রাজ্য বিধানসভায় দাঁড়িয়েই এবার সরকারের তুমুল সমালোচনায় সরব রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। একনাগাড়ে আক্রমণ শানিয়ে গেলেন রাজ্য প্রশাসনকে। ভোট পরবর্তী হিংসা থেকে শুরু করে ফাইল সই-বিতর্ক। তুলোধনা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারকে। ধনকড়ের রোষ থেকে বাদ যাননি বিধানসভার অধ্যক্ষও। তবে রাজ্যপালের এদিনের মন্তব্য অসৌজন্যমূলক বলে পাল্টা তোপ দেগেছেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বিজেপি পাশে থাকলেও রাজ্যপালের এই মন্তব্যের সমালোচনায় সরব বামেরাও।
ঠিক কী ঘটেছিল এদিন? জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে বিধানসভায় সংবিধান-প্রণেতা বিআর আম্বেদকরকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। সেখানেই বক্তৃতা রাখতে গিয়ে ধনকড় তীব্র ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছেন রাজ্য সরকারকে।
তাঁর কথায়, ''গণতন্ত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোটাররা। তবে পশ্চিমবঙ্গে ভোটারদেরই স্বাধীনতা নেই। নিজের মতে ভোট দিতে গিয়ে এখানে জীবন পর্যন্ত দিতে হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা ভয়াবহ। এখানে আইনের শাসন নেই, শাসকেরই আইন চলছে। সংবিধান মেনে চলেন না এখানকার সরকারি আধিকারিকরা। পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যপাল হিসেবে আমি উদ্বিগ্ন।''
এরই পাশাপাশি বিধানসভার অধ্যক্ষেরও এদিন কড়া সমালোচনা করেছেন রাজ্যপাল। তিনি এদিন বলেন, ''যখন যা মনে হয় তাই বলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ। আমি বেশ কয়েকবার তার কাছে নানা তথ্য জানতে চেয়েও পাইনি। সংবিধান-বিরোধী কাজ করছেন অধ্যক্ষ। রাজ্যপালকে এড়িয়ে যেতে পারেন না অধ্যক্ষ।'' এছাড়াও রাজ্যের মুখ্যসচিব, ডিজিপি-ও রাজ্যপালের প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান বলে এদিন অভিযোগ করেছেন ধনকড়।
এদিকে, বিধানসভায় রাজ্যপালের এমন বক্তব্য অনভিপ্রেত বলে মনে করেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। ধনকড়কে দুষে তিনি এদিন পাল্টা বলেন, '''রাজ্যপালের আচরণ অসৌজন্যমূলক। বিধানসভায় আমি স্পিকার হিসাবে আমার মতো, উনি রাজ্যপাল হিসাবে ওনার মতো কাজ করবেন। হাওড়া বিলে সই না করে আটকে রেখেছেন উনি। বাংলা বোঝেন তিনি, তবু বিল পাঠালেই তরজমা করতে বলেন। বিল আটকে রাখতে চান তিনি। ভোট পরবর্তী হিংসার বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন, তবু তা নিয়ে কথা বলছেন তিনি। এটা বোধ হয় ঠিক নয়। বি আর আম্বেদকরকে শ্রদ্ধা জানাতে এসে উনি যা করলেন তা অসৌজন্যমূলক। উনি কার মুখপাত্র হয়ে একথা বলছেন তা বুঝতে পারছি না।'
আরও পড়ুন- স্কুল পড়ুয়াদের টিকাদানে অনেক পিছিয়ে তিলোত্তমা, চিন্তিত চিকিৎসক মহল
বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীও এদিন রাজ্যপালের মন্তব্যের সমালোচনায় সরব হয়েছেন। সুজন চক্রবর্তী এদিন বলেন, ''রাজ্যপালের আচরণ যথার্থ নয় বলেই আমি মনে করি। সংবিধান প্রণেতাকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে উনি অর্ধসত্য রাজনীতির কথা বলছেন। বাংলায় গণতন্ত্র নেই সত্যি কথা বলেছেন, কিন্তু গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নেই ত্রিপুরাতেও। সেটা বলছেন না। গোটা দেশের খণ্ডিত গণতন্ত্রের কথা উনি বলছেন না। উনি যা বলেছেন তা ব্যক্তি জগদীপ ধনকড়ের কথা, কিন্তু রাজ্যপাল হিসেবে এই কথা বললে ওঁকে তা মানায় না।'
অন্যদিকে, বিজেপি কিন্তু রাজ্যপালের পাশেই রয়েছে। রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এদিন বলেন, ''পশ্চিমবঙ্গে যা চলছে তাতে গণতন্ত্র নেই। আমরা প্রত্যেকদিন বলছি। উনি সেটাই বলেছেন। এতে আপত্তির কিছু নেই।''