বছর গড়ালেই দুয়ারে লোকসভা ভোট। উত্তাপ চড়তে শুরু করেছে। জোট গড়ে ঘর গুছানোর কাজ শুরু করেছে বিজেপি ও কংগ্রেস। এনডিএ জোটে আসন সমঝোতা নিয়ে তেমন মাথা ব্যথা না থাকলেও ইন্ডিয়া শিবিরে টানাপোড়েন রয়েছে। একে অপরকে টেক্কা দিতে সদ্য প্রচারে নামতে মরিয়া এনডিও ও ইন্ডিয়া জোট। শাসক, বিরোধী জোটের শক্তি নিয়ে তুল্যমূল্য আলোচনা তুঙ্গে, কিন্তু প্রচারের জন্য চাই অর্থশক্তিও। এক্ষেত্রে কোন শিবিরের ক্ষমতা কেমন? রইল তারই হদিশ…
প্রচারে বাজিমাত করতে কংগ্রেস 'দেশের জন্য দান' উদ্যোগ নিয়েছে। যা ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে, চলবে দলের জন্মদিন ২৮ তারিখ পর্যন্ত। বিজেপি বা এনডিএ জোটের কোনও শরিক দলের ক্ষেত্রে অর্থ সংগ্রহে এমন ক্রাউড ফান্ডিংয়ের উদ্যোগ এখনও ঘোষণা করা হয়নি।
আসনের নিরিখে ২০১৯ সালের ভোটে এনডিএ-এর বড় শরিক বিজেপি বাকি সব শরিক তো বটেই, বিরোধী কংগ্রেস সহ অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দলগুলোর থেকে কয়েক যোজন এগিয়ে। আর্থিক দিক থেকেও একই অবস্থা। শক্তির নমিরিখে তো বটেই, আর্থিক বিচারেও ইন্ডিয়া জোটের কাছে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই বড় চ্যালেঞ্জ। ২০১৮-১৯ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত দুই শিবিরের আর্থিক বিষয়গুলো অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস দ্বারা প্রকাশিত।
ইন্ডিয়া জোটে এখনও ২৬টি শরিক দল রয়েছে। যাদের মধ্যে মাত্র ১৬টি শরিক অর্থিক ও স্থাবর সম্মত্তি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে আর্থিক নথি পেশ করেছে। এনডিএ শিবিরে রয়েছে ৩৪টি শরিক। এই শিবিরেরও মাত্র ১৬টি রাজনৈতিক দল সাম্প্রতিক বছরগুলিতে নিজেদের আর্থিক তহবিলের পরিসংখ্যান কমিশনের কাছে জমা করেছে। চতি বছরের জুলাইয়ে ইন্ডিয়া জোট গঠিত হয়। এই বিশ্লেষণে শিবসেনা এবং এনসিপি-র তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, কারণ এই ঘোষণার পরে এই দুই দলেই বিভক্তি লক্ষ্য করা গিয়েছে।
এনডিও ও ইন্ডিয়া জোটের বার্ষিক আয়-
বার্ষিক আয়ের পরিপ্রেক্ষিতে, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০ এবং ২০২১-২২ আর্থিক বছরে নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলির ঘোষণা অনুসারে এগিয়ে রয়েছে এনডিএ জোট। শুধু, ২০২০-২১ আর্থিক বছরে ইন্ডিয়া জোট এনডিএ-কে টেক্কা দিয়েছে।
২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ সালে, এনডিএ জোটের দলগুলোর আয়ের সঙ্গে ইন্ডিয়া শিবিরের তেমন কোন তুলনাই হয় না। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুসারে ২০২১-২২ আর্থিক বছরে এনডিএ-এর বার্ষিক আয় ইন্ডিয়া জোটের থেকে প্রায় 156 কোটি টাকা বেশি ছিল।
২০১৮-১৯ সালে, ইন্ডিয়া জোটের আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশই ছিল কংগ্রেসের। ২০২১-২২ সালে সর্বশেষ আয়ের ঘোষণা অনুযায়ী এই পরিসংখ্যান ৩০ শতাংশ বা ৫৪১.৩ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ২০২১-২২ সালে, আয়ের দিক থেকে অন্যান্য প্রধান দলগুলি হল তৃণমূল কংগ্রেস (৫৪৫.৭ কোটি টাকা), ডিএমকে (৩০১৮.৭ কোটি টাকা), সিপিআইএম (১৬২.২ কোটি টাকা), জেডি-ইউ (৮৬.৬ কোটি টাকা), সমাজবাদী পার্টি (৬১ কোটি টাকা) এবং আম আদমি পার্টি (৪৪.৫ কোটি টাকা)।
আরও পড়ুন- ‘চিন্তাভাবনা করেই সিদ্ধান্ত’…! হিজাব ইস্যুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উল্টো সুর, বিপাকে কংগ্রেস
অপর দিকে, ২০১৮-২২ অর্থ বর্ষে এনডিএ-তে বিজেপির সম্মিলিত বার্ষিক আয়ের পরিমাণ প্রায় ৯৭.৫ থেকে ৯৯.৫ শতাংশের মধ্যে ছিল। ২০২১-২২ সালে, বিজেপির শরিকদের মধ্যে আয়ের নিরিখে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল জননায়ক জনতা পার্টি (৪.৫ কোটি টাকা) এবং নতুন বন্ধু জেডি-এস (২.২ কোটি টাকা)।
সম্পদের নিরিখে এনডিও বনাম ইন্ডিয়া
২০১৮-১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ আর্থিক বছরে এনডিএ-এর সম্পদইন্ডিয়া জোটের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর নিরিখে দ্রুত এবং অনেকটাই বেড়েছে।
২০১৮-১৯ সালে, ইন্ডিয়া জোটের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণের সঙ্গে এনডিএ-র খুব বড় ফারাক ছিল না । তারপর থেকেই পার্থক্যটা নজরকাড়া। এনডিএ হেলায় ইন্ডিয়া জোটকে ছাপিয়ে গিয়েছে। ২০১৮-১৯ ছেতে ২০২১-২২ আর্থিক বছরের মধ্যে এনডিএ তার সম্পদ দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি করেছে। এই সময়কালে ইন্ডিয়া জোটের সম্পদ ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কংগ্রেসের আয় ছিল ২০১৮-১৯ সালে ৩৬.৯ (৯২৮.৮ কোটি টাকা)। যা ২০২১-২২-এ কমেছে প্রায় ২৫.৪ শতাংশ (৮০৫.৫ কোটি টাকা)। ২০২১-২২ সালে, অন্যান্য শিরিক দলের আয় ছিল সিপিআই(এম) (৭৩৫.৮ কোটি টাকা), সমাজবাদি পার্টি (৫৬৮.৪কোটি টাকা), তৃণমূল (৪৫৮.১ কোটি টাকা), ডিএমকে (৩৯৯.১ কোটি টাকা) এবং জেডি-ইউ (১৬৮.৯ কোটি টাকা)।
সম্পদের পরিপ্রেক্ষিতেও, ২০১৮-১৯ থেকে ২০২১-২২-এর মধ্যে এনডিএ-র মধ্যে বিজেপির দখলে ছিল প্রায় ৯৮ শতাংশ। ২০২১-২২ সালে, এনডিএ শরিকদের আয় ছিল, জেডি(এস) (১৩.৩ কোটি টাকা), জেজেপি (১০.৮ কোটি টাকা) এবং নাগাল্যান্ড-ভিত্তিক ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (৭.৪ কোটি টাকা)।