প্রশ্ন তোলেন 28 মে (ভি ডি) সাভারকারের জন্মদিন বলেই কী উদ্বোধনের জন্য কেন্দ্রের এত তাড়াহুড়া?
সিপিআই-এর সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, "সরকারকে অবশ্যই এই সত্যটি স্বীকার করতে হবে যে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান, প্রধানমন্ত্রী নন”। সংসদীয় গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার মূল্যবোধকে যেখানে হত্যা করা হয়েছে সেখানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করার ডাক সঠিক। আপ রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিং জানিয়েছেন, “ রাষ্ট্রপতিকে উক্ত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানো দেশের দলিত, উপজাতি এবং বঞ্চিত অংশের প্রতি কেন্দ্রের এক চরম অপমানের নিদর্শন।
নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক লড়াই তুঙ্গে। কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা হরদীপ সিং পুরি। ন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা হরদীপ সিং পুরি মঙ্গলবার কংগ্রেসকে লক্ষ্য করে বলেছেন যে ‘প্রতিটি ইস্যুতে রাজনীতি করা কংগ্রেসের স্বভাবে পরিণত হয়েছে’।
তিনি আরও বলেন যে ১৯৭৫ সালের আগস্টে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সংসদের অ্যানেক্সি ভবন উদ্বোধন করেছিলেন এবং ১৯৮৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী সংসদ লাইব্রেরি উদ্বোধন করেছিলেন। আপনার (কংগ্রেস) সরকারের প্রধান যদি সংসদের উদ্বোধন করতে পারেন, আমাদের সরকার প্রধান (প্রধানমন্ত্রী মোদী) কেন তা করতে পারবেন না? যদিও পুরীর বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছে এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ।