হালিশহর পুরসভা নিয়ে জোর দড়ি টানাটানি শুরু হল তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে। দু’দিন আগেই তৃণমূল ছেড়ে সদ্য বিজেপিতে যাওয়া হালিশহর পুরসভার ৮ জন কাউন্সিলরকে ‘ঘর ওয়াপসি’ করান মমতার নেতৃত্ব। তারপরই হালিশহর পুরসভা পুনর্দখলের দাবি জানিয়ে বিজেপিকে জোর টক্কর দেয় তৃণমূল। শাসকদলের এই চালে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন একদা তৃণমূলের ‘২ নম্বর’ তথা বর্তমান বিজেপি নেতা মুকুল রায়। বুধবার মুকুল রায় জানিয়ে দিলেন, ‘‘হালিশহরে শীঘ্রই অনাস্থা আনা হবে, বিজেপির দখলেই থাকবে হালিশহর’’। অন্যদিকে, হালিশহরের পাশাপাশি কাঁচরাপাড়া পুরসভারও কয়েকজন কাউন্সিলর ফের তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন বলে জোর জল্পনা ছড়ায় বঙ্গ রাজনীতিতে। এ প্রসঙ্গে মুকুলের দাবি, ‘‘কাঁচরাপাড়া সুরক্ষিতই রয়েছে’’।
কী বলেছেন মুকুল রায়?
হালিশহর পুরসভা তৃণমূলের ‘পুনর্দখল’-এর দাবি প্রসঙ্গে মুকুল বলেন, ‘‘শীঘ্রই দেখতে পাবেন হালিশহর পুরসভা বিজেপির দখলে থাকবে। শীঘ্রই অংশুমানের (চেয়ারম্যান) বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হবে। অংশুমান অ্যাডভান্টেজ নিচ্ছে। ও নিজের পাড়ায় দাঁড়িয়ে জিতবে না’’। এরপরই নাম না করে তৃণমূলকে কটাক্ষের সুরে মুকুল বলেন, ‘‘গুন্ডা-বদমায়েশ নিয়ে দল করিনা। অচিরেই দেখতে পারবেন কাঁচরাপাড়া, হালিশহরের মানুষ ওদের বিপক্ষে রায় দেবেন’’। তৃণমূল কাউন্সিলরদের ভয় দেখিয়ে, জোর করে বিজেপিতে যোগদান করার অভিযোগ করেছেন ফিরহাদ হাকিম। সে প্রসঙ্গে এদিন মুকুলের স্পষ্ট জবাব, ‘‘কাউকে ভয় দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়নি। কেউ বাচ্চা ছেলে নয়, যে ভয় দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে’’।
আরও পড়ুন: মুকুল-অর্জুনকে কিস্তিমাত, হালিশহর পুনরুদ্ধার তৃণমূলের
ঠিক কী ঘটেছে হালিশহর পুরসভায়?
গত ২৮ মে মুকুল-পুত্র তথা বীজপুরের তৃণমূল বিধায়ক দিল্লিতে বিজেপিতে যোগ দেন। বীজপুরের বিধায়কের বিজেপিতে যোগদানের সঙ্গেই কার্যত ‘নজিরবিহীন’ ভাবে একঝাঁক কাউন্সিলর পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নেন। যাঁদের মধ্যে ছিলেন হালিশহর পুরসভার বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর। সেদিনই বিজেপি নেতা মুকুল রায় দাবি করেন, ‘‘হালিশহর পুরসভা বিজেপির দখলে’’। এরপর গত পরশু হঠাৎই সাংবাদিক বৈঠক করে পুরমন্ত্রী তথা তৃণমূলের শীর্ষ নেতা ফিরহাদ হাকিম জানান, ‘‘হালিশহরের পুরপ্রধান-সহ ৮ জন কাউন্সিলর ফের তৃণমূলে ফিরলেন’’। পাশাপাশি ফিরহাদ দাবি করেন, হালিশহর ‘পুনরুদ্ধার’ করল তৃণমূল।
আরও পড়ুন: ‘স্বামীর কথায় নুসরত কি বিজেপিতে যাচ্ছেন?’
ফিরহাদের এই ঘোষণার পরই হালিশহর পুরসভা নিয়ে শাসক-বিরোধী টানাপোড়েন নয়া মোড় নেয়। বুধবার ১২ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে হালিশহর পুরসভায় বোর্ড মিটিং করেন চেয়ারম্যান অংশুমান রায়। তিনি বলেন, ‘‘মৌখিক ভাবে প্রচার করা হয়েছিল এই বোর্ড বিজেপির। কিন্তু শেষ বোর্ড মিটিংয়ের সময়ও পুরবোর্ড আমাদের দখলে ছিল, এখনও তাই। এই বোর্ড বিজেপির কখনই হয়নি’’। উল্লেখ্য, হালিশহর পুরসভায় মোট আসন সংখ্যা ২৩, ম্যাজিক ফিগার ১২। বুধবার চেয়ারম্যানের ঘরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সরানো হয়েছিল, সেই ছবি এদিন ফের ফিরিয়ে আনা হয়। অন্যদিকে, বুধবার হালিশহর পুরসভায় আসেন মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু রায়। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপিরই থাকবে পুরসভা। অর্জুন দা( অর্জুন সিং) ফিরলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে’’। সবমিলিয়ে লোকসভা ভোট পরবর্তী বাংলায় দলবদল নিয়ে শাসক-বিরোধী টানাপোড়েন কোন দিকে মোড় নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে বঙ্গ রাজনীতি।