রবিবার বীরভূমের জেলা তৃণমূলের বৈঠকে জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের ফরমানে স্তম্ভিত সকলে। এদিন তিনি দলের সদস্যদের বিজেপি কর্মীকে গাঁজা কেসে গ্রেফতার করানোর নির্দেশ দেন। এদিন রাতে একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে বৈঠকে এই নির্দেশ দিচ্ছেন অনুব্রত মন্ডল। সূত্রের খবর, মিটিং চলাকালীনই শুট করা হয়েছে ওই ভিডিও।
ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ''ওই মোটা মহিলার নামটা কি যেন, যার কাপড়ের দোকান আছে? বিজেপি করে না? গাঁজা কেসে ওকে গ্রেফতার করিয়ে দিচ্ছি। তোরা সামলাতে পারবি কিনা জানা, নইলে আমি ওকে জেলে ভরে দিচ্ছি''। তিনি দলের বিরুদ্ধে কথা বলতে চাওয়া অনেক কর্মীর ক্ষেত্রেই এটা করছেন বলে দাবি।
''ওই মোটা মহিলার নামটা কি যেন, যার কাপড়ের দোকান আছে? বিজেপি করে না? গাঁজা কেসে ওকে গ্রেফতার করিয়ে দিচ্ছি। তোরা সামলাতে পারবি কিনা জানা নইলে আমি ওকে জেলে ভরে দিচ্ছি'', অনুব্রত pic.twitter.com/Ok8PckCk1T
— IE Bangla (@ieBangla) September 4, 2018
রাজ্যের কৃষি মন্ত্রী আশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি রামপুরহাট কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সাংসদ, এবং জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি রানা সিংহও সেদিন উপস্থিত ছিলেন ওই বৈঠকে। ভিডিও ক্লিপে ওই মহিলা অর্থাৎ সঙ্গীতা চক্রবর্তীকেই নির্দিষ্ট করে মন্তব্য করা হয়েছে। সঙ্গীতা আগে টিএমসির কর্মী থাকলেও বর্তমানে বিজেপির সদস্য। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ''আমি সমাজকর্মী। যেভাবে পার্টি মিটিংয়ে উনি হুমকি দিয়েছেন সেটা দেখার পর আমি জানি না শাসক দল কী ব্যবস্থা নেবে। আমাকেই যদি কেসে ফাঁসানোর কথা বলা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থাটা ভাবুন। ওঁর বিরুদ্ধে আমি আউশগ্রাম থানা এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছি। আমি এই ঘটনাটাকে ওঁর দলের নেতৃত্বের কাছেও নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করব।"
আরও পড়ুন, রাজ্যে বছরভর শব্দদানবের তান্ডব, ব্যবস্থা নেবে কে?
অ্যান্টি নারকোটিকস আইন অনুযায়ী, ১ কেজি গাঁজা পাওয়া গেলে কমপক্ষে ৬ মাসের জেল হয়। তবে এর বেশি হলে সেই সাজা ২০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। জেলা বিজেপি অনুব্রতর গ্রেফতারি দাবি করেছে। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক রাহুল সিনহা বলেন, "ভিডিওটা সরাসরি প্রমাণ করছে টিএমসি কীভাবে পুলিশকে দলের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। ওকে এক্ষুণি গ্রেফতার করা উচিৎ। আমি জানি না উনি গাঁজা খান কিনা তবে কথা শুনে তো তাই মনে হচ্ছে। কোনও রাজনৈতিক নেতার এভাবে কথা বলাটা শোভা পায় না।"
বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "আমরা এটা অনেকদিন ধরেই বলে আসছি, আজকে এই ভিডিওটা প্রমাণ করল কীভাবে পুলিশকে আমাদের আক্রমন করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজ্যের জনগণ এর যোগ্য জবাব দেবে।" অনুব্রত মন্ডলের তরফে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে টিএমসি সাধারণ সম্পাদক পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "ওকে কেন এত সমালোচনা শুনতে হচ্ছে? বিজেপি নেতারা, বিশেষ করে দিলীপ ঘোষ, বার বার বলেছেন আমাদের গরাদের পেছনে নিয়ে যাবেন। এটা কোন রাজনীতির আওতায় পড়ে? যে এটা বলেছে সে ঠিক বলেনি। কিন্তু আমার দিলীপ ঘোষ আর অনুব্রতর মধ্যে পার্থক্য করছি কেন? যদি অনুব্রত দোষী হয়, সমানভাবে দোষী দিলীপ ঘোষও।"
২০১৩-র জুলাইয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূল সমর্থকদের মিটিংয়ে অনুব্রত মন্ডল বলেছিলেন, থানায় বোম মারতে আর তৃণমূল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যাঁরা দাঁড়িয়েছেন তাঁদের বাড়ি জ্বালিয়ে দিতে। ২০১৬ বীরভূমে বিধানসভা নির্বাচনের সময় অনুব্রতর বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য নির্বাচন কমিশন তাঁর ওপর ২৪ ঘন্টা কড়া নজর রেখেছিল।