লোকসভা নির্বাচনের পর শুক্রবার মধ্যমগ্রামে ফের প্রশাসনিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে বিভিন্ন প্রকল্পের খতিয়ান দেওয়ার পাশাপাশি জনসংযোগ বৃদ্ধি, জল সংরক্ষণ এবং আরও সুষ্ঠুভাবে জনপরিষেবা প্রদানের বার্তা দেন তিনি। তবে এদিন সরকারের ভাঁড়ারের 'করুণ' অবস্থার কথাও জানিয়ে দেন তিনি। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বলেন, "সরকারের টাকার অবস্থা ভাল নয়। চাইলেই টাকা পাবো, এমনটা নয়। প্রত্যেকটা পয়সা গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। আমরা তো করছি সব। সরকারটা চলবে কোথা থেকে যে দেবে? তোমাদের চাওয়ার আর শেষ নেই"।
আরও পড়ুন: গরু নিঃশ্বাসে অক্সিজেন ত্যাগ করে, বিশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর
মমতার এদিনের এই বার্তায় অবশ্য রাজনীতির সুর শুনছে ওয়াকিবহাল মহল। উল্লেখ্য, আজ ডি.এ. মামলায় স্যাটের রায় সামনে আসার পরই মধ্যমগ্রামে প্রশাসনিক সভায় মমতার এই বার্তা যে কেন্দ্রের উদ্দেশে বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "১২৩ শতাংশ ডিএ রাজ্য সরকার দিয়েছে। এরপর এ বছর ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ শোধ করতে হবে। তারমধ্যে পে কমিশনও আসছে।" এখানেই থেমে থাকেননি মুখ্যমন্ত্রী। বাম জমানাকে তোপ দেগে তিনি বলেন, "আট বছর আগে এক তারিখে মাইনে পাওয়া যেত না। এখন পাওয়া যায়। পেনশন পাওয়া যায়। ২০০৬-০৭ সাল থেকে আগের সরকার ঋণ নিয়েছে। ইরেসপনসিবল কাজ করা ঠিক নয়, যাতে ৩০ বছর পর ফল ভোগ করতে হয়"।
এদিন জলসংরক্ষণ, কৃষকবন্ধু প্রকল্প, স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পগুলির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কত দূর কাজ হয়েছে তা জানতে চান মমতা। ফিরহাদ হাকিম, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়দের পাশে রেখেই বিধায়ক, বিডিও, পুলিশ প্রশাসনকে 'জনগণকে হেনস্থা না করার' কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, "মানুষকে হেনস্থা করা যাবে না, ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নিন। সরকারি নিচু তলার বেশ কিছু জন এরকম করছে। নানা অজুহাতে কাজ ফেলে রাখা যাবে না। প্রত্যক জেলায় মান্থলি মনিটরিং হবে। অনগ্রসর শ্রেণীর ক্ষেত্রে বলছি, জেনুইন কমপ্লেন থাকলে সেক্ষেত্রে তাঁদের লাইসেন্স সাসপেনসন করে দেওয়ার কথা ভাবতে হবে। এটা করতে আমাদের বাধ্য করবেন না”।
আরও পড়ুন: বেতন বাড়তেই অনশন প্রত্যাহার প্রাথমিক শিক্ষকদের
তবে আজ ডিএ বৃদ্ধি নিয়ে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনালের যে রায় তাতে যে বেজায় ক্ষুদ্ধ হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, তা স্পষ্ট হয়েছে তাঁর বক্তব্যে। প্রসঙ্গ উল্লেখ না করেই মমতা বলেন, "সরকার ট্যাক্স বাড়াবে না। বিদ্যুতের দাম বাড়াবে না। জলের দাম বাড়াবে না। বিনা পয়সায় চিকিৎসা করাবে। বিনা পয়সায় শিক্ষা, ২ টাকা কেজি দরে চাল দেবে। এত টাকা কোথা থেকে আসবে? সরকারটা চলবে কোথা থেকে? এরপরেও ডিএ দেওয়ার দাবি"।
এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুসরাত জাহান। এছাড়া উল্লেখযোগ্যভাবে উপস্থিত ছিলেন সব্যসাচী দত্তও। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মার অনুপস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "ভাটপাড়া, ব্যারাকপুরে কেউ কেউ অশান্তি করতে খেলার মতো করে ব্যোম ছুড়ে দেয় ব্যারাকপুর থানায়। তাই মনোজ ভর্মাকে আসতে বারণ করেছি আজ। ব্যারাকপুরের শান্তি ফিরলে তবেই উন্নয়নের কাজ করা যাবে"।