'নারদাঘুষকাণ্ড থেকে মুক্ত হয়ে আগে নিজের সততার প্রমাণ দিন। ৬ মাস দলে আসা নেতার থেকে বিজেপি করা শিখব না। বিজেপির বি টিমের অধীনে কাজ করব না।' এক মাস আগে সরাসরি বোমা ফাটিয়ে দলের মধ্যেই গুঞ্জন বাড়িয়েছিলেন হাওড়া সদরের তৎকালীন বিজেপি সভাপতি সুরজিৎ সাহা। পরে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ২৯ বছরের কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করে গেরুয়া শিবির। সেই প্রাক্তন বিজেপি পদ্ম নেতাই এবার ঘাস-ফুলে যোগ দিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার শরৎ সদনে রাজ্যের শাসক দলের এক অনুষ্ঠানে তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নেবেন বিজেপি বহিষ্কৃত নেতা সুরজিৎ সাহা। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে নিজেই তৃণমূলে যোগদানের কথা জানিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, আগামিকাল তাঁর সঙ্গেই তৃণমূলে নাম লেখাবেন বিজেপির হাওড়া জেলার প্রায় ৫০ জন নেতা ও দু'হাজার কর্মী।
পুরনো দল মুখ ফেরানোর কয়েকদিন পর সুরজিৎ সাহা নাকি তৃণমূলের যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করে লিখিত আবেদন জানিয়েছিলেন। শাসক শিবিরের তরফে এই দাবি করা হয়েছে। এরপর ওই আবেদন দলনেত্রী ও হাওড়ার তৃণমূল জেলা সভাপতির কাছে পাঠানো হয়। তাতেই সম্প্রতি সম্মতি মিলেছে। আবেদনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন সুরজিতবাবু। তাঁর কথায়, 'আমার রাজনৈতিক কর্মী। তাই মন দিনে সেটাই করি। কিন্তু বিজেপি দলত্যাগীদের নিয়ে দল ভরাল ও তাঁদেরই প্রাধান্য দিল। ফলও হাতেনাতে পেল। তারই প্রতিবাদ করেছি বলে শাস্তি। এবার তাই তৃণমূলে হয়েই মানুষের সেবা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
সুরজিতের দলের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় বলেছেন, 'একমাত্র তৃণমূলই বাংলার প্রকৃত উন্নয়ন করতে পারে, সুরজিৎ এটা উপলব্ধি করেছেন।'
শুভেন্দুর বিরুদ্ধে কী বলেছিলেন সুরজিৎ?
পুরভোটকে কেন্দ্র করে গত নভেম্বরের শুরুতে দেলা নেতৃত্বকে নিয়ে দলের সাংগঠনিক বৈঠক করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখানেই বিধানসভা ভোটের বিজেপির শোচনীয় পরাজয়ের ময়না তদন্ত করতে গিয়ে শুভেন্দু দলেরই একাংশকে দায়ী করেন। তাঁর অন্যতম নিশানায় ছিলেন হাওড়া সদরের বিজেপি সভাপতি সুরজিৎ সাহা। বিরোধী দলনেতার অভিযোগ ছিল, সুরজিতের সঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী তথা হাওড়ার তৃণমূল নেতা অরূপ রায়ের যোগাযোগ ছিল।
এরপরই শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরখ অভিযোগ করেন তৎকালীন হাওড়া সদরের বিজেপি সভাপতি সুরজিৎ সাহা। তিনি বলেছিলেন, 'কে প্রকৃত বিজেপি কর্মী তার সার্টিফিকেট শুভেন্দু অধিকারীর থেকে নেব না। নারদাঘুষকাণ্ড থেকে মুক্ত হয়ে আগে নিজের সততার প্রমাণ দিন। ৬ মাস দলে আসা নেতার থেকে বিজেপিকরা শিখব না। বিজেপির বি টিমের অধীনে কাজ করব না।'
এরপরই সুরজিৎকে বিজেপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। পুরনো দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও মুখ খোলেন তিনি। বলেছিলেন, 'আমি যা বলেছি তার থেকে অনেক বেশি কড়া কথা তথাগত রায়, সৌমিত্র খাঁ বলেছেন। কোথায় তাঁদের তো সাসপেন্ড করা হল না। এখন দল বুঝছে না, শুভেন্দুর মতো নেতারা যখন দল ছেড়ে যাবেন, তখন বিজেপি আমাদের কথার গুরুত্ব বুধতে পারবেন।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন