আপাতত ফের মহারাষ্ট্রের মসনদে বিজেপি। মিলেছে এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের ভাইপো তথা এনসিপি নেতা অজিতের সমর্থন। অজিত-পদ্মের এই গোপন আঁতাতের 'সুবাস' কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি। তবে জানা যাচ্ছে, এই দৌত্যের নেপথ্যে রয়েছেন স্বয়ং বিজেপির 'কৌটিল্য' তথা সভাপতি অমিত শাহ। মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে নজরদারির জন্য প্রথম থেকেই তিনি মাঠে নামিয়েছিলেন দলে তাঁরর বিশ্বস্ত সৈনিক ভূপেন্দ্র যাদবকে। ফলাফলের পর তাঁকে সামনে রেখেই কৌশলে ঘর গুছিয়েছেন শাহ। আর এর পরিনামেই শনিবার সকালের মহারাষ্ট্রের মহা নাটক।
Advertisment
২৪ অক্টোবর মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশ পায়। বিজেপি একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা না পেতেই সুর চড়ায় শিবসেনা। ক্ষমতার বণ্টনে ৫০-৫০ সূত্রের কথা বলে আড়াই বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রীত্বের দাবি করে বসে সেনা শিবির। কিন্তু, প্রথম থেকেই এই দাবিতে নারাজ বিজেপি। তাদের নানা প্রস্তাবেও গলেনি সেনার মন। দফায় দফায় শিবসেনা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা থেকে জোটে ভাঙন- সমগ্র পর্বে শাহ ছিলেন স্পিকটি নট'। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথামিক পর্বে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে তেমন মাথা ঘামাননি শাহ। তবে, মোড় ঘোরে বিরোধী জোটের সরকার গঠনের তোড়জোড়ে। মুখের গ্রাস বেরিয়া যাচ্ছে দেখেই তিনি মাঠে নামিয়ে দেন ভূপেন্দ্র যাদবকে। কৌশল রচনা করেছেন তিনিই, আর তা রূপায়নের দায়িত্বে থেকেছেন যাদব।
রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি প্রথমে বিজেপি-কে ডেকেছিলেন সরকার গঠনের জন্য। শিবসেনার সমর্থনের জন্য দরজা খোলা রেখেছিল পদ্ম পার্টি। কিন্ত, অনড় ছিল উদ্ধবের দল। কথাবার্তার মাধ্যমে বুঝিয়ে সেনা শিবিরের সমর্থন আদায়ে মাতশ্রীতে যেতেও রাজি ছিলেন না রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি জানিয়ে দেয়, তারা সরকার গঠনের প্রয়োজনীয় বিধায়ক জোগাড় করতে পারেনি। ফলে সরকার গঠন করতে পারছে না। এরপর শিবসেনা ও এনসিপি-কে ডাকলেও সে সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় তারা। এই মোড়েই সুচতুর চালে বিরোধীদের কুপোকাতের চেষ্টা শুরু করেন সেনাপতি শাহ।
Advertisment
এ সময় রাজ্যপালের সুপারিশে মহারাষ্ট্রে জারি হয় রাষ্ট্রপতি শাসন। সেই সময় বিজেপি নজরে রাখছিল বিরোধীদের কার্যকলাপ। পদ্ম শিবির মনে করেছিল, কংগ্রেস এনসিপি ও শিবসেনার আদর্শগত পার্থক্য রয়েছে। ফলে, তাদের জোট স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হওয়া অসম্ভব। তবে বিজেপির সেই ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে এগোতে থাকে জোটের আলোচনা। শুক্রবারই দেখা যায় বিরোধী জোটের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। শনিবার কংগ্রেস এনসিপির বৈঠকের পরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হওয়ার কথা ছিল জোটের।
মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশের সঙ্গে উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার।
এই মোক্ষম সময়েই ফের সক্রিয় হন বিজেপি সভাপতি। দলের সাধারণ সম্পাদক ভূপেন্দ্র যাদবকে ওই দিনই শেষ বিকেলে মুম্বইতে পাঠান অমিত শাহ। যাদবই গোপন কৌশলের কথা বলেন দেবেন্দ্র ফড়নবীশকে। জোট নিয়ে অজিত পাওয়ারকে কিছুটা মনক্ষুন্ন দেখে তাঁকেই টার্গেট করা হয় প্রথম। রাতের মধ্যেই চূড়ান্ত হয়ে যায় অজিত পাওয়ারের সমর্থনের সিদ্ধান্ত। জোটের নেতারা সরকার গড়া নিয়ে যখন প্রকাশ্যে উৎফুল্ল, তখন মুখ বন্ধ করে সব শুনে মার দেওয়ার জন্য কেবল শেষ রাতের অপেক্ষা করেছে 'ওস্তাদ' বিজেপি। প্রকাশ্যে বেশি কথা না বললেও, দলের ছোট থেকে বড় নেতৃত্ব রাজ্যে সরকার গড়ার বিষয়ে একযোগে জানিয়েছেন, 'ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ এখনও রয়েছে।'
শুক্রবারের রাত শেষ হতেই মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে মহা নাটক চাক্ষুস করে দেশবাসী। অজিত পাওয়ারের সমর্থনে সাত সকালেই রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন দেবেন্দ্র ফড়নবীশ। উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত। এরপর রাজনৈতিক মহলে নানা চর্চা। ভাইপোর এই কীর্তিতে তাজ্জব বনে যান স্বয়ং শরদ পাওয়ার। কংগ্রেও কিছু বুঝে উঠতে পারেনি। হাত শিবিরের অনেকেই এখন মনে করতে পারছেন, জোটের বৈঠকে বেশ কয়েকবার মাঝপথ থেকে প্রায় 'হারিয়ে' গিয়েছিলেন অজিত পাওয়ার। দিল্লিতে সোনিয়া-শরদ বৈঠকের আগের দিনও ছিলেন না তিনি। শাহের সঙ্গে গোপন আঁতাতের জন্যই কি তাঁর এই অনুপস্থিতি? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
কথায় বলে, রাজনীতি সম্ভাবনার শিল্প। সেই প্রবাদই যেন বাস্তবে করে দেখাচ্ছে মারাঠা মসনদের লড়াই। তবে, ক্ষমতা দখলের জন্য মহা নাটকীয়ভাবে যা করল বিজেপি তা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারা যায় কি না, সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।