গৌরী লঙ্কেশ খুনে ধৃত দুই অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নিল সিবিআই। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কুসংস্কার বিরোধী অ্যাক্টিভিস্ট নরেন্দ্র দাভোলকর হত্যা মামলায় ওই দুই অভিযুক্তের যোগসাজশ খতিয়ে দেখতে চায় কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। সিবিআইয়ের একটি দল রাজেশ বাঙ্গেরা ও অমিত ডিগভেকরকে কর্নাটক থেক পুনেতে নিয়ে আসে। শনিবার তাদের স্থানীয় আদালতে পেশ করা হয়।
নালাসাপোরা থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় মহারাষ্ট্র অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড যাদের গ্রেফতার করেছে সেই শরদ কালেকেও নিজেদের হেফাজতে নিতে চলেছে সিবিআই। এ ছাড়া গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত অমোল কালেকেও নিজেদের হেফাজতে নেবে বলে সিবিআই মনস্থ করেছে।
আরও পড়ুন, গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ড: একই ব্যক্তি বন্দুক চালাতে শিখিয়েছিল নরেন্দ্র দাভোলকরের খুনিদেরও
২০১৩ সালের ২০ অগাস্ট ভি আর শিণ্ডে সেতুর ওপর খুন হন নরেন্দ্র দাভোলকর। তাঁর উপর শরদ কালাসকর এবং ঔরঙ্গাবাদের আরেক বাসিন্দা শচীন আনদুরে গুলি চালিয়েছিল বলে সন্দেহ। সিবিআই গত ১৮ অগাস্ট আনদুরেকে গ্রেফতার করে। সিবিআইয়ের বক্তব্য, দাভোলকর হত্যা মামলায় বাঙ্গেরা, ডিগভেকর এবং অমোল কালে যুক্ত রয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা মনে করছে, মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকের পাঁচটি জায়গায় শুটারদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে বাঙ্গেরা।
সিবিআইয়ের আইনজীবী বিজয়কুমার ঢাকানে আদালতে বলেছেন, দাভোলকরের উপর যারা গুলি চালিয়েছিল, সেই আনদুরে এবং কালাসকরকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে, তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল বাঙ্গেরা। সেই বন্দুক দিয়েই অভিযুক্তরা নরেন্দ্র দাভোলকরকে খুন করে। বাঙ্গেরা কর্নাটক সরকারের প্রাক্তন কর্মী, এবং এক সময়ে কর্নাটকের এক কংগ্রেস বিধান পরিষদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবেও কাজ করেছে।
দাভোলকর ও গৌরী লঙ্কেশ হত্যার অন্যতম ষড়যন্ত্রী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে ডিগভেকরকে। দাভোলকরের বাড়িতে অভিযুক্তদের প্রাথমিক নিরীক্ষণের কাজে সাহায্য করেছিল সে, এমনটাই অভিযোগ। সিবিআই আধিকারিকরা বলছেন, দাভোলকরের কাজকর্মের ওপর নজর রাখা, তাঁর গতিবিধি সম্পর্কে অবহিত করা, এসবে লিপ্ত ছিল ডিগভেকর। সিবিআইয়ের আইনজীবী আদালতে বলেছেন, দাভোলকর হত্যার পরে, ২০১৬-র জুন মাসে যে তাওয়াড়েকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তার সঙ্গে যোগ ছিল ডিগভেকরের।
আরও পড়ুন, গৌরী লঙ্কেশ হত্যাতদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য: বুদ্ধিজীবীদের খুন করতে ২২ জনকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ
উল্টোদিকের আইনজীবীর বক্তব্য, সিবিআই তাওয়াড়ের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট দাখিল করেছে তাতে বলা হয়েছে, দাভোলকরকে খুন করেছিল সনাতন সংস্থার কর্মী সারঙ্গ আকোলকর এবং বিনয় পাওয়ার। আইনজীবী সমিত পটবর্ধন জানিয়েছেন, সিবিআই এখন নতুন তত্ত্ব হাজির করছে। তবে আদালত ডিগভেকর এবং বাঙ্গেরাকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এথাডাও আনদুরেকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
সিবিআই জানিয়েছে, আনদুরে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে বলেছে, বাঙ্গেরা তাকে ৭.৬৫ এম এমের একটি দেশি পিস্তল ও তিনটি বুলেট দিয়েছিল। আনদুরে ১১ অগাস্ট সেই পিস্তল, বুলেট ও একটি ম্যাগাজিন তার আত্মীয় শুভম সুরালের হাতে দিয়ে দেয়, জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা।
আনদুরেকে যখন সিবিআই জেরা করছিল, অভিযোগ, সেই সময়ে সুরালে পিস্তল বিলেট এবং ম্যাগাজিন পাচার করে দেয় তার বন্ধু রোহিত রেঘের কাছে। রেঘের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সিবিআই আধিকারিকরা একটি কালো রঙের দেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন এবং তিনটি ৭.৬৫ এম এম তাজা বুলেট উদ্ধার করে।