ট্রেলারটা যদি হয় দলিত নেতা জিগনেশ মেওয়ানিকে গুজরাত থেকে গ্রেফতার করে অসমে তুলে নিয়ে যাওয়া। তবে, হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার আর অসম বিজেপি কী করতে পারে, সেই সিনেমা পরিষ্কার করে দিয়েছে মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক পালাবদল। যাতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে গিয়েছে অসমের নাম, বিশেষ করে হিমন্ত বিশ্বশর্মার। উদ্ধব ঠাকরেদের অভিযোগ, বিশ্বশর্মা সরকারের মদতেই বিদ্রোহী শিণ্ডে গোষ্ঠীর বিধায়কদের অসমের হোটেলে বিশেষ আপ্যায়নের সঙ্গে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকেই মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে পালাবদলের ছক এগিয়ে গিয়েছে।
আর, এই সব কারণেই হিমন্ত বিশ্বশর্মা নামটা ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ইতিমধ্যে রীতিমতো আতঙ্কের হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেন সরকারকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বারবার। সেখানেও শাসকপক্ষ কংগ্রেস এবং ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা এই চেষ্টার অভিযোগে বারবার দুষেছে হিমন্ত বিশ্বশর্মাকেই। কলকাতায় তিন কংগ্রেস বিধায়ক গাড়িভর্তি টাকা নিয়ে ধরা পড়েছিল, তাতেও নাম উঠেছে হিমন্তের।
এবার সেই হিমন্তকেই শোনা গেল দিল্লি নিয়ে মন্তব্য করতে। দিল্লিতেও বিরোধী দল আম আদমি পার্টির সরকার। মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল বারবার অভিযোগ করছেন, তাঁর সরকারকে ফেলে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে। বিধায়কদের কিনে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। বিজেপি বারবার সেই অভিযোগ অস্বীকার করলেও, কেজরিওয়াল এবং আপের একই অভিযোগ তোলায় বিরাম নেই। সেই ঘটনাতেও কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ উঠে এসেছে হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিরুদ্ধে।
আতঙ্কিত কেজরিওয়াল শুক্রবার তাই আগেভাগেই আক্রমণ করে বসেন হিমন্তকে। তবে, সরকার ফেলার চেষ্টা নিয়ে নয়। দিল্লি সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে কতটা উন্নতি করেছে, তা বোঝাতে কেজরিওয়াল অভিযোগ করেন, খারাপ ফলাফলের জন্য অসম সরকার কিছু স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। সেই বিতর্ক শান্ত করার বদলে চরমে তুলে দিয়েছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তিনি বলেছেন, 'বিজেপি ক্ষমতায় থাকলে দিল্লির চেহারাটাই বদলে যেত।'
আর, যায় কোথায়! যথারীতি আশঙ্কায় কেজরিওয়াল সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক বাধিয়ে বসেছেন হিমন্তের সঙ্গে। হিমন্ত টুইট করেছেন, 'আপনার কি মনে আছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালজি যে দিল্লিকে লন্ডন এবং প্যারিসের মতো করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আপনি ক্ষমতায় এসেছিলেন? যেহেতু আপনি কিছুই করতে পারছেন না, তাই আপনি অসম এবং উত্তর-পূর্বের ছোট রাজ্যগুলোর সঙ্গে দিল্লির তুলনা শুরু করেছেন। বিশ্বাস করুন, বিজেপি যদি দিল্লির মতো রাজ্য পায়, একেই বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ শহর করে তুলবে।'
পালটা নিজস্ব ভঙ্গীতে কেজরিওয়াল হিমন্তকে বিঁধে টুইট করেছেন, 'আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দেননি। আমি কখন আপনার সরকারি স্কুল পরিদর্শনে যাব? স্কুলগুলোর অবস্থা ভালো না-হলে ঠিক আছে। আমরা তাদের উন্নতির জন্য একসঙ্গে কাজ করব।' এর আগে কেজরিওয়াল শুক্রবার টুইট করেছিলেন, 'অসমের ৩৪টি হাইস্কুল পরীক্ষায় ছাত্রদের পারফরম্যান্স ভালো না-হওয়ার জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয় বন্ধ করা কোনও সমাধান নয়। আমাদের শুধু সারা দেশে অনেক নতুন স্কুল খুলতে হবে। স্কুল বন্ধ করার পরিবর্তে, স্কুলের উন্নতি করুন এবং শিক্ষার মান বাড়ান।'
আরও পড়ুন- পাকিস্তানে ডুবে গিয়েছে শেহবাজ-ইমরানদের ঘরবাড়ি, এই বিপদ কি আমাদেরও আসতে চলেছে?
পালটা কেজরিওয়ালকে অজ্ঞ বলে কটাক্ষ করে হিমন্ত বিশ্বশর্মা টুইট করেছেন, 'প্রিয় অরবিন্দ কেজরিওয়ালজি, আপনার অজ্ঞতা বেদনাদায়ক। আমাকে জানাতে দিন। আপনার দিল্লির থেকে অসম রাজ্য ৫০ গুণ বড়! আমাদের ৪৪,৫২১টি সরকারি স্কুলে ৬৫ লক্ষ পড়ুয়া। আপনার স্কুলের সংখ্যা ১,০০০-এর কিছু বেশি। আমাদের শিক্ষকের সংখ্যা দুই লক্ষের বেশি। মিড ডে মিল কর্মীর সংখ্যা ১.১৮ লক্ষ, বুঝলেন?'
হিমন্ত আরও লিখেছেন, 'তার মধ্যেই আমরা বন্যার প্রকোপ মোকাবিলা করি। জঙ্গিদের মোকাবিলা করি। পাহাড়ের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করি। তারপরও উচ্চমানের শিক্ষা দিই। আপনি যদি দয়া করে এখানে আসেন, পার্বত্য জেলাগুলোয় দুটো রাত কাটান। চ্যালেঞ্জ রইল, আপনার সব বক্তৃতা বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ, এখানে ১৪টি উপজাতীয় ভাষা-সহ ছ'টি ভাষার মাধ্যমে লেখাপড়া শেখানো হয়। আমার ইচ্ছা, আপনাকে আমাদের মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাব। আপনার মহল্লা ক্লিনিকের থেকে হাজার গুণ ভালো। এছাড়াও আমাদের সরকারি স্কুলশিক্ষক আর ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করুন, তবে বাস্তবটা বুঝবেন। ভারতকে ১ নম্বর আসনে তুলে ধরার চিন্তা বন্ধ করুন। মোদিজি ইতিমধ্যেই তা করছেন।'
Read full story in English