রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতে নয়া মাত্রা যোগ করেছে দিল্লি। রাজ্যপাল রাজ্যে 'সমান্তরাল প্রশাসন' চালাচ্ছে, নিজের সীমা লঙ্ঘন করছেন, কার্যত এই মর্মে শনিবার নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের কাছে 'নালিশ' করেছেন তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এরপরই সোমবার দিন খানিকটা যেন এর প্রত্যুত্তরে তৃণমূল নেত্রী ও তাঁর দলকে প্রতি আক্রমণ শানালেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। এদিন শিলিগুড়িতে জগদীপ ধনকড় সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, "আমি জানি না এ বিষয়ে। তবে সংবাদপত্রে পড়েছি। এটা বলা হয়েছে যে আমি সমান্তরাল সরকার চালাচ্ছি। তাহলে বিমানবন্দর থেকে সার্কিট হাউস অবধি কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই কাটআউট রয়েছে? আমার তো নেই। যদি আমি সমান্তরাল সরকারই চালাতাম তাহলে এ সব প্রশ্নের উত্তর নিতাম। ৫০ দিন হয়ে গেল আমার চিঠির কোনও উত্তর পায়নি। এমনকি রাজ্যপালের জন্য এখনও সময় বের করে উঠতে পারেননি রাজ্যের মুখ্যসচিব।"
রাজ্যপাল এদিন আরও বলেন, "আমি যেখানে গিয়েছি সব জেলাশাসককে জানিয়েছিলাম যে আপনারা এলাকার সব মন্ত্রী, বিধায়কদের জানান যে তাঁদের রাজ্যপাল আসছেন দেখা করতে। কিন্তু উত্তরে যে চিঠি পেয়েছি তা আমায় দুঃখ দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আমরা রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া কাউকে আমন্ত্রণ জানাতে পারি না। এরপরেও আমায় বলবেন আমি সমান্তরাল সরকার চালাচ্ছি?" এরপর জগদীপ ধনকড়ের সাফ জবাব, "আমি আমার কাজ থেকে পিছিয়ে আসব না। ৩০ জুলাই আমি রাজ্যপাল পদে শপথ নিয়েছিলাম। তখন আমি সংবিধানকে রক্ষা করব সবরকম এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সেবায় কর্মরত থাকব বলে অঙ্গিকার করেছিলাম। মানুষের জন্য কাজ করতে গেলে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে আমায় যেতে হবে। এর জন্য কারোর অনুমতির প্রয়োজন নেই আমার। যেখানে মনে হবে সেখানে আমি যাবই। হ্যাঁ এটা ঠিক, কোথাও যেতে হলে রাজ্য সরকারকে জানাতে হয়। আমি রাজ্য সরকারকে জানিয়েই সব জায়গায় গিয়েছি, কারণ সরকার আমার সব ব্যবস্থা করে।"
আরও পড়ুন: খড়্গপুর উপনির্বাচনে নিজের ঘরেই কি লুকিয়ে তৃণমূলের বিপদ?
এদিকে সোমবার রাজ্যপাল বিতর্কে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা সুখেন্দু শেখর রায় বলেন, "রাজ্যপাল যদি রাজনীতি করতে চান, তবে রাজভবনের বাইরে গিয়ে তা করুন। উনি রাজনীতিপাল নন, রাজ্যপাল।" এ প্রসঙ্গে রাজ্যপালের বক্তব্য, সাংসদে কোন সংসদ কী বলেছেন তা নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে পারি না। করবো ও না। তাঁদের সেখানে কথা বলার অধিকার আছে। তবে আমি এখানকার পর্যটক নই। আমি যা শপথ নিয়েছি, সংবিধানের সেই নীতি মেনেই আমি কাজ করে যাব।" অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও এদিন মুখ খোলেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। তিনি বলেন, "আমি মুখ্যমন্ত্রীকে একাধিক চিঠি লিখেছি। একাধিক বিষয়ে চিঠি লিখেছি। তবে কী লিখেছি সেটা আমি জনসমক্ষে অবশ্যই জানাব না। বুলবুল নিয়েও জানতে চেয়েছিলাম। তবে ১০০ দিনের মধ্যে একটা চিঠিও আসেনি মুখ্যমন্ত্রীর তরফে।"
প্রসঙ্গত, রাজ্যের মন্ত্রীরা একাধিকবার রাজ্যপালকে 'পর্যটক' বলেও কটাক্ষ করেছেন। তবে মন্ত্রীদের নিয়ে কিছু বলতে নারাজ রাজ্যপাল। তাঁর আশা 'ওটা মুখ্যমন্ত্রীই দেখবেন'। তিনি বলেন, "আমি শুধু একটা কথাই বলব, আমি রাজ্যে ঘুরতে আসিনি। আমি পর্যটক নই। যে যাই বলুন, আমি যাবই। হেলিকপ্টার না পেলেও যাব। আগেও চেয়েছি পাইনি। না পেলে সড়ক পথেই যাব।" উল্লেখ্য, রাজ্যপাল 'বিজেপির মুখপাত্র' এমন সমালোচনায় বারংবার বিদ্ধ হয়েছেন রাজ্যপাল। এদিন বৈঠক শেষে স্মিত হেসে বলেন, "পরবর্তী অনুষ্ঠান মালদার একটি কলেজে। জেনে রাখুন সেখানে কিন্তু আমি কংগ্রেসের আমন্ত্রণে যাচ্ছি।"