এনআরসির তালিকা প্রকাশের পর অসমের বিভিন্ন জায়গায় প্রতীক হাজেলা এবং এনআরসির লোগো জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিল আসাম হিন্দু যুব ছাত্র পরিষদ। পাশাপাশি রাজ্যের প্রত্যেক জেলায় এনআরসি থেকে বাদ যাওয়া হিন্দু পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে সংস্থাটি। এবার সংস্থার সদস্যরা সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, এনআরসিতে শেষ পর্যন্ত নাম না উঠলেও কোনও হিন্দুকে রাষ্ট্রহীন করা যাবে না। তারা সরাসরি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে এব্যাপারে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন।
সোমবার অসমের মাজুলী জেলায় খ্রিস্টান মিশনারীদের ধর্মান্তরন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় সংস্থাটি। এর ফাঁকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন সংস্থার সভাপতি বলেন, তিনি বলেন, 'প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা খরচ করে একটি অসম্পূর্ণ এনআরসির তালিকা তৈরি করেছেন প্রতীক হাজেলা। মূলত হিন্দুদের বাদ দেওয়ার একটি বিরাট চক্রান্ত করেছেন তারা এবং এতে সরকারপক্ষের অনেকেই সহায়তা করেছেন। আমরা এতকিছু বুঝিনা এবং বুঝতে চাইওনা, ভারতবর্ষ হিন্দুদের রাষ্ট্র, এখানে কোনও হিন্দু বিদেশী হতে পারে না। আমরা এতদিন অপেক্ষা করেছি এবং বারবার তাদের কাছে বলেছি, এনআরসি প্রক্রিয়া শুদ্ধভাবে করা হোক। অথচ শেষমেষ একটি অসমাপ্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে এবং আমরা দেখতে পাচ্ছি ১৯ লক্ষ লোকের নাম দেওয়া হয়েছে যার অধিকাংশই হিন্দু। আমরা হিন্দুত্ববাদী সংগঠন এবং আমাদের শাখা অসমের প্রায় প্রত্যেক এলাকায় রয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন হিন্দু ভাবাপন্ন সংগঠন সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করছে। ৩১ আগস্ট তালিকা প্রকাশের পর এনআরসি থেকে যারা বাদ পড়েছেন তাদের সঙ্গে যখন আমরা দেখা করলাম তখন জানতে পারলাম, ১৯৫২, ১৯৫৪ বা ১৯৬০ সালের নথি থাকার পরও এনআরসির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে হিন্দু পরিবারদের। অনেক ক্ষেত্রে মা-বাবার নাম রয়েছে অথচ সন্তানের নাম তালিকায় ওঠানো হয়নি। অথচ সম্প্রতি আমরা দেখেছি বরাক উপত্যকার হাইলাকান্দি জেলায় এক মুসলমান পরিবার ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ভিসায় ভারতে এসে তাদের নাম এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে।'
আরও পড়ুন: কাশ্মীর নিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্ত হোক, রাষ্ট্রসংঘে দাবি পাকিস্তানের
তিনি আরও বলেন, 'খবরে শোনা যাচ্ছে তার পরিবারের আরেক সদস্য বর্তমানে বাংলাদেশের নাগরিক অথচ ভারতবর্ষে তার ভোটার কার্ড ইত্যাদি রয়েছে। এভাবেই লক্ষ লক্ষ অবৈধ মুসলমান অনুপ্রবেশকারী এনআরসিতে নাম অন্তর্ভুক্ত করাতে সমর্থ হয়েছে আর প্রতীক হাজেলা হিন্দুদের নাম বাদ দিয়েছেন। আমরা প্রতীক হাজেলাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছি, সাহস থাকলে ১৯ লক্ষ্যের তালিকায় থাকা প্রত্যেক ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ্যে আনুন। আমি দাবি রেখে বলতে পারি প্রায় ১৪ থেকে ১৫ লক্ষ হিন্দু এই তালিকায় রয়েছেন। তবে শুধুমাত্র প্রতীক হাজেলাকে এর জন্য দায়ী করছি না আমরা, এই ব্যর্থতার সমান দায় রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারেরও। ৩১ আগস্ট যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে এর মাধ্যমে একজন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকেও ভারত থেকে বের করে দেওয়া সম্ভব হবেনা বলে মনে করি আমরা।'
অসম হিন্দু যুব ছাত্র পরিষদের সভাপতির সংযোজন, 'কেন্দ্রে এবং অসম রাজ্যে নির্বাচনের বারবার আগে হিন্দুদের সুরক্ষা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। আমরা তাদের কথায় বিশ্বাস করেছি এবং কিছুটা হলেও ঠকেছি। এবার আর মুখ ফিরিয়ে থাকার সময় নয়, এবার আমরা সরাসরি বলবো, একজন হিন্দুকেও ভারতীয় নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। আপনারা এনআরসি করুন বা যা খুশি করুন, ভারতবর্ষ হিন্দুর দেশ, এখানে একজন হিন্দুও বিদেশী হতে পারে না। ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভাগ হয়েছে, তাই ১৯৪৮ সাল থেকে যেসব মুসলমান ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছে তারা প্রত্যেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী।'
হিন্দু ভাবাবেগকে সামনে রেখে অসম রাজ্যে কয়েক দশক ধরে চলে আসা অসমিয়া ও বাঙালি ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে হিন্দু যুব ছাত্র সংগঠন। তাদের অভিমত, ভাষা মানুষের পরিচয় হতে পারে না। কারন যদি এটা হতো, তাহলে বাংলাদেশ থেকে বাঙালী হিন্দুদের এভাবে বিতাড়িত হয়ে ভারতে আসতে হতোনা। ভাষা আমাদের জাতিগত পরিচয় হতে পারেনা, এটি আমাদের ভাব বিনিময়ের মাধ্যম মাত্র। আমাদের আসল পরিচয় হচ্ছে ধর্ম। এবার সময় এসেছে এই কথাটি জোর গলায় বলার। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রত্যেক ভাষাভাষীর যদি নিজেকে আলাদা করে ভাবতে শুরু করেন, তাহলে আমরা অনেকগুলো ছোট ছোট রাষ্ট্রে পরিণত হবো। অখিল গগৈ মত লোকেরা ভাষাকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইছে। তারা বিভিন্ন উত্তর-পূর্ব ভারতে বসবাসকারী বিভিন্ন ভাষাভাষির লোকেদের মধ্যে অশান্তির পরিবেশ তৈরি করছে। এদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে জেলে পুরে দেওয়া উচিত, এতে বিভেদকামী শক্তিগুলো প্রতিহত হবে। আমরা হিন্দু রাষ্ট্রে বসবাস করি, আমাদের সব থেকে বড় পরিচয় আমরা হিন্দু, এই পরিচয়কে নিয়েই এখন আমাদের চলার সময় এসেছে। এতেই আমাদের সংস্কৃতি বাঁচবে, নাহলে ভবিষ্যতে আমাদের অসম থেকেও তাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং অন্য কোথাও আমাদের আশ্রয় খুঁজতে হবে।