হিট লিস্টে দু নম্বরে নাম ছিল গৌরী লঙ্কেশের। লিস্টে মোট নামের সংখ্যা ছিল ৩৪। ২০১৬ সালেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল সে তালিকা। গৌরী খুনে অন্যতম সন্দেহভাজন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের এক সদস্যের কাছ থেকে পাওয়া ডায়েরিতে এ তথ্য পেয়েছে বিশেষ তদন্তদল। গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর খুন হন গৌরী লঙ্কেশ।
এই তালিকার এক নম্বরে নাম ছিল বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব গিরিশ কারনাডের। এরকম মোট দুটি তালিকার সন্ধান পেয়েছে তদন্ত দল। তালিকা দুটি অনুসারে যাঁদের টার্গেট করা হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা, এমনটাই সূত্র মারফৎ জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সব রাজ্যের সরকারকেই এ ব্যাপারে সতর্কও করে দেওয়া হয়েছে।
এই ডায়েরিটি উদ্ধার হয়েছে পুনের বাসিন্দা অমোল কালের কাছ থেকে। অমোল কালে হিন্দু জাগরণ সমিতির প্রাক্তন আহ্বায়ক। এই ডায়েরি অনুসারে ২০১৬ সালের অগাস্ট মাসে টার্গেট হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছিল গোরী লঙ্কেশ ও আরও ৩৩ জনকে।
সনাতন সংস্থা ও তার গণসংগঠন হিন্দু জাগরণ সমিতির গোপন ইউনিটের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিল এই অমোল কালে। গত ২১ মে তাকে কর্নাটক দাভাংগেরে এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। লঙ্কেশ হত্যা অপারেশনের মাথা হিসেবে এই অমোল কালেকেই চিহ্নিত করেছে বিশেষ তদন্ত দল।
আরও পড়ুন, Gauri Lankesh: প্রসঙ্গ গৌরী লঙ্কেশ, একটি খোলা চিঠি
তদন্তে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে নিজের লেখালিখিতে উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন গৌরী লঙ্কেশ। সে জন্যই তিনি রোষানলে পড়েছিলেন উগ্র হিন্দুত্ববাদের, এবং তাদের টার্গেট হয়ে গিয়েছিলেন।
অমোল কালের কাছ থেকে আরও যেসব কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তার মধ্যেকার একটি তালিকায় পাওয়া গেছে এক সাধুর নামও। কুসংস্কার বিরোধী ওই সন্তের নাম নিদুমামিদি স্বামীজি।
অমোল কালের কাছ থেকে পাওয়া ডায়েরির ২০১৬-র ২২ অগাস্টের পাতায় আরও ২৬ জনের নাম মিলেছে। দুই তালিকা মিলিয়ে ৩৪ জনের যে নাম পাওয়া গেছে, তাঁরা সবাই উগ্র হিন্দুত্বের বিরোধী। এই ডায়েরিটি ছাপা হয়েছিল ২০১৬-র জুলাই মাসে।
পুলিশ সূত্র জানাচ্ছে, ‘‘ছোট একটি গ্রুপের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনার পর এই তালিকার নামগুলি লেখা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তালিকার নামগুলি পরে অদল বদল করা হত বলেই অনুমান। গৌরীর নাম তালিকার দু নম্বরে থাকলেও তাঁকেই প্রথম টার্গেট করা হয়েছে।
সিটের তদন্ত থেকে জানা গেছে লঙ্কেশকে খুন করার জন্য উত্তর কর্নাটকের বিজয়পুরা এলাকার ২৬ বছরের পরশুরাম ওয়াগমারেকে নিযুক্ত করেছিল অমোল কালে। সনাতন সংস্থা ও হিন্দু জাগরণ সমিতির কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রের উগ্রপন্থী নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে পরশুরামকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেছিল এই অমোল কালে।
সিটের সন্দেহ, গৌরী হত্যার ছক শুরু হয়েছিল ঘটনার আট মাস আগে থেকে। সে সময়েই গৌরীর বাড়ির রেইকি করতে যায় এক সন্দেহভাজন।
বিশেষ তদন্তকারী দল গত ৩১ মে আদালতে লিখিত ভাবে জানিয়েছে, ‘‘২০১৭ সালের জুন মাসে অমোল কালে ওরফে ভাইসাব এবং দাদা (নিখোঁজ সন্দেহভাজন এক ব্যক্তি) বেলগাঁওয়ের স্বীকার হোটেলে মনোহর এডাভে ওরফে মনোজকে ডেকে পাঠায় এবং গৌরী লঙ্কেশের দৈনন্দিন রুটিনের ওপর নজর রাখতে বলে।
গৌরী লঙ্কেশ খুনের দু মাস পরে কন্নড় ভাষার লেখক ও অ্যাকাডেমিশিয়ান অধ্যাপক কে এস ভগবানকে হত্যার চক্রান্ত শুরু করার অভিযোগে অমোল কালে ও আরও চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
আরও পড়ুন, গরু খাওয়া বন্ধ হলেই গণপিটুনি বন্ধ হবে: আর এস এস নেতা
অমোল কালের ডায়েরিতে কে এস ভগবানেরও নাম মিলেছে। এ ছাড়া ওই ডায়েরিতে রয়েছে যোগেশ মাস্টার, চন্দ্রশেখর পাতিল, বনজাগেরে জয়প্রকাশ এবং কর্নাটক ব্যাকওয়ার্ড কাস্টস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সি এস দ্বারকানাথের নামও।
ওই ডায়েরিতে যাঁদের নাম রয়েছে তাঁদের মধ্যে অনেককেই রাজ্যের তরফ থেকে বিশেয নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অমোল কালে, এবং তার আরেক সহযোগী কর্নাটকের হিন্দু জাগরণ সমিতির প্রাক্তন কর্মী সুজিত কুমার আদালতে জানিয়েছে, গোপন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নাশকতামূলক কাজের জন্য কর্নাটকে প্রায় ৩০জন উগ্র হিন্দুত্ববাদী জড়ো হয়েছিল।
এখনও পর্যন্ত গৌরী খুনের ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে বিশেষ তদন্তদল। এদের মধ্যে রয়েছে ওয়াগমারেও, যার বিরুদ্ধে গৌরীকে গুলি করার অভিযোগ রয়েছে। সোমবার হুবলি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ২৭ বছরের গণেশ মিসকিনকে, যার বিরুদ্ধে ওয়াগমারেকে খুনের দিন মোটরসাইকেলে করে গৌরীর বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। হুবলির আরেক বাসিন্দা অমিত বাড্ডিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এই অপারেশনে ব্যবহৃত দুটি গাড়ির মধ্যে একটি চালানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।