মেহুল চোকসি থেকে জাকির নায়েক- বিদেশে পলাতকদের ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। মোট ২৭০ জনেরও বেশি ভারতীয়র বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারি করা আছে। এর মধ্যে ৩০-এরও ওপর বেশি জনের বিরুদ্ধে বড় আকারের তহবিল তছরূপ বা ব্যাংক জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। অতি সম্প্রতি ইন্টারপোল মেহুল চোকসির (বাম দিকে) বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিশ প্রত্যাহার করেছে। আর, জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারির আবেদন তিনবার প্রত্যাখ্যান করেছে ইন্টারপোল।
এর মধ্যে ইন্টারপোল পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক (পিএনবি) ঋণ জালিয়াতি মামলার অভিযুক্ত মেহুল চোকসির বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিশ প্রত্যাহার করেছে। মঙ্গলবার বিরোধীরা বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে এনিয়ে আক্রমণ করে। বিদেশে পলাতক ভারতীয়দের ব্যাপারে কেন্দ্র উদাসীন বলেও অভিযোগ করেছে। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গ বলেছেন, যখন কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে, তখন প্রধানমন্ত্রীর 'মেহুল ভাই' বিনামূল্যে পাস পাচ্ছেন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও বিষয়টি নিয়ে সরকারকে কটাক্ষ করেছেন।
মেহুল চোকসি
১৩,৫০০ কোটি টাকার পিএনবি ঋণ জালিয়াতির মূল অভিযুক্ত। সিবিআই তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার কয়েক দিন আগে ২০১৮ সালের জানুয়ারি ভারত থেকে পালিয়ে যায়। এর কয়েক মাস আগে মেহুল চোকসি ক্যারিবীয় অঞ্চলের অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডার নাগরিকত্ব নিয়েছিল।
চোকসিকে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারতের প্রচেষ্টা সবচেয়ে নাটকীয় ছিল। সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) অনুরোধের ভিত্তিতে ইন্টারপোল চোকসির বিরুদ্ধে একটি রেড কর্নার নোটিশ জারি করে। পরে চোকসিকে ফিরিয়ে আনার জন্য অ্যান্টিগুয়ায় প্রত্যর্পণের অনুরোধও পাঠানো হয়েছিল। এটি সেখানকার আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায়, চোকসিকে অপহরণ করা হয়েছিল এবং ২০২১ সালের মে মাসে তাকে ডোমিনিকাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যেখানে স্থানীয় মিডিয়া তার আগমন সম্পর্কে রিপোর্ট করা শুরুর পরে স্থানীয় প্রশাসন 'অবৈধ প্রবেশের' জন্য চোকসিকে গ্রেফতার করে।
পরবর্তীকালে, সিবিআই এবং বিদেশ মন্ত্রকের আধিকারিকদের একটি প্রাইভেট জেট তাকে ভারতে ফিরিয়ে আনতে ডমিনিকা পৌঁছেছিল। তবে চোকসির বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলাটি আদালতে যাওয়ায় জেটটিকে ফিরে আসতে হয়।
চোকসির আইনি দল তার জন্য জামিন নিশ্চিত করতে এবং তাকে অ্যান্টিগায় ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল। শুধু তাই নয়, চোকসির আইনজীবীরা তাঁদের মক্কেলকে অপহরণ করে ডোমিনিকা নিয়ে গিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার অভিযোগ তুলেছিল ভারত সরকারের বিরুদ্ধে। তাদের অভিযোগ ছিল, ভারত সরকার এজেন্টদের মাধ্যমে ওই অপহরণ ঘটিয়েছে। পরে অবশ্য ডোমিনিকা চোকসির বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে।
ভারতের জন্য একটি বড় ধাক্কা, ইন্টারপোল চোকসির বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিশ সরিয়ে নেওয়ার সময় বলেছিল যে তার অপহরণের 'বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ' রয়েছে। আর, ভারতে তার ন্যায্য বিচার না পাওয়ার 'সম্ভাবনা' রয়েছে। এই পরিস্থিতি উন্নয়ন এখন চোকসিকে ভারতে নিয়ে আসার চেষ্টাকে জটিল করে তুলেছে।
আরও পড়ুন- মোদী বিরোধী পোস্টার কাণ্ডে সরগরম দিল্লির রাজনীতি, প্রধানমন্ত্রীকেই কাঠগড়ায় তুলে কী বলল আপ?
জাকির নায়েক
ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) ইসলাম ধর্মপ্রচারক জাকির নায়েক এবং তার সংগঠন ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন (আইআরএফ)-এর বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনে (ইউএপিএ) কঠোর বিধানের অধীনে মামলা করেছে। এমনকী, সরকার ২০১৬ সালে আসামিদের নাম প্রকাশ করে আইআরএফকে নিষিদ্ধ করেছিল। ঢাকা ক্যাফে হামলায় ২২ জন নিহত হয়েছিলেন। এই হামলার সঙ্গে যুক্তরা নায়েকের বক্তৃতায় অনুপ্রাণিত হয়েছিল বলে অভিযোগ।
নায়েক এই সময়ে ভারত থেকে পালিয়ে যায় এবং ২০১৭ সালে মালয়েশিয়ায় আশ্রয় চেয়ে আবেদন জানায়। ভারত যখন মালয়েশিয়া থেকে তার প্রত্যর্পণের চেষ্টা চালায়, ইন্টারপোল তার বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিশ জারি করার জন্য ভারতের অনুরোধ তিনবার প্রত্যাখ্যান করে। শেষবার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে ২০২১ সালে। এনআইএ দাবি করেছিল যে, জাকির নায়েকের বক্তৃতার সময় অনুদান চাওয়া এবং ধর্ম প্রচার এক ফৌজদারি অপরাধ। ইন্টারপোল এনআইএর এই সব অভিযোগ মানতে চায়নি।