হিজাব বিতর্কে নতুন করে আগুন ঢেলেছে গত মঙ্গলবারের একটা দৃশ্য। যে দৃশ্য দেখার পর মুসলিম সম্প্রদায়ের ছাত্রীরা কর্নাটকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পড়ার দাবি জানাতে শুরু করে। ওই ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, বোরখা পরা এক ছাত্রীকে মান্ডার এক কলেজে গেরুয়া শাল পরা জনাকয়েক ছাত্র হেনস্তা করছে। ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে, এক ছাত্রী কলেজ প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি 'আল্লা হু আকবর' ধ্বনি দিচ্ছেন। উলটোদিকে গেরুয়া শাল গায়ে থাকা জনাকয়েক ছাত্র 'জয় শ্রীরাম' স্লোগান দিচ্ছে।
মান্ডার ওই কলেজ থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে কেরলের এদাপল্লির গভর্নমেন্ট হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল। সেখানে ১১-১২ ক্লাসে ইংরেজি পড়ান শিবু কেপি। ভিডিওয় দৃশ্যটি দেখার পর থেকেই রীতিমতো উদ্বিগ্ন ওই শিক্ষক। তিনি জানিয়েছেন, প্রতিবেশী রাজ্যের স্কুল-কলেজে ধর্মীয় উত্তেজনার খবর তাঁর আগেই কানে এসেছিল। এরপর ভিডিওটিও দেখেছেন। অভিজ্ঞতা থেকে ওই শিক্ষকের ধারণা, এই সমস্যা মান্ডার ওই কলেজেই মেটানো যেত। তিনি শিক্ষকরা সেনিয়ে তেমন তত্পরতা দেখাননি। তাতেই কর্নাটকের কলেজগুলোয় উত্তেজনা বেড়েছে।
নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমনই এক অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে ওই শিক্ষকের। সেই সময় তিনি অন্য এক স্কুলে পড়াতেন। সেই স্কুলে এক মুসলিম পড়ুয়া টুপি পরে স্কুলে এসেছিল। সে এক অনাথ আশ্রমে থাকত। আর, কিছুতেই টুপি খুলতে চাইছিল না। তখন আবার শবরীমালার বাত্সরিক তীর্থযাত্রার সময় ছিল। ওই মুসলিম পড়ুয়াদের দেখে কিছু হিন্দু ছাত্রও আবেদন করল তারা শবরীমালার তীর্থযাত্রীদের মতো কালো পোশাকে স্কুলে আসবে। এসব দেখে তখনই ব্যবস্থা নিলেন শিক্ষকরা। তাঁরা উভয়পক্ষের পড়ুয়াদেরই জানিয়ে দেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাম্প্রদায়িক পরিচয় দেখানোর জায়গা না।
আরও পড়ুন- উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়, একে অপরকে বাক্যবাণ, পুতিন-বাইডেন ফোনালাপের পরও অধরা ইউক্রেন সমাধান
আর, তাতেই যাবতীয় ঝামেলা মিটে যায়। ওই পড়ুয়া টুপি খুলতে বাধ্য হয়। হিন্দু ছাত্ররাও শবরীমালা ভক্তদের পোশাকে আর স্কুলে আসেনি। সেকথা মাথায় রেখে কেরলের ওই শিক্ষকের সাফ কথা, 'সংবিধান আমাদের যতটুকু স্বাধীনতা দিয়েছে, সেটুকুই মেনে চলা উচিত। সংবিধানকেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মের প্রকাশ ঘটাতে দেওয়া উচিত না। এটা ভয়ঙ্কর। যদি কেউ বেপরোয়াভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মের প্রকাশ ঘটানোর চেষ্টা করেন, তবে সেটা রোখা উচিত।'
Read story in English